সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুন্যালের প্রসিকিউটর রানা দাশ গুপ্ত ও একুশে পদক প্রাপ্ত কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
সংবাদ স্মম্মেলন থেকে আগামী ২৯ জানুয়ারি বিকালে নগরীতে আনন্দ শোভাযাত্রা করারও ঘোষণা দেন রানা দাশগুপ্ত।
ভারতীয় কংগ্রেসের নেতা যাত্রামোহন সেনগুপ্ত রহমতগঞ্জে ১৯ গণ্ডা জমির উপর এই বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। চট্টগ্রামের এই আইনজীবীর ছেলে হলেন দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত।
ওই জমি পরে ‘শত্রু সম্পত্তি’ ঘোষিত হয়। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে শামসুদ্দিন মো. ইছহাক নামে এক ব্যক্তি জমিটি ইজারা নিয়ে সেখানে ‘শিশুবাগ’ নামে একটি স্কুল চালিয়ে আসছিলেন।
এর মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি এম ফরিদ চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি ওই জমি যাত্রামোহনের এক স্বজনের কাছ থেকে কেনার দাবি করে আদালতের একটি আদেশ নিয়ে বাড়িটি ভাঙতে যান।
সে সময় স্থানীয়দের নিয়ে তার এই তৎপরতা ঠেকিয়ে দেন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত। ওই দিন বাকলিয়া অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) বাড়িটিতে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এরপর একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ওই বাড়ি ভাঙায় এক মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়। জেলা প্রশাসনের আবেদনে সাড়া দিয়ে চট্টগ্রামের আদালতও বাড়ি ভাঙায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
রানা দাশ গুপ্ত ও আবুল মোমেনের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিক আলীউর রহমান বলেন, মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে এ চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের মাধ্যমে স্বাদীনতা ঘোষণা করেছিল, যা বৃটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এ অনন্য দৃষ্টান্ত।
তারও আগে এ জনপদে আন্দোলনরত শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়ে বৃটিশ সরকারের অন্যায় ও দুঃশাসনের মোকাবেলা করেছিলেন বরমা গ্রামের কৃতি সন্তান ব্যারিস্টার দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেন গুপ্ত।
চট্টগ্রামকে বহু কৃতি মানুষের জন্মস্থান ও স্মৃতিধন্য পূণ্যভূমি উল্লেখ করে বিট্র্রিশ বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন কৃতি ব্যক্তি ও স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের স্মৃতি সংরক্ষণ জরুরি বলে উল্লেখ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
“দুর্ভাগ্যের বিষয় পাকিস্তান আমলে বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম ও কৃতি ব্যক্তিদের কোন স্মৃতিরক্ষা হয়নি, যথাযথ সম্মানও তারা পাননি। আবার মুক্তিযুদ্ধে বন্দরনগরীর বিশিষ্ট ভূমিকা সত্ত্বেও সে স্মৃতি সংরক্ষণেও ব্যবস্থা হয়নি।”
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, সচেতনতার অভাব এবং এক শ্রেণির মানুষের চরম লোভের শিকার হয়ে এসব সম্পদ বেদখল রয়েছে, লূণ্ঠিত হয়েছে এবং ধ্বংস হচ্ছে। এরকম দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি হতে যাচ্ছিল দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন ও নেলী সেন গুপ্তের বাসভবনটি।
বাড়ির দখল ঠেকাতে গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রশংসা করা হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকেও ধন্যবাদ দেয়া হয়।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘর প্রতিষ্ঠার একটা পর্যায়। নেলী সেনগুপ্তের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের একটা বায়োগ্রাফী তৈরি করা হবে। ইতোমধ্যে সে কাজ শুরু হয়েছে।
পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর করতে যা যা করা দরকার সেগুলো করা হবে বলে জানান তিনি।
রানা দাশ গুপ্ত, আবুল মোমেন ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জিনবোধী ভিক্ষু, হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের রসায়ন বিভাগের শিকক্ষক ইদ্রিস আলী, উন্নয়নকর্মী শরীফ চৌহান, আবৃত্তি শিল্পী রাশেদ হাসান।