শনিবার সকাল ৮টায় এসব পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলে। এই ধাপে সব পৌরসভায়ই ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ হয়।
পৌরসভা নির্বাচনের প্রথম দুই ধাপে গোলযোগ-সংঘর্ষ হওয়ায় তৃতীয় ধাপে বিশেষ সতর্কতা নেওয়ার কথা জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে তাতেও সহিংসতার রাশ টানা যায়নি।
কারচুপির অভিযোগ তুলে নাটোরের সিংড়া, বগুড়ার শিবগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ সদর ও কটিয়াদী এবং সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পৌরসভায় ব্যালট ছিনতাই অভিযোগে তিন চেয়ারম্যানসহ চারজনকে আটক করেছে পুলিশ।
ফেনী পৌরসভায় একটি কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর এজেন্টসহ তিনজন আহত হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর পৌরসভায় এক কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের উপর হামলা হয়েছে।
ভোটের সকালে মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার একটি ভোটকেন্দ্র।
তৃতীয় ধাপের ৬২ পৌরসভায় প্রায় ১৯ লাখ ভোটার একজন করে মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ভোট দেন।
ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেছিলেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ রাখতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অতিরিক্ত সংখ্যক নিয়োজিত রাখা এবং বিজিবির প্লাটুন বাড়ানোর কথাও বলেছিলেন তিনি।
পৌর ভোটে গোলযোগ-অভিযোগ থাকলেও নির্বাচন কমিশন বলে আসছে, ভোটার উপস্থিতির মধ্যে দুয়েকটি ঘটনা ছাড়া ভালো নির্বাচন হচ্ছে।
দ্বিতীয় ধাপের ভোট শেষে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেছিলেন, “দুয়েকটি জায়গায় দুষ্কৃতিকারীরা অপচেষ্টা করেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এটা খুবই নগণ্য ঘটনা। সব মিলিয়ে এবার পৌরসভায় সুষ্ঠু ও একটা সুন্দর নির্বাচন হয়েছে।”
আর প্রথম ধাপের ভোট শেষে তিনি বলেছিলেন, “সাকসেসফুল নির্বাচন হয়েছে।”
তবে দ্বিতীয় ধাপে সাভারে কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছিলেন, “পৌরসভার নির্বাচনে ক্রমাগত সহিংসতা বেড়ে চলেছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না।”
তৃতীয় দফায় মেয়র পদে সব মিলিয়ে মোট ১০টি দলের প্রার্থী ছিলেন। বরাবরের মতোই মূল লড়াই হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে।
এই ধাপে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সেখানে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া এবং বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
তৃতীয় ধাপে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে প্রার্থী ৩৩৪৪ জন।
এর মধ্যে মেয়র পদে ২২৯ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৫৫ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৩৬০ জন।
ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৬৩ হাজার। মোট ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৯৯টি, কেন্দ্র সংখ্যা ৮৫৪।
যে ৬২ পৌরসভায় ভোট হল
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ; নওগাঁর ধামইরহাট ও নওগাঁ সদর; সিলেটের গোলাপগঞ্জ; বগুড়ার ধুনট, গাবতলী, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম ও কাহালু; রাজশাহীর মুন্ডুমালা; মৌলভীবাজার সদর; ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু ও কোটচাঁদপুর; বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ; কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম ও বরুড়া; চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ; ফেনী সদর; মুন্সীগঞ্জ সদর; শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও ভেদরগঞ্জ; ময়মনসিংহের গৌরীপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, ভালুকা; শেরপুরের নকলা; নাটোরের সিংড়া; রাজশাহীর কেশরহাট; চুয়াডাঙ্গার দর্শনা; ঝালকাঠির নলছিটি; নেত্রকোণার দুর্গাপুর; যশোরের মনিরামপুর; নোয়াখালীর হাতিয়া ও চৌমুহনী; লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ; কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী; গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া; টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, সখিপুর, মধুপুর ও মির্জাপুর; বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা; ভোলার বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান; শেরপুরের নালিতাবাড়ী; কুড়িগ্রামের উলিপুর; দিনাজপুরের হাকিমপুর; চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর; নড়াইল সদর ও কালিয়া; সাতক্ষীরার কলারোয়া; রাজবাড়ীর পাংশা; পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি; বরিশালের গৌরনদী ও মেহেন্দীগঞ্জ; জামালপুরের সরিষাবাড়ী; সিলেটের জকিগঞ্জ; নীলফামারীর জলঢাকা; পাবনা সদর এবং খুলনার পাইকগাছা।
দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার পাঁচ ধাপে এসব পৌরসভায় নির্বাচন করছে কমিশন।
প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় গত ২৮ ডিসেম্বর ইভিএমে ভোট হয়েছে। এরপর ১৬ জানুয়ারি ভোট হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের ৬১ পৌরসভায়।
তৃতীয় ধাপের পর চতুর্থ ধাপে ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং পঞ্চম ধাপে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে।
দলীয় প্রতীকের এ ভোটে মেয়র পদে প্রথম ধাপে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে ১৮ জন, বিএনপির দুই জন এবং তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হন।
দ্বিতীয় ধাপে আওয়ামী লীগের ৪৫ জন, বিএনপির ৪ জন, জাতীয় পার্টির ১ জন, জাসদের ১ জন ও ৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মেয়র পদে বিজয়ী হন।
মহামারীর মধ্যে প্রথম ধাপে ৬৫ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ধাপে ৬২ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়।