মঙ্গলবার তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল স্টাডিজে দেওয়া এক বক্তৃতায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবিব কোহাবি বলেছেন, “২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তিতে ফিরে আসা, অথবা যদি বেশ কিছু সংস্কারসহ একই ধরনের সমঝোতা হয়, তা অভিযান ও কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে খারাপ ও ভুল হবে।”
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ইসরায়েলের শীর্ষ জেনারেলের এই মন্তব্যে ইরানের সঙ্গে যেকোনো ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্কে জড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী প্রধানের এ ধরনের মন্তব্য বিরল ঘটনা এবং সম্ভবত ইসরায়েলের সরকারের অনুমোদন পেয়েই তিনি এমনটি বলেছেন।
২০১৫ সালে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরান একটি পারমাণবিক চুক্তি করেছিল। এই চুক্তির অধীনে তাদের ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বদলে নিজেদের পারমাণবিক কর্মসূচী হ্রাস করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইরান। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনকে এই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেন।
তখন ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এর আগে চুক্তিতে থাকা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রস্তাবের সমালোচনা করেছিলেন তিনি আর চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ইরান পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন শুরু করতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন।
মঙ্গলবার বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া অ্যান্টনি ব্লিংকেন গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ওই চুক্তিতে ফের যোগ দেবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র ‘অনেক দূরে আছে’, তার আগে দেখতে হবে আবার চুক্তি মেনে চলা শুরু করতে ইরান আসলে কী করেছে।
ওয়াশিংটন চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর থেকে ইরান ধাপে ধাপে চুক্তিতে বেধে দেওয়া ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সীমা লঙ্ঘন করা শুরু করে, তারা স্বল্প সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ গড়ে তোলা শুরু করে, পরে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা শুরু করে এবং সেন্ট্রিফিউজগুলো আবার সচল করে চুক্তিতে যা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
কোহাভি বলেছেন, ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচী অস্ত্র নির্মাণের জন্য নয় শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে বলে দাবি করলেও এইসব পদক্ষেপ দেখাচ্ছে দেশটি শেষ পর্যন্ত পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের সিদ্ধান্তের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারে।
“এসব মূলগত বিশ্লেষণের আলোকে আমি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোকে ইতোমধ্যেই যেগুলো আছে তার অতিরিক্ত আরও অনেকগুলো অভিযান পরিকল্পনা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছি। অবশ্যই এগুলো বাস্তবায়নের বিষয়গুলো রাজনৈতিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে, কিন্তু এসব পরিকল্পনা প্রস্তুত অবস্থায় থাকা দরকার,” বলেছেন তিনি।