কামরুলের ঘটনায় দোষ স্বীকার করে দুদক আদালতকে
বলছে, এটা তাদের ‘সরল বিশ্বাসের’ ভুল।
১৯৯৮ সালের এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে কলেজে
ভর্তি হয়েছিলেন এক যুবক। এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালের মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি
দমন ব্যুরো।
তার ১০ বছর পর ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর এ
মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়, তখন ব্যুরো বিলুপ্ত হয়ে দুদক প্রতিষ্ঠিত। তার পরের
বছরই মামলার রায় হয়।
রায়ে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে দণ্ডবিধির তিনটি
ধারায় ৫ বছর করে ১৫ বছরের সাজা দেয় বিচারিক আদালত। সেই সাথে ১০ হাজার টাকা করে মোট
৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
এ রায়ের পর পুলিশি তৎপরতা টের পেয়ে মোহাম্মদ
কামরুল ইসলাম বিচারিক আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
হাই কোর্ট তার প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল
জারি করে। সে রুলের জবাবে দুদক বলছে, এটা তদন্তকারী কর্মকর্তার ‘সরল বিশ্বাসের ভুল’।
গত সোমবার সেই রুলের উপর শুনানি শেষে
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ
বৃহস্পতিবার রায়ের জন্য রেখেছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী
মিনহাজুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “গ্রামের
নামে ভুলের যে বিষয়টা এসেছে, এটা আমাদের বোনাফাইড মিসটেক।
“আমরা তার (মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের)
রিটের সাথে একমত। তাকে কিন্তু একদিনও জেল খাটতে হয়নি। আমরা চাই না, কোনো নিরাপরাধ
ব্যক্তি জেল খাটুক।”
দুদক ‘সরল বিশ্বাসের ভুল’র কথা বললেও রিট
আবেদনকারীর আইনজীবী মামলাটির তদন্ত ও তদন্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ
প্রকাশ করেছেন।
মিনহাজুল সাংবাদিকদের বলেন, “এই মামলার
তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। এসব তদন্তকারী কর্মকর্তারা মামলাটির
আদৌ তদন্ত করেছেন কি না বা তদন্ত করে থাকলেও কতটুকু সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করেছেন, তা
নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।”
জাহালমকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে ব্র্যাক ব্যাংককে নির্দেশ
মামলা
বৃত্তান্ত
২০০৩ সালের সালের জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন
ব্যুরোর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রসিকিউটিং পরিদর্শক মো. শহীদুল আলম একটি এজাহার দায়ের
করেন।
সেখানে বলা হয়, নোয়াখালী সদর থানার পূর্ব
রাজারামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে
৫৭৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাসের জাল/ভুয়া মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র
সৃজন/সংগ্রহ করে ১৯৮৯-৯৯ সেশনে মাইজদী পাবলিক কলেজে ভর্তি হন।
মামলাটির তদন্ত করেন দুর্নীতি দমন কমিশন
নোয়াখালীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মাহফুজ ইকবাল। ২০১৩ সালের ২৮
নভেম্বর মামলাটির অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
বিচার শেষে নোয়াখালীর বিশেষ জজ শিরীন
কবিতা আখতার ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন। রায়ে কামরুল ইসলামকে দণ্ডবিধির ৪৬৭,
৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় ৫ বছর করে মোট ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা করে মোট
৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন বিচারক।
রায়ে বলা হয়, ‘সকল কারাদণ্ড একত্রে চলিবে’
অর্থাৎ আসামিকে জেল খাটতে হবে ৫ বছর। কিন্তু তিনটি ধারায় পাওয়া অর্থদণ্ড আলাদাভাবে
অর্থাৎ ১০ হাজার টাকা করে মোট ৩০ হাজার টাকাই দিতে হবে। এই অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ছয়
মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় রায়ে।
রায়ের পর আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশি তৎপর
হলে নোয়াখালী সদরের পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের মো. আবুল খায়েরের ছেলে মোহাম্মদ
কামরুল ইসলাম বিচারিক আদালতের দণ্ড চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন।
সেই আবেদনে বলা হয়, তিনি ১৯৯০ সালের ১৫
জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৬ সালে হরিনারায়ণপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস
করেন। দারিদ্রের কারণে কলেজে তিনি ভর্তি পারেননি। ২০০৮ সালের ৮ জুলাই এমএলএসএস
হিসেবে লক্ষ্মীপুর আদালতে যোগ দেন তিনি। পরে নোয়াখালীতে বদলি হন। ২০১৯ সালের ২৯
জানুয়ারি থেকে তিনি নোয়াখালী আদালতের সহকারী হিসেবে কর্মরত।
রিট আবেদনে আরও বলা হয়, মামলায় (জালিয়াতির
মামলা) ১৯৯৮ সালের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তখন তার বয়স ছিল আট বছর। আর যে কামরুল
ইসলামের কথা মামলার রায়ে বলা হয়েছে, সে কামরুল ইসলামের বাড়িও একই উপজেলায়।
কাকতলীয়ভাবে তার বাবার নামও এক। তবে গ্রামের নামের আদ্যাংশে পার্থক্য রয়েছে।
রিট আবেদনকারী মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের
গ্রাম পূর্ব রাজারামপুরে। আর আসামি কামরুল ইসলামের গ্রাম পশ্চিম রাজারামপুরে।
সুতরাং রিট আবেদনকারী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম আসামি নন, দণ্ডিতও নন।
রিট আবেদনে পূর্ব রাজারামপুরের মোহাম্মদ
কামরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি না করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট
গত বছর ৫ নভেম্বর রুল জারির পাশাপাশি দুদকের কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চায়। আদালতের
নির্দেশনা অনুযায়ী রুলের জবাব দিয়ে দুদক ভুল স্বীকার করে।