ব্যক্তিগতভাবে কোনো অভিযোগ না তুললেও পরস্পরের দলের বিরুদ্ধে অবশ্য
অভিযোগ করেছেন নৌকার প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী এবং ধানের শীষের প্রার্থী শাহাদাত
হোসেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগের দিন মঙ্গলবার
দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই নিজেদের জয়ের আশা প্রকাশ করেন।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা
রেজাউল করিম দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম কোনো ভোটে লড়ছেন।
বয়সে তার চেয়ে নবীন হলেও নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত এর আগে জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে লড়েছিলেন।
রেজাউলের প্রতিশ্রুতি ‘নান্দনিক ও পরিচ্ছন্ন’ নগরী
পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সম্প্রীতিতে জোর শাহাদাতের
নগরীর পূর্ব ষোলশহরের বহদ্দার বাড়ির সন্তান রেজাউল নগর ছাত্রলীগের
নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম কলেজ
ছাত্রলীগের সভাপতি হন তিনি।
রেজাউল করিম চৌধুরী
এরপর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, উত্তর জেলা
ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর চরম দুঃসময়ে উত্তর জেলা
ছাত্রলীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন রেজাউল। এরপর হন যুবলীগের সদস্য।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ছিলেন রেজাউল।
এরপর হন সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমান কমিটিতে তিনি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদকের পদে
আছেন।
চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব ও
কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন রেজাউল।
লেখক হিসেবেও পরিচিতি রয়েছে রেজাউলের। ‘ছাত্রলীগ ষাটের দশক
চট্টগ্রাম’ এবং ‘স্বদেশের রাজনীতি ও ঘরের শত্রু বিভীষণ’ নামে দুটি বই রয়েছে তার।
বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত পেশায় চিকিৎসক। ছাত্রাবস্থা থেকে বিএনপিতে
যুক্ত ছিলেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের শীর্ষ নেতত্বের প্রতি অনুগত হয়ে সক্রিয়তার পর ২০০৯
সালের ২১ ডিসেম্বর নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের পদ পান তিনি।
২০১৬ সালের প্রথম ভাগে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হন
শাহাদাত। কিন্তু চার মাস পরেই চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতির পদ পেয়ে কেন্দ্রীয়
পদ ছাড়েন তিনি। এরপর সম্প্রতি তিনি নগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে আহ্বায়কের পদ পান।
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া)
আসনে বিএনপির প্রার্থী হন শাহাদাত। কারাগারে থেকে করা নির্বাচনে শাহাদাত পান ১৭
হাজার ৬৪২ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল পেয়েছিলেন ২ লাখ ২৩
হাজার ৬১৪ ভোট।
এবার ভোটের মাঠে কাউন্সিলর প্রার্থীদের ঘিরে নানা রকম সংঘাত-সংঘর্ষ
হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে এজেন্ট গ্রেপ্তার, হয়রানি, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আগমনসহ
নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে।
তবে মেয়র প্রার্থীরা দলীয়ভাবে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিলেও
ব্যক্তিগতভাবে কেউ একে অন্যকে আক্রমণ করে কোনো বক্তব্য দেননি।
ভোটে জয়ের আশা করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল বিডিনিউজ
টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উন্নয়ন, সেবা ও আন্তরিকতার জবাবে চট্টগ্রামবাসী নৌকায়
ভোট দিবে। নৌকার জয়ের বিজয়ের বিষয়ে আমি শতভাগ আশাবাদী।”
শাহাদাত হোসেন
নিজের জয়ের আশাবাদ প্রকাশ করলেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিএনপির
প্রার্থী শাহাদাত।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গ্রেপ্তার, হামলা, মামলা,
তল্লাশি ভোটের পরিবেশে প্রভাব ফেলছে। পুলিশের অতি উৎসাহী কর্মকর্তা আর ছাত্রলীগের
সন্ত্রাসীরা ভোটের পরিবেশ নষ্ট করছে। যে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল সেটা মুছে গেছে।
মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।”
এর জবাব দিতে চট্টগ্রামবাসীকে আহ্বান জানিয়ে শাহাদাত বলেন, “আমি
চট্টগ্রাসবাসীকে ভোটকেন্দ্রে আসার আহ্বান জানাই। আমরা স্পষ্ট বলতে চাই জনগণ রাজপথে
আছে। তাদের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আমরা ভোটের
অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ জনগণ যদি আগামীকাল (বুধবার)
তাদের যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাহলে আমরা জয়ী হব।”
ব্রিটিশ আমলে গঠিত চট্টগ্রাম পৌর করপোরেশন সিটি করপোরেশনে
রূপান্তরিত হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন জাতীয় পার্টির নেতা
মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৯১-১৯৯৩ মেয়াদে বিএনপি নেতা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন
এই পদে ছিলেন।
১৯৯৪ সালে প্রথমবার সিটি ভোটে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হন এবিএম
মহিউদ্দিন চৌধুরী। টানা তিনবার তিনি ভোটে লড়ে জয়ী হন। এরপর ২০১০ সালেও ভোটে লড়ে বিএনপি
সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটে পরাজিত হন তিনি।
এরপর সবশেষ ভোটে মনজুরকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে মেয়র হন
দলটির নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি এবার মনোনয়ন চাইলেও পাননি।