বুধবার এই নির্বাচনের
ভোটগ্রহণ শেষে সন্ধ্যায় বন্দরনগরীর দেওয়ানজি পুকুরপাড়ের বাসায় সিটি নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের
একথা বলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন,
“ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ বিভিন্ন উপনির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেছে, কিন্তু
নির্বাচনের মাঠে ছিল না। একইভাবে চট্টগ্রামের নির্বাচনেও মাঠে ছিল না। কিন্তু বিএনপি
নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও রিজভী আহমেদের সংবাদ সম্মেলনে যেসব কথা বলেছেন, হেরে
যাওয়ার পর মুখ রক্ষার জন্য এসব কথা তারা বলছেন। নির্বাচনে হেরে গেলে বিএনপির অভ্যাসটা
হচ্ছে সে রকম- নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন
চলাকালে বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করেছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে রিজভী আহমেদ ঢাকায়
বসে এবং চট্টগ্রামে আমীর খসরু মাহমুদ সংবাদ সম্মেলন করেছেন এবং নানা ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন।
“আমরা আগে থেকেই জানতাম,
এই সমস্ত প্রশ্ন তোলার জন্যই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তারা সব নির্বাচনেই এই
সমস্ত গৎবাঁধা প্রশ্ন উপস্থাপন করেন এবং অভিযোগের বাক্স খুলে সব সময় বসে থাকেন।”
সিসিসি নির্বাচনে সহিংসতার
জন্য বিএনপি আওয়ামী লীগকে দায়ী করলেও তা অস্বীকার করে উল্টো সহিংসতার জন্য বিএনপির
দিকে অভিযোগ তুলেছেন ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান।
নির্বাচনে ‘বিএনপি
সন্ত্রাস করেছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “নগরীর পাহাড়তলি ইউসেপ কেন্দ্রে বিএনপির আক্রমণে
দুজন আওয়ামী লীগ কর্মী আহত হয়েছে, আমবাগান কেন্দ্রে একজন আওয়ামী লীগ কর্মী খুন হয়েছে।
পাথরঘাটা কেন্দ্রে বিএনপির আক্রমণে ইভিএম মেশিন ভেঙে দিয়েছে।
“দেওয়ানবাজার কেন্দ্রে
বিএনপি সংখ্যালঘু ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে। ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রে একজন
আওয়ামী লীগ কর্মী এজেন্ট এখনও নিখোঁজ। লালখানবাজার কেন্দ্রে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার
সম্পাদকের ছেলেকে আক্রমণ করে রক্তাক্ত করেছে, আরও পাঁচজন আহত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “চান্দগাঁও
মৌলভী পুকুরপাড় কেন্দ্রে বিএনপির আক্রমণে যুবলীগ কর্মীসহ পাঁচজন আহত হয়েছে, অভিজিৎ
নামের এক আওয়ামী লীগ কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। কাজেম আলী স্কুল কেন্দ্রে যুবলীগকর্মী
সোলাইমান আহত হয়েছে বিএনপির আক্রমণে।”
বিএনপি প্রার্থী ডা.
শাহাদাত বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচন করেননি, নির্বাচন করেছেন ‘পুলিশের
সাথে’।
এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর
দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি
হলে সেখানে পুলিশ দলমত নির্বিশেষে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
“লালখান বাজার আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগের অনেককে আটক করা হয়েছে, লাঠিচার্জ করা হয়েছে, তাদের
বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানে বিএনপি হাঙ্গামা করেছে সেখানেও ব্যবস্থা নিয়েছে,
যেখানে আওয়ামী লীগ করেছে সেখানেও ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। পুলিশের দায়িত্বই তো আইনশৃঙ্খলা
রক্ষা করা, শান্তি স্থাপন করা।”
নির্বাচনের নামে ‘তামাশা
হয়েছে’ বলে রুহুল কবির রিজভীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় হাছান মাহমুদ বলেন, “তিনি একথা
বলেছেন দুপুরবেলা, তখন নির্বাচন শেষ হয়নি। আসলে তারা যে হেরে যাচ্ছিলেন, তাদের নেতাকর্মীদের
নির্বাচনের মাঠে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- সেটিকে ঢাকা দেওয়ার জন্য দুপুরবেলা এটা বলেছেন
তিনি, আগামীকালও বহু কথা বলবেন।
“হেরে গেলে অজুহাত
দাঁড় করানোর চেষ্টা রিজভী আহমেদ সব সময় করেন। আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাব, অজুহাত দাঁড়
করানোর অপচেষ্টা না চালিয়ে তাদের দুর্বলতাটুকু কোথায় সেটি খুঁজে বের করার জন্য।”
চট্টগ্রামে অতীতের
সিটি নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে রাঙ্গুনিয়ার সংসদ সদস্য হাছান মাহমুদ বলেন, “১৯৯৪ সালের
পর থেকে কার্যত বিএনপি কোনো ভোটে জেতেনি। মনজুর আলম মঞ্জু সাহেব একবার বিএনপির পক্ষ
হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। আসলে মনজুর আলম তো আওয়ামী লীগের মানুষ, বিএনপির কাছে তিনি ভাড়ায়
খেলতে গিয়েছিলেন।
“যেহেতু তিনি দীর্ঘ
দিন আওয়ামী লীগ করেছেন সে কারণে আওয়ামী লীগের অনেক লোক তার পক্ষে কাজ করেছে, সেই কারণে
তিনি জয়লাভ করেছিলেন। তিনি আবার কিন্তু আওয়ামী লীগে ফেরত চলে এসেছেন। সুতরাং ‘৯৪ সালের
পর থেকে এই শহরের কোনো নির্বাচনেই বিএনপি জয় লাভ করেনি।”
নির্বাচনী আচরণবিধিতে
মন্ত্রী-এমপিদের স্থানীয় নির্বাচনে ভূমিকা রাখার সুযোগ না থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী
বলেন, “নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশে এমন একটি বিধি করেছে, যারা এমপি তারা কোনো প্রচারণা
চালাতে পারছে না, কিছুই করতে পারছে না। অথচ এই শহরে আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং এই শহর
থেকেই আমার রাজনীতি শুরু।
“এই শহরের জামালখান
ওয়ার্ড ছাত্রলীগের মিছিলের কর্মী হিসেবে আমার রাজনীতির জীবন শুরু। আমি চট্টগ্রাম মহানগর
ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠ চক্র সম্পাদকও ছিলাম। দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা সত্ত্বেও
কিন্তু এই নির্বাচনে আমরা কোনো ভূমিকাই রাখতে পারিনি দলের পক্ষে। এই রকম বৈষম্যমূলক
বিধান আশপাশের কোনো দেশে নাই।”