ক্যাটাগরি

১৪ এপ্রিলের মধ্যে এলপিজির দাম নির্ধারণ: আদালতে জানাল বিইআরসি

সেই লক্ষ্যে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী গত ১৪ জানুয়ারি দিনব্যাপী গণশুনানিও করেছে দেশের জ্বালানি খাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

সোমবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো.কামরুল হোসেন মোল্লার ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চে এ তথ্য প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরা হয়।

বিইআরসির আইনজীবী এ এম মাসুম ও আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন ওই প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন। এছাড়া বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল মতিন খসরু শুনানি করেন।

এরপর আদালত বিইআরসি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলকে আদালত অবমাননার রুল থেকে অব্যাহতি দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে দেয়।

নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা ও এলপিজির দাম নির্ধারণে গণশুনানি করায় চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে পরে আইনজীবীরা জানান।

আইনজীবী সৈয়দ মাহসিব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ৩৪(৪) ধারা অনুযায়ী এলপিজি গ্যাসের মূল্যহার পুনঃনির্ধারণের জন্য গত ৫ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেয় বিইআরসি। পরে গত ১৪ জানুয়ারি ইস্কাটনের বিয়াম ফাউন্ডেশনের মিলণায়তনে গণশুনানি হয়।

“বিষয়টি প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানানো হলে আদালত বিইআরসির চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার রুল থেকে অব্যাহতি দিয়ে রুলটি নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।”

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন না দেওয়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মো. আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে গত বছর ২৯ নভেম্বর আদালত অবমাননার রুল জারি করে হাই কোর্ট।

আদালতের আদেশ প্রতিপালন না করায় কেন তার বিরুদ্ধে অদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয় তাকে।

সে নির্দেশ অনুযায়ী গত বছর ১৫ ডিসেম্বর আইনজীবীর মাধ্যমে রুলের জবাব দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান। সেই সাথে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে আদালত অবমাননার রুল থেকে অব্যাহতি চান তিনি।

এরপর এ বিষয়ে সর্বশেষ প্রতিবেদন দেখে সোমবার আদেশ দিল উচ্চ আদালত।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ২২(খ) এবং ৩৪ ধারা অনুযায়ী এলপিজি, গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং তেলসহ সকল প্রকার জ্বালানির দাম নির্ধারণের আইনগত দায়িত্ব কমিশনের। বিশ্ব বাজার ও দেশীয় চাহিদার ভিত্তিতে গণ শুনানির মাধ্যমে বিইআরসি মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে থাকে।

সর্বশেষ ২০০৯ সালে সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৭০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বিইআরসি। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারের এই গ্যাসের দাম কয়েক দফা কমলেও দেশে গণশুনানি করে দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়নি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে সিলিন্ডারের দাম পুনঃনির্ধারণের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালের ৩১ জুলাই বিইআরসিতে আবেদন করে ভোক্তা অধিকার সংস্থা (ক্যাব) । ওই আবেদনটি নিষ্পত্তি না করে ঝুলিয়ে রাখে বিইআরসি।

পরে আন্তর্জাতিক বাজারে সকল প্রকার জ্বালানির দাম কমলেও দেশে এলপিজির দাম পুনঃনির্ধারণ না করায় তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে রিট আবেদন করে ক্যাব । ওই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর হাই কোর্ট রুল জারি করে।

এলপিজির দাম ঠিক না হওয়ায় আদালতের উষ্মা
 

আদালত অবমাননা: নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা বিইআরসি চেয়ারম্যানের

এলপিজি সিলিন্ডার: বিইআরসি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল

এলপিজি (সিলিন্ডার) গ্যাসের দাম পুনঃনির্ধারণ না করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। তখন আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে বিইআরসি চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলেছিল।

এরপর গত প্রায় চার বছর বিভিন্ন সময় আদালত আদেশ দিলেও এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণের ব্যপারে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বিইআরসি।

সর্বশেষ ক্যাবের আবেদনে গত বছর ২৫ আগস্ট হাই কোর্ট বিইআরসির চেয়ারম্যানকে ৩০ দিনের মধ্যে গণশুনানি করে এলপিজি সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করতে নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

কিন্তু বিইআরসি দাম নির্ধারণ না করেই গত বছর ১৭ নভেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দেয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা ট্যারিফ প্রবিধিমালা- ২০১২,পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ মজুতকরণ, বিপণন ও বিতরণ ট্যারিফ প্রবিধিমালা-২০১২ এবং পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ পরিবহন ট্যারিফ প্রবিধিমালা-২০১২ নামে তিনিটি প্রবিধানমালার খসড়া অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে (বিপিসি) পাঠানো হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৪ মে খসড়াগুলো পাঠানো হলেও কমিশন সে অনুমোদন পায়নি। এছাড়া দাম নির্ধারণের জন্য কমিশন ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।

গত ১৫ অক্টোবর ওই কমিটি এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন, ক্যাব, গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিময় করে দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে চারটি পদ্ধতি নির্ধারণ করেছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কমিশন কোনোভাবেই দাম নির্ধারণ করতে পারে না।

এরপর আদালত ক্যাবের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিইআরসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করে।

ক্যাবের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার ভাষ্য, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন-২০০৩ এর ২২(খ) এবং ৩৪ ধারা অনুযায়ী কমিশনই মূল্য নির্ধারণ করতে পারে। সে ক্ষমতা থাকার পরও কমিশন এখন পর্যন্ত তা করেনি।