বুধবার বিকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধনের সময় একথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে আমরা ভ্যাকসিন আনার জন্য যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করেছি এবং আমরা যে ভ্যাকসিনটা পাচ্ছি আমরা আজকে এটার যাত্রা শুরু করতে চাচ্ছি। আপনারা জানেন যে ভ্যাকসিনটা আসার সাথে সাথে এগুলো কিন্তু টেস্ট করা হয় এবং তারপরে কিন্তু দেওয়া হয়।
“আমাদের দুর্ভাগ্য হল, কিছু কিছু লোক থাকে সব কিছুতেই একটা…মানে সবকিছুতে আমি বলব একটা নেতিবাচক মনোভাব তারা পোষণ করে। হয়ত তাদের কাছে কোনো মানুষ কোনো সাহায্য পায় না, কিন্তু কোনো কাজ করতে গেলে সেখানে বিরূপ সমালোচনা, মানুষের ভেতর সন্দেহ ঢোকানো, মানুষকে ভয়ভীতি দেওয়া এই ধরনের কিছু কাজ কারও কারও অভ্যাস আছে। সব সময় কোনো কিছু তাদের ভালো লাগে না। যত ভালো কাজই করেন সব কিছুতেই তারা ‘কিছু ভালো লাগে না’ নামে একটা রোগে ভোগে। এই রোগের কি চিকিৎসা আছে আমি জানি না। এর জন্য কোনো ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে কি না তাও আমি জানি না।”
পত্রিকা দেখলেই এই ধরনের মানুষ পাওয়া যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সেখানে সব কিছুতে একটা দোষ টোকানো। এই ভ্যাকসিন আসবে কি আসবে না, আসবে না, আসলে পরে এত দাম হল কেন, এটা চলবে কি না, দিলে কী হবে- নানা প্রশ্ন তাদের।”
সংশয়ী-সমালোচকদেরও টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যা হোক তবুও চাই তারাও সাহস করে আসবেন। আমরা তাদেরকেও ভ্যাকসিন দিয়ে দেব, যাতে তারাও সুরক্ষিত থাকে। কারণ তাদের যদি কিছু হয় তাহলে আমাদের সমালোচনাটা করবে কে? সমালোচনার লোকও থাকা দরকার। থাকলে আমরা কিছু জানতে পারি।
“আমাদের কোনো ভুল-ভ্রান্তি হল কি না। সেইজন্য তাদেরকে আমি সাধুবাদ দিচ্ছি। তাদের সমালোচনা যত হয়েছে আমরা কিন্তু তত বেশি দ্রুত কাজ করার একটা প্রণোদনা পেয়েছি।”
প্রথম যে পাঁচজন টিকা নিয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে সাহস যুগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস মহামারীর হাত থেকে সবাই যেন মুক্তি পায়, সেই আশাবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এই ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার যে যাত্রা শুরু করেছে সেটা যেন সফল হয়, তা নিশ্চিতে সবাই যেন আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন সেই নির্দেশনাও দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আর এটা শুধু আমাদের দেশে না। যেহেতু এটা একবারে বিশ্বব্যাপী কাজেই সেখানেও বিভিন্ন বিশ্ব সংস্থা তারাও সক্রিয় রয়েছে। ডব্লিউএইচও’র সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ রাখছি। কাজেই তাদের মতামত এবং অনুশাসন মেনেই আমরা চলছি।
“আজকের এই ভ্যাকসিনটাও তাদের মতামত এবং তাদের অনুশাসন সব কিছু মেনেই করা হচ্ছে।”
অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস মোকাবেলার পাঁচজন সম্মুখযোদ্ধাকে টিকা দেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে কথা বলে সাহস যোগান প্রধানমন্ত্রী।
এই টিকার মাধ্যমে সরকার দেশের মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো পূরণ করা তার সরকারের কর্তব্য।
“সরকার হিসেবে আমরা জনগণের সেবক। সেই সেবক হিসেবে আমরা নিজেদেরকে মনে করি। আর সেভাবে আমরা চেষ্টা করি যে কোনো দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এবং মানুষের জন্য কাজ করে যেতে।”
বিশ্বজুড়ে হঠাৎ করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাবে যে স্থবিরতা দেখা দেয় সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে মানুষের জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে এবং অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
এই টিকার মাধ্যমে দেশের মানুষ করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
টিকা পেতে সরকারের নেওয়া প্রচেষ্টা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে গবেষণা চলছিল। বিভিন্ন দেশ গবেষণা করছে। আমাদের কাছে নানা ধরনের খবর আসছে। আমার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নির্দেশ ছিল, কোন কোন জায়গায় এটা গবেষণা হচ্ছে, কোথায় পাওয়া যাবে সব জায়গায় চিঠি লিখে আমরা যেন এটা বুক করে রাখি।
“যখন যেটা আগে পাওয়া যাবে সেটাই আমরা নেব। সেভাবেই কিন্তু আমরা উদ্যোগটা নিয়েছিলাম।”
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে এই সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসক, নার্স ও টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন সরকার প্রধান।
কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় চিকিৎসক, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ যারা কাজ করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশপাশি ওই সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের দেওয়া বিভিন্ন নির্দেশনা মেনে চলায় দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এই ভাইরাস সংক্রমণে যারা দেশ-বিদেশে মারা গেছেন তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান শেখ হাসিনা।