ক্যাটাগরি

ছাত্রদের শরবত খাওয়ালেন, শিক্ষকদের নিয়ে কিছুই বললেন না খুলনার উপাচার্য

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ
প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে অনশন ভাঙালেন উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান, তবে একই
ঘটনায় চাকরিচ্যুত করা শিক্ষকদের বিষয়ে কিছু বললেন না তিনি।

গত বছরের শুরুর দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেতন-ফি
কমানো, আবাসন সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন শিক্ষার্থীরা। সে সময় শিক্ষকদের
সঙ্গে ‘অসদাচরণ’ এবং একাডেমিক কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস
ও বাংলা বিভাগের ছাত্র ইমামুল ইসলাম সোহান ও মোবারক হোসেন নোমানকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়
প্রশাসন।

ওই সময় শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোয় আন্দোলনে ‘উসকানি’
দেওয়ার অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবুল ফজলকে বরখাস্ত
এবং একই বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম ও ইতিহাসের প্রভাষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরীকে অপসারণ
করা হয়েছে।

আন্দোলনের জন্য ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এভাবে শাস্তিমূলক
ব্যবস্থা নেওয়ায় কয়েক দিন ধরে ব্যাপক চলছে।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবিতে ১৮ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের
প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অনশন করছিলেন দুই শিক্ষার্থী।

অপরদিকে তিন শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের
দাবিও উঠে আসছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সোমবারই এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে এই শিক্ষকদের
বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের
সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

সেখানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছিলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করার জন্য এই তিন
শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে, যাতে আর কেউ কোনো প্রশ্ন বা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে না
পারে।”

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার দাবি
 

শিক্ষকদের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে গণতদন্ত
কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে কী হচ্ছে, তার উপর তদন্ত করে প্রতিবেদন জনগণের সামনে
প্রকাশ করার হুমকি দেন তিনি।

এই প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালমনাই
অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যস্থতায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা গত বছরের ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ
করে উপাচার্য বরাবর চিঠি লেখেন।

তারপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সহকর্মীদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের
অনশনস্থলে আসেন উপাচার্য মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।

শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে
তিনি বলেন, “আমরা শিক্ষকতা করি, ছাত্ররাই আমাদের জীবনের অংশ।… আমরা কিন্তু মা-বাবাও
বটে। আমি বার বার যে কথাটি সেদিন বলেছিলাম, যে সন্তানরা অনেক ভুল করে অনেক সময়, শুধু
একটা কথা বলে স্যরি; বা মা-বাবাকে শুধু বলে, বাবা ভুল হয়ে গেছে। তাদের তো আমরা ফেলে
দিই না।

“আজকে তারা একটা চিঠি দিয়েছে। সেই চিঠিটা আমি যথাসময়ে
পেয়েছি। আমি শুধু তাদেরকে বলছি যে, এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে খুব স্বল্পতম সময়ের মধ্যে
আমি শৃঙ্খলা কমিটির সভা ডাকব। এই বিষয়টা যাতে সুবিবেচনার সঙ্গে দেখা হয় সেজন্য উপাচার্য
হিসেবে এটা আমার আন্তরিক প্রয়াস থাকবে এবং তাদের শিক্ষাজীবনে যাতে পরবর্তীকালে কোনো
বড় ধরনের ক্ষতি না হয় আমি সেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।”

এরপর শরবত খাইয়ে দুই শিক্ষার্থীর অনশন ভাঙান উপাচার্য।

এসময় একজন সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, একই ঘটনায় তিন
শিক্ষকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের বিষয়ে কী হবে?

জবাবে উপাচার্য বলেন, “আমি যে ইস্যুতে কথা বলছি দয়া
করে সেই ইস্যুর মধ্যে থাকলে আমি খুশি হব।”

এই বলে শিক্ষকদের বিষয়ে আর একটি কথাও বলেননি তিনি।

শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার অনুরোধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে
যাতে অস্থিরতার অবসান ঘটে, সেজন্য সহযোগিতা চেয়েছেন উপাচার্য।

তিনি বলেন, “তাদেরকে অনুরোধ জানাচ্ছি, তারা যেন তাদের
অনশন ভঙ্গ করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় যে একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে তাদের জন্যে তারা
সেই জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করবে।”