ক্যাটাগরি

লাল কেল্লায় কড়া পাহারা, দিল্লির রাস্তায় আধাসামরিক বাহিনী

নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে প্রায় দুই মাস ধরে লাখো ভারতীয় কৃষক দিল্লি সীমান্তে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। এতদিন তাদের এ আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চললেও মঙ্গলবার তা সহিংস রূপ নেয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওইদিন এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৮০ জন।

মারা যাওয়া কৃষকের মৃত্যুর কারণ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, পুলিশের গুলিতে ওই ব্যক্তি নিহত হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে ওই ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ ‘ট্রাক্টরের নিচে চাপা পড়া’উল্লেখ করা হয়েছে।

দিল্লি পুলিশের বরাত দিয়ে এনডিটিভি জানায়, মঙ্গলবারের সংঘর্ষে তিনশ’র বেশি পুলিশ আহত হয়েছেন। ওই দিনের ঘটনা ঘিরে ২২টি মামলা দায়ের হয়েছে।

বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘দাঙ্গা, সরকারি সম্পদ ভাংচুর এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র হাতে সরকারি কর্মচারীদের উপর হামলার’ ‍অভিযোগে পুলিশ ওই মামলাগুলো দায়ের করেছে। মামলায় বেশ কয়েকজন কৃষক নেতাকেও আসামি করা হয়েছে।

ওইদিন আটটি বাস ও ১৭টি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে বলেও জানায় পুলিশ।

মঙ্গলবার ভারতের ৭২তম প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেডের পর নির্দিষ্ট কয়েকটি পথে আন্দোলনরত কৃষকদের রাজধানীতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা নির্ধারিত সময়ের আগেই এবং নির্দিষ্ট পথের বাইরে দিয়েও দিল্লিতে প্রবেশ করলে পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল ছুঁড়ে এবং লাঠিপেটা করে তাদের আটকাতে চেষ্টা করে।

কিন্তু কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিল আটকানো যায়নি, উল্টো পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ বেধে যায়।

ওই দিন দুপুরে কৃষকরা অন্তত ২০টি ট্রাক্টর নিয়ে লাল কেল্লা চত্বরে ঢুকে পড়ে। সেখানে জাতীয় পতাকার পাশেই আন্দোলনকারীরা একটি খুঁটিতে পুঁতে দেয় আন্দোলনের নিশান— কৃষক সংগঠনের একটি পতাকা। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে দুপক্ষের মধ্যে শুরু হয় সংঘর্ষ।

সংঘর্ষে কতজন কৃষক আহত হয়েছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গণমাধ্যমে ওই দিনের ছবি ও ভিডিওতে আহত এবং রক্তাক্ত কৃষকদের সরিয়ে নিতে দেখা যায়।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা নাগাদ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লাল কেল্লা প্রাঙ্গন থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হয়। তারপরই সেখানে শতাধিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বুধবারও পুলিশ সেখানে পাহারা দিচ্ছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মঙ্গলবারের ওই সহিংসতার পর দিল্লির অনেক সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরীতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি আধাসামরিক বাহিনীও টহল দিচ্ছে।

এনডিটিভি জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর রাজধানীতে আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেন। এছাড়া পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

নগরীর কয়েকটি জায়গায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে, মোবাইল নেটওয়ার্কের গতিও ধীর।

‘সংযুক্ত কৃষাণ মোর্চা’ মঙ্গলবারের ওই সহিংস ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। কৃষকদের কয়েকটি সংগঠন মিলে এই মোর্চা গঠন করে এবং নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে এ বিক্ষোভের আয়োজন করেছে। বুধবার রাতের মোর্চার নেতাদের বৈঠক করার কথা রয়েছে।

ওদিকে, পূর্বের রাজ্য ওড়িশা থেকে পশ্চিমের রাজ্য গুজরাটের কৃষক নেতারা দিল্লির এই বিক্ষোভে তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখবেন বলে বুধবার জানিয়েছেন।

রাজস্থানের কৃষক নেতা রামান রান্ধাওয়া রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা আগেই পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা ওই তিন কৃষি আইনের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চাই।

“সরকার ওই তিন আইন সম্পূর্ণ বাতিল না করা পর্যন্ত আমরা পিছু হটব না।”

এনডিটিভি জানায়, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভারতের পার্লামেন্ট ভবন অভিমুখে কৃষকদের পদযাত্রার কর্মসূচি রয়েছে। যদিও মঙ্গলবারের সহিংস ঘটনার পর কৃষকদের ওই কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।