রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচক ৪৪ বছর বয়সী নেতা নাভলনিকে গত বছর অগাস্টে রাসায়নিক বিষ দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষক্রিয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে গিয়েছিলেন নাভালনি।
জার্মানির একটি হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন এবং গত ১৭ জানুয়ারি দেশে ফেরেন। এরপর বিমানবন্দরেই গ্রেপ্তার হন নাভালনি।
অর্থ আত্মসাৎ মামলায় স্থগিত দণ্ডের প্যারোলের শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে পরদিন মস্কোর একটি আদালত তাকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেয়। তারপরই সমর্থকদের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানান এই নেতা।
গত শনিবার নাভালনির মুক্তির দাবিতে রাশিয়ার প্রায় ১শ’টি নগরীতে তার হাজার হাজার সমর্থক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওই দিন নাভালনির স্ত্রীসহ তিন হাজার পাঁচশ’রও বেশি প্রতিবাদকারীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছিল, রাজধানী মস্কোর কেন্দ্রস্থলে অন্তত ৪০ হাজার লোক সমাগম হয়েছিল। গত এক দশকে মস্কোয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া এত বড় জনসমাবেশ আর হয়নি।
সেখানে পুলিশ যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই ধরে ভ্যানে তুলে নিয়ে গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়া জানিয়েছেন, সমাবেশ থেকে তাকে আটক করা হয়েছিল, পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রতিবাদের আগের দিনই নাভালনির কিছু রাজনৈতিক মিত্রকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল; অন্যান্যদের বিক্ষোভ চলাকালে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও পরদিন পুতিনের এক মুখপাত্র বলেন, ‘খুব অল্প মানুষ’ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।
রাশিয়ায় বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর সরকারের এই দমন-পীড়ন এবং নাভলনিসহ তার প্রায় সাড়ে তিন হাজার সমর্থককে আটকের ঘটনায় দেশটির উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিষেধাজ্ঞা আরোপের তোড়জোড় করছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সোমবার ইইউভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক করার কথা রয়েছে। বিবিসি জানায়, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ‘এই গ্রেপ্তারের পেছনে যেসব রুশ কর্মকর্তাদের হাত আছে তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি’ জানিয়েছেন।
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আনজে দুদা ইইউ’র কাছে নাভালনিকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের অনুরোধ করেছেন।
মস্কোয় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে নিজেদের নাগরিকদের জন্য সতর্কবার্তা জারি করে ‘বিক্ষোভ এড়িয়ে চলতে বলা হয়’।
যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের এই সতর্কবার্তা ভালভাবে নেয়নি রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ এর সমালোচনা করে বলেন, এ ধরনের বার্তা ‘আমাদের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের নামান্তর’।
জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে বলা হয়, ওই বার্তা তাদের ‘সাধারণ এবং নিয়মিত কাজের অংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন থেকেও রুশ কর্তৃপক্ষকে আটক বিক্ষোভকারীদের ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, দেশটির বিরোধী মতের বিরুদ্ধে সরকারের ‘দমন নীতিও’ নিন্দা জানান তারা।
ওদিকে, যুক্তরাজ্যে অবস্থিত রাশিয়ার দূতাবাস থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে নিজেদের দূতাবাস ব্যবহার করে বিক্ষোভে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ বলেন, পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা আসলে ‘পশ্চিমা ছদ্ম-গণতন্ত্র এবং ছদ্ম-উদারপন্থার’ সেই অতি পশ্চিমা চিন্তাভাবনার খুব গভীর সংকট।
নাভালনির সমর্থকদের আটকের ঘটনার সমালোচনা করে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটা ‘স্বৈরাচারবাদের দিকে অগ্রসর হওয়া’। তিনিও রাশিয়ার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান।