বিসিবির অনলাইন বোর্ড সভায় বুধবার চূড়ান্ত হয় রাজ্জাকের নিয়োগ। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশারের সঙ্গে কাজ করবেন তিনি। সাজ্জাদ আহমেদ নির্বাচকের দায়িত্ব ছাড়ার পর তিন বছরেরও বেশি সময় পর নেওয়া হলো অন্য কাউকে।
রাজ্জাক নির্বাচক হওয়ায় প্রথম যে প্রশ্ন হওয়ার কথা বা কৌতূহল জাগার কথা, সেটি হলো তার খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে। রাজ্জাক এখনও অবসর নেননি। অনেক দিন জাতীয় দলে সুযোগ না হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি দারুণভাবেই সক্রিয়, নেতৃত্বও দেন নিয়মিত। সবশেষ জাতীয় লিগে ৩১ উইকেট নিয়ে ও বিসিএলে ২২ উইকেট নিয়ে তিনিই ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। গত মার্চে থমকে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও খেলছিলেন তিনি মোহামেডান স্পোর্টিংয়ের হয়ে। নির্বাচক হওয়ার পর ৩৮ বছর বয়সী স্পিনারের খেলোয়াড়ি অধ্যায়ের কি তবে এখানেই সমাপ্তি?
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে সেটির উত্তর দিলেন রাজ্জাক।
“খেলা চালিয়ে যাব নাকি ছাড়ব, এখনও জানি না। কারণ বোর্ড থেকে এটা নিয়ে কিছু বলা হয়নি এখনও। আমিও সেভাবে ভাবিনি। কোভিডের কারণে অনেক দিন ধরে আমরা খেলতে পারছি না, এর মধ্যেই নির্বাচক হওয়ার সুযোগ এসেছে। আমি রাজি হয়েছি। কিন্তু খেলা ছাড়া নিয়ে কোনো কিছু ভাবিনি। দেখা যাক, একটু ভেবে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।”
নির্বাচকের দায়িত্ব পেয়ে অবশ্য উচ্ছ্বসিত প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে দেশের সফলতম বোলার।
“খুব ভালো লাগছে। আমি ক্রিকেটের মানুষ, আজীবন ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকতে চাই। নির্বাচকের দায়িত্ব পাওয়া অনেক বড় সম্মান। আমার প্রতি আস্থা রাখায় বিসিবির প্রতি কৃতজ্ঞতা।”
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৬০০ উইকেট শিকারি বাংলাদেশের একমাত্র বোলার রাজ্জাক, তার উইকেট সংখ্যা এখন ৬৩৪। ৪১ বার নিয়েছেন ৫ উইকেট, ম্যাচে ১০ উইকেট ১১ বার। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিয়েছেন ৪১২ উইকেট। সেরা বোলিং ১৭ রানে ৭ উইকেট।
একসময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সীমিত ওভারের বাংলাদেশ দল ভাবা যেত না রাজ্জাককে ছাড়া। ওয়ানডেতে দুইশ উইকেট শিকারি প্রথম বোলার তিনিই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়েছেন ৩৯০ উইকেট। হ্যাটট্রিক করেছেন ওয়ানডেতে।
সবশেষ তাকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দেখা গেছে ২০১৪ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করে গেলেও আর সুযোগ মেলেনি তার। দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৮ সালে দেশের মাটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে আবার তাকে আচমকাই নেওয়া হয় দলে। মিরপুর টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ৫ উইকেট নিলেও বাদ দেওয়া হয় আবার। জাতীয় দলে তার অধ্যায় থমকে আছে সেখানেই।
তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে বলে নানা সময়ে বলেছেন অনেকেই। তিনি নিজেও হাহাকার কম করেননি। এবার নিজেই যখন নির্বাচক, তার ভূমিকা কেমন থাকবে? বাংলাদেশের বাস্তবতায় নির্বাচকদের ভূমিকা রাখার সুযোগ যদিও সামান্য, তারপরও সাধ্যমতো চেষ্টা করবেন বলে জানালেন রাজ্জাক।
“আমি আমার মতোই চেষ্টা করব। যতটা পারি নিজের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করব। সর্বোচ্চ সৎ থেকে কাজটি করার চেষ্টা করব। আমার কথাতেই সব হবে, এমন তো নয়। আমার যতটুকু সুযোগ থাকবে, অবদান রাখার চেষ্টা করব।”
“অবশ্যই চেষ্টা থাকবে যোগ্যরা যেন সুযোগ পায়, উপযুক্ত কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার। বাকিটা সময় হলেই বোঝা যাবে। আমার সঙ্গে যে দুজন আছেন, তারা অনেক অভিজ্ঞ। তাদের কাছ থেকে সব বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব, পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজের মত দেওয়ার চেষ্টা করব।”