ক্যাটাগরি

সহিংসতা ‘কমই হয়েছে’, বললেন ইসি সচিব

তৃতীয় বিশ্বের অনেকে দেশেই নির্বাচনে ‘সহিংসতার কিছু ঘটনা
ঘটে’ মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, “সে হিসাবে আমি বলব, বরং কমই হয়েছে। মাত্র দু-তিনটি
কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের দুষ্কৃতকারীরা এ কাজ করে।”

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ আর গুলিতে একজনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে বুধবার
বিকাল ৪টায় বন্দরনগরীতে ভোটগ্রহণ শেষ হয়। ভোট শেষে ঢাকায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের
সামনে কমিশনের প্রতিক্রিয়া জানাতে আসেন জ্যেষ্ঠ সচিব।

তিনি বলেন, “গণমাধ্যমে আমরা যে নির্বাচন দেখেছি, আমাদের নিয়ন্ত্রণ
কক্ষের মাধ্যমে রিপোর্ট পেয়েছি, তাতে বলব ভালো নির্বাচন হয়েছে।”

চট্টগ্রামের ৭৩৫টি কেন্দ্রে বুধবার সকাল ৮টায় ইলেকট্রনিক ভোটিং
মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ শুরু হয়।

ভোট চলাকালে চট্টগ্রামের লালখানবাজার, পাথরঘাটা আর পাহাড়তলীতে
প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এর মধ্যে পাহাড়তলীতে গুলিতে একজন নিহত হন; পাথরঘাটায় ইভিএম
মেশিন ভাঙচুর করার অভিযোগে বিএনপি সমর্থিত এক কাউন্সিলর প্রার্থিকে আটক করে পুলিশ।

নির্বাচন কমিশন সচিব বলেন, “দুটো কেন্দ্রে শুধু কিছু উচ্ছৃঙ্খল
লোক, যারা ইভিএমে ভোট হোক তা চায় না, তারা আক্রমণ চালিয়েছিল এবং ইভিএম ক্ষতিগ্রস্ত
হওয়ায় ভোট স্থগিত করা হয়। বাকিগুলোতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে ভোট হয়েছে। ভোট দিয়ে বাড়ি
গেছেন। অধিকাংশ কেন্দ্রে ফলও হয়ে গেছে।”

আলমগীর বলেন, “কিছু লোক তো থাকেই সব সময়। চট্টগ্রামে নির্বাচন
সুষ্ঠুভাবে হওয়ার জন্য আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর ২০ হাজার সদস্য নিয়োজিত ছিল; কমিশনও যত রকম
ব্যবস্থা নেওয়া যায় নিয়েছিল।”

এক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ইভিএমে ভোট হলে অনেকে মনে করে
যে জাল ভোট দেওয়া যাবে না, ‘তারাই’ এ ধরনের আক্রমণ করে।

সহিংসতায় প্রাণহানি ‘ভয়ঙ্কর অবস্থা’ কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি
বলেন, “ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি কোথায় হল? যেখানে ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র দুইটা কেন্দ্র
স্থগিত। ইভিএম ভাঙচুর না করলে সেখানেও নির্বাচন হত। ভোট নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে বন্ধ
রাখা হয়েছে দুইটা।”

সকালে ভোট শুরুর পর থেকেই বিএনপির মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা
তাদের এজেন্টদের ‘বের করে দেওয়ার’ অভিযোগ করে আসছিলেন।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইসি সচিব বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে
অভিযোগ রিটার্নিং অফিসার দেখবেন।

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর

নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর

“তারপরও যেসব অভিযোগ কমিশনে পাঠাবে, তা কমিশনে উপস্থাপন করব।
কমিশন বললে তখন ব্যবস্থা নেব। দুটি কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে শুধু।”

আর সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ যেসব অভিযোগ
ইসিতে দিয়েছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “যে কোনো অভিযোগ সুনির্দিষ্টভাবে বলা
গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “

উপস্থিতি ‘তুলনামূলক কম’

সচিব জানান, দুটি কেন্দ্র ছাড়া বাকিগুলোর ফলাফল গণনা হয়েছে।
রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছালে একীভূত করে তিনি খসড়া ফল জানাবেন। তার আগে ভোটার উপস্থিতি
নিয়ে অনুমান করে কিছু বলা ‘ঠিক হবে না’।

তবে উপস্থিতি ‘তুলনামূলক একটু কম ছিল’ মন্তব্য করে তিনি বলেন,
“শুধু চট্টগ্রামে নয়, যে কেনো বড় শহরে ভাসমান লোক থাকে, উপস্থিতি কম হয়।
চট্টগ্রামে আমরা আরেকটু বেশি আশা করেছিলাম। তারচেয়ে একটু কমই হয়েছে।”

‘আমেরিকার লক্ষণ বাংলাদেশে’

ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে ইসি সচিব বলেন,
ভোটারদের ‘অনীহা’ এর একটি কারণ বলে তার মনে হয়।

“এখনকার নাগরিকদের কেন যেন রাষ্ট্রের প্রতি যে দায়িত্ব আছে,
ভোট যে তার অধিকার- এটা তারা মনে করছেন না। কষ্ট করে ভোটের দিব, কেন যাব অন্যকে ভোট
দিতে- এতে আমার কী লাভ… এ ধরনের একটা মন মানসিকতা হয়ে গেছে।”

ইসি সচিব বলেন, “উন্নত বিশ্বে বেশিরভাগ দেশে ভোটের ক্ষেত্রে
এমন হয়। আমেরিকার ক্ষেত্রে দেখবেন, সব দিক দিয়ে এত উন্নত তারা; কিন্তু ভোটের ক্ষেত্রে
ভোট দিতে যায় না বেশিরভাগ মানুষ।

“তো আমাদের দেশেও অনেকটা ওই রকম; উন্নত হওয়ার সাথে সাথে এ
লক্ষণ দেখা দিয়েছে। মানকিতা বদল হয়েছে।”