বুধবার নীলফামারীর ডোমারে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এক সময় ২০ থেকে ২৫ হাজার
টন আলু বীজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হতো। এখন আর দুই হাজার টন বীজ আলুও আমদানি করতে হয়
না।
“আমাদের দেশে নতুন নতুন গবেষণার মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন
করায় বীজ আলু আমদানি নির্ভরতা কমে গেছে।”
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এক কোটি টনেরও বেশি আলু উৎপাদিত
হয়। এই আলু আমরা সারা বছর সবজি, চিপস ও ফ্রেন্স ফ্রাইসহ নানা খাবার হিসেবে খাই। কিন্তু
চিপস, ফ্রেন্স ফ্রাইসহ আলুজাত খাদ্য সামগ্রী তৈরি করার জন্য অনেক উন্নত বিশেষ ধরনের
আলু প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের আলুতে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় তা থেকে চিপস ও ফ্রেন্স ফ্রাইসহ
উন্নতমানের আলুজাত পণ্য উৎপাদন
করা সম্ভব হয় না বলে জানান মন্ত্রী।
সম্প্রতি পানির পরিমাণ কম রয়েছে এমন জাতের কয়েকটি আলুর জাত সংগ্রহ করা হয়েছে
জানিয়ে তিনি বলেন, এসব আলু দিয়ে উন্নত মানের চিপস, ফ্রেন্স ফ্রাইসহ আলুজাত খাদ্যসামগ্রী
উৎপাদন
করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রাশিয়া, মলয়েশিয়া, ভিয়েতনামসহ বর্হিবিশ্বের অন্যান্য দেশে
রপ্তানি করা সম্ভব হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, শীত কম হওয়ায় থ্যাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে
আলুর উৎপাদন
হয় না। অথচ শীত প্রধান দেশ থেকে আলু আমদানি করে মালয়েশিয়া আলুজাত খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন
করে আমাদের দেশে রপ্তানি করে। বাংলাদেশ এখন এসব আলু উৎপাদন
করে তা দিয়ে উন্নতমানের আলুজাত খাদ্য তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি
করবে।
বিদেশে চাহিদার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি ও শিল্পে ব্যবহারযোগ্য আলুর আবাদ
ও উৎপাদন
বৃদ্ধিতে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।
বিএডিসির মানসম্মত বীজ আলু উৎপাদন ও সংরক্ষণ এবং কৃষক
পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় ডোমার খামারে ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন
করা হচ্ছে; পাশপাশি নতুন জাতের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য ট্রায়াল প্লট স্থাপন ও পর্যবেক্ষণ
করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
দুপুরে ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের
(বিএডিসি) ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামার পরিদর্শন করেন মন্ত্রী আব্দুর
রাজ্জাক।
মন্ত্রী আরও বলেন, উচ্চ ফলনশীল রপ্তানিযোগ্য ও শিল্পে ব্যবহার উপযোগী আলুর
জাত পরিচিতি ও জনপ্রিয়করণের জন্য বিএডিসি আমদানিকৃত এবং বারি উদ্ভাবিত সম্ভাবনাময় ২০টি
জাত নিয়ে এবছর সারাদেশে ৩০০টি প্রদর্শনী প্লট ও মাল্টিলোকেশন টেস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
চলতি বছরে বিভিন্ন মানের ৩৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন বীজ আলু এবং ৫ হাজার মেট্রিক টন রপ্তানিযোগ্য
আলু উৎপান
কার্যক্রম চলমান আছে।
তিনি বলেন, বীজ আলু উৎপাদনের পাশপাশি সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে
উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৮টি জোনের ৩০টি হিমাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪৫ হাজার
৫০০ মেট্রিক টন। আরও দুই হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষতার চারটি হিমাগার নির্মাণ করা হবে।
এতে বিএডিসির বীজ আলু সংরক্ষণ ক্ষমতা উন্নীত হবে ৫৩ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনে।
মন্ত্রী জানান, আলু উৎপাদনে দেশে বীজ আলুর বার্ষিক চাহিদা
৭ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন। বিএডিসি বিশেষায়িত দুইটি ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন
খামার রয়েছে যার মধ্যে ডোমার গুরুত্বপূর্ণ। খামারটির জমির পরিমাণ ৫১৬ একর। চলতি বছর
২৫৬ একর জমিতে বীজ আলু উৎপাদিত
হয়েছে। এখানে দুইটি টিস্যু কালচার ল্যাবরেটরি রয়েছে।
এই সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম, বাংলাদেশ
কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ, বারির মহাপরিচালক মো. নাজিরুল ইসলাম, গম ও ভুট্টা গবেষণা
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. এছরাইল হোসেন, নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান
চৌধুরী, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দেওয়ান কামাল
আহমেদ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল, ডোমার ভিত্তি
বীজ আলু উৎপাদন
খামারের উপ-পরিচালক আবু তালেব মিয়া প্রমুখ।