ফেইসবুক যদি শেষ পর্যন্ত মামলা করেই বসে তাহলে আরেকটি বিষয় উঠে আসতে পারে, তা হলো- আইমেসেজ বাদে তৃতীয় পক্ষের কোনো মেসেজিং সেবাকে নিজ ডিভাইসের ডিফল্ট মেসেজিং সেবা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না অ্যাপল।
ফেইসবুকের দাবি, অ্যাপলের আসন্ন বিজ্ঞাপন-ট্র্যাকিং পরিবর্তন প্রতিষ্ঠানটিকে অ্যাপ স্টোর এবং অন্যান্য স্থানে বিজ্ঞাপন দেখানোর ব্যাপারে “অন্যায্য সুবিধা” দেবে।
প্রযুক্তিবিষয়ক ব্লগ এনগঅ্যজেট উল্লেখ করেছে, অ্যাপলের অ্যাপের বেলায় নতুন ওই নীতি খাটবে না। অ্যাপল অবশ্য যুক্তি হিসেবে বলেছে, তারা কোনো তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে ডেটা শেয়ার করে না। মার্কিন এ প্রযুক্তি জায়ান্ট বলছে, ব্যবহারকারীদের গোপনতা সুরক্ষিত করতেই নতুন নীতি নিয়ে এসেছে তারা।
সম্ভাব্য মামলাটি পৃথক আরেকটি মামলার পথ অনুসরণ করতে পারে। গত বছর অ্যাপলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা দায়ের করেছিল এপিক গেইমস। মূলত অ্যাপলের ব্যবসা অনুশীলন পরিবর্তন এবং অ্যাপের বিক্রি ও ইন-অ্যাপ পারচেস থেকে অ্যাপলের অর্থ কেটে নেওয়া থামাতেই আদালতে হাজির হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।
সে সময় ফেইসবুক নিজ থেকেই সমর্থন দিয়েছিল এপিক গেইমকে। এমনকি ফেইসবুক জানিয়েছে, এপিকের মামলার সমর্থনে কিছু অভ্যন্তরীন নথিও দেবে তারা।
এপিকের মতো ফেইসবুকও শুধু আর্থিক ক্ষতিপূরণ নয়, অ্যাপ স্টোর নিয়মের পরিবর্তন দাবি করতে পারে আদালতে। বিভিন্ন সূত্র বলছে, সামাজিক মাধ্যম প্রতিষ্ঠানটি না কি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে মামলায় যোগ দিতে বলছে। তবে ওইসব সূত্র তাদের নামধাম প্রকাশে রাজী হননি। এসবের বাইরেও মোদ্দা কথা হলো, আদৌ ফেইসবুক মামলা দায়ের করবে কি না সেটিই এখনও নিশ্চিত নয়।
গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদন বলছে, মামলার বিষয়ে ফেইসবুকের ভেতর থেকেই ভিন্ন মত এসেছে। তাদের ভয়, ফেইসবুক যেমনটা বলছে যে, অ্যাপলের নীতি ছোট ব্যাসায়ের আয় কমিয়ে ফেলতে পারে, সেটি সাধারণ মানুষকে বোঝানো কষ্টসাধ্য হবে। সবাই ধরেই নেবেন, ফেইসবুক নিজের আয়রোজগারে সুবিধা না পাওয়ায় মামলার পথে গিয়েছে।
অ্যাপল নিজ নীতির সমর্থনে জানিয়েছে, স্মার্টফোন বাজারের বৃহত্তম শেয়ার তাদের দখলে নেই এবং অ্যাপ স্টোর নীতিমালা ম্যালওয়্যার ও স্ক্যামের ঝুঁকি কমাবে।
কয়েক বছর ধরেই দুই প্রতিষ্ঠান একে অন্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ তুলেছে। ফেইসবুক মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ এর আগে অভিযোগ জানিয়েছিল, আইওএসে ডেটা গোপনতা লেবেল প্রশ্নে অ্যাপল দ্বিমুখী আচরণ করে।
বুধবার ফেইসবুকের প্রান্তিক আয় জানানোর সময় প্রধান আর্থ কর্মকর্তা ডেভ ওয়েনার উল্লেখ করেছেন, অ্যাপলের বিজ্ঞাপনী উদ্দেশ্যে ক্রস-সাইট এবং ক্রস-অ্যাপ ট্র্যাকিং সীমিত করার পরিকল্পনাটি বিজ্ঞাপন আয়ে প্রভাব ফেলতে পারে।
এ বছরই অ্যাপলের পরিকল্পনা কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে, ফেইসবুক প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গও অ্যাপলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন। তার ভাষ্যে, ‘আইমেসেজ’ মানুষের মেসেজকে ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করে না, যদি না আইক্লাউড বন্ধ করা হচ্ছে।” এক্ষেত্রে হোয়াটসঅ্যাপ ‘স্পষ্টতই এগিয়ে” রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
দুই প্রতিষ্ঠানই নিয়ন্ত্রকদের অ্যান্ট্রিটাস্ট তদন্তের মুখে রয়েছে। ফেইসবুকের বিরুদ্ধে গত মাসে মামলা করেছে ফেডারেল ট্রেড কমিশন এবং অধিকাংশ মার্কিন অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা। তাদের অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী সেবা ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ’কে কিনে প্রতিযোগীতা বিরোধী আচরণ করেছে ফেইসবুক। গোটা বিষয়টিকেই পাল্টে দিতে চাইছেন তারা। অন্যদিকে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অ্যাপল। মার্কিন বিচার বিভাগের পৃথক আরেক তদন্তের মুখেও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।