বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবিবুল্লাহ সিরাজী সোমবার বিকালে
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “আমরা প্রকাশকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি,
আগামী ১৮ মার্চ অমর একুশে গ্রন্থমেলা উদ্বোধন হবে। বইমেলা প্রকাশ্যেই হচ্ছে।
“তবে সেদিন কখন উদ্বোধন হবে বা এক মাসব্যাপী এই বইমেলা
চলবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত করিনি। পরবর্তীতে তা জানানো হবে।”
প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির
প্রথম দিন একুশে বইমেলা শুরু হলেও এবার মহামারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বইমেলার আয়োজন স্থগিত রাখার জন্য ডিসেম্বরে
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ।
পরে ভার্চুয়ালি
বইমেলা করার প্রস্তাব এলেও বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি তাতে আপত্তি জানিয়ে বলে,
খোলা আকাশের নিচে, বিশাল জায়গাজুড়ে যেভাবে প্রতিবছর হয়ে আসছে, এবারও তারা সেভাবেই
একুশে বইমেলায় অংশ নিতে চান।
সৃজনশীল বইয়ের প্রকাশকদের ব্যবসার সবচেয়ে বড় মৌসুমই হল
অমর একুশে গ্রন্থমেলা। সেই মেলা আয়োজন না হলে বড় ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েন তারা।
দুই পক্ষের সঙ্গে
আলোচনা করে সংস্কৃতি
প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ গত ১৭ জানুয়ারি জানান, বিলম্বিত হলেও বইমেলা সরাসরিই হবে।
সেজন্য ২০ ফেব্রুয়ারি, ৭ মার্চ অথবা ১৭ মার্চ থেকে বইমেলা শুরু করতে
প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব পাঠানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ
বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই গ্রন্থমেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান
ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ১৮ মার্চ মেলা শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতি সচিব বদরুল আরেফিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোমবার বিকালে অফিস টাইমের পর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে চিঠি এসেছে। আগামী ১৮ মার্চ থেকে বইমেলা করা যাবে। “
বাংলাদেশ
জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“যদিও মেলা কত দিনের তা চূড়ান্ত হয়নি, তবে আমরা প্রাথমিকভাবে ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ
পর্যন্ত বইমেলা চালিয়ে যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। করোনাভাইরাস মহামারীর প্রেক্ষাপটে
স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে বইমেলা হবে, তার নীতিমালা চূড়ান্ত করতে হবে আমাদের।”
বইমেলায় স্টল পেতে আগ্রহী প্রকাশকরা ইতোমধ্যে আবেদন জমা
দিয়েছেন বাংলা একাডেমিতে। স্টল বরাদ্দের জন্য টাকা জমাদানের তারিখ নির্ধারণের পরই জানা
যাবে এবার বইমেলায় কতজন প্রকাশক অংশ নেবেন।
বইমেলায় বিপুল জনসমাগম সামলাতে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী
উদ্যানের বিন্যাস নতুন করে সাজাতে হবে বলেও মন্তব্য করেন ফরিদ আহমেদ।
“আমাদের সবকিছুর আগে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রাখতেই হবে।
মেলার বিন্যাস নিয়ে শিগগিরই বৈঠক করব আমরা।”
১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা
একাডেমির গেইটে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিক চিত্তরঞ্জন
সাহা। ১৯৭৭ সালে তার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেন।
১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী
বাংলা একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ
পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি।
১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে
থাকার সময় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা আর
করা যায়নি। পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা’র সূচনা
হয়।
মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি
প্রাঙ্গণের এই বইমেলা এখন বাঙালির মননের মেলায় পরিণত হয়েছে।
প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলার পর্দা উঠলেও ঢাকার দুই সিটি
করপোরেশনে ভোট থাকায় গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়।
ততদিনে চীন ছাড়িয়ে করোনাভাইরাস অন্যান্য দেশে পৌঁছাতে শুরু
করলেও বাংলাদেশে এর প্রকোপ দেখা দেয়নি। ফলে ফেব্রুয়ারির শেষে নির্বিঘ্নেই মেলার সমাপ্তি
ঘটে।
বাংলা একাডেমির তথ্য অনুযায়ী, গতবছর মেলায় নতুন বই আসে
৪ হাজার ৯১৯টি। সব মিলিয়ে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়।
মহামারীর কারণে গতবছর মুজিববর্ষের বিপুল আয়োজন কমিয়ে ফেলতে
হয়েছে। প্রায় সব ধরনের উৎসব আয়োজনেই বিধিনিষেধের সীমা টেনে দেওয়া হয়েছে অতি ছেঁয়াচে
এই ভাইরাসের কারণে।
আরও পড়ুন
২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৭ মার্চের মধ্যে বইমেলা শুরুর ভাবনা
ফেব্রুয়ারিতে হচ্ছে না বইমেলা: বাংলা একাডেমি