চট্টগ্রামে তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথম ইনিংসে বিসিবি একাদশ অলআউট ১৬০ রানেই। বিনা উইকেটে ২৪ রান নিয়ে খেলতে নামা দল শনিবার দ্বিতীয় দিনে গুটিয়ে যায় লাঞ্চের ৪০ মিনিট পরই। আগের দিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংসে করে ২৫৭ রান।
কর্নওয়াল নিয়েছেন ৪৭ রানে ৫ উইকেট। এই বোলিং পরিসংখ্যানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটেও যেভাবে তীক্ষ্ণ টার্ন ও বাড়তি বাউন্স আদায় করে নিয়েছেন তিনি। টেস্ট সিরিজে টার্নিং উইকেট পেলে বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেন ২৭ বছর বয়সী এই স্পিনার।
বাঁহাতি স্পিনার জোমেল ওয়ারিক্যানের শিকার ৩ উইকেট।
এই দুই স্পিনারের ছোবলে দুই দফা ধসে বিধ্বস্ত হয় বিসিবি একাদশের ব্যাটিং। লাঞ্চের আগে ২ রানের মধ্যে দল হারায় ৩ উইকেট। লাঞ্চের পর ৩২ রানের মধ্যে পড়ে যায় শেষ ৬ উইকেট।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য এটি প্রস্তুতি ম্যাচ হলেও বিসিবি একাদশের অনেকের জন্য ম্যাচটি নির্বাচনী মহড়া। চূড়ান্ত টেস্ট স্কোয়াডে কিংবা টেস্ট একাদশে জায়গা পাওয়ার দাবি জানানোর সুযোগ। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ সাইফ হাসান, সাদমান ইসলাম, ইয়াসির আলি চৌধুরিরা। দলের বিপর্যয়ে নুরুল হাসান সোহান চেষ্টা করেছেন টিকে থাকার। কিন্তু একের পর এক সঙ্গী হারিয়ে শেষ দিকে তিনিও উইকেট ছুঁড়ে আসেন।
সাইফ ও সাদমানের লড়াই মূলত প্রথম টেস্টে তামিম ইকবালের উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী হওয়া নিয়ে। টিম ম্যানেজমেন্টের কাজ কঠিন করে দিয়ে মহড়ায় ব্যর্থ দুজনই।
আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে খুব বেশি দূর যতে পারেনি নাঈম শেখ, ফেরেন ৪৫ রানে।
দিনের প্রথম ওভারেই সাইফের আশায় চোট দেন কেমার রোচ। দিনের পঞ্চম বলে তীক্ষ্ণভাবে ভেতরে ঢোকা এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ডানহাতি ওপেনার। আগের দিনের ১৫ রানের সঙ্গে আর কোনো রান যোগ করতে পারেননি সাইফ।
শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে দারুণ এক ফ্লিকে চার মেরে শুরু করলেও সাদমান বেশির ভাগ সময় ছিলেন গুটিয়ে। মোহাম্মদ নাঈম শেখ তিনে নেমে স্বভাবসুলভ শট খেলতে থাকেন। কয়েকটি চার পান তিনি ব্যাটের কানায় লেগে। আলজারি জোসেফ আক্রমণে আসার পর আলগা কিছু বল পেয়ে কাজে লাগান দারুণভাবে।
কর্নওয়াল শুরু থেকেই ভোগান সাদমান-নাঈমকে। নাঈম দুটি চার মেরে চেষ্টা করেন তাকে চাপে ফেলার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ে যেতেন কর্নওয়ালই। স্টাম্প সোজা বল কাট করতে গিয়ে এলোমেলো হয়ে যায় নাঈমের স্টাম্প। ৯ চারে তার রান ৪৮ বলে ৪৫।
১ উইকেটে ৯৮ রান থেকে দলের উল্টো যাত্রা শুরু হয় সেখান থেকেই। দুই ঘণ্টার বেশি সময় উইকেটে থাকা সাদমান আউট হয়ে যান আলগা এক শটে। জোসেফের শর্ট বল পুল করে ওপরেও খেলতে পারেননি, রাখতে পারেননি নিচেও। সরাসরি ক্যাচ শর্ট মিডউইকেটের হাতে। ৮২ বলে তার রান ২২।
পরের ওভারেই কর্নওয়ালকে লম্বা পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে ফেঁসে যান ইয়াসির (১)। বাড়তি বাউন্স করে বল ছোবল দেয় ব্যাটে, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন কাভেম হজ।
লাঞ্চের পর শাহাদাত হোসেন ও নুরুল হাসান সোহান চেষ্টা করেন উইকেট আগলে রাখার। জমে উঠতে থাকা এই জুটি ভাঙেন ওয়ারিক্যান। জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলে শাহাদাত ক্যাচ দেন স্লিপে। এরপর কেবল একের পর এক ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়া।
দৃষ্টিকটুভাবে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন তৌহিদ হৃদয়। কর্নওয়ালের দুর্দান্ত এক টার্নিং ডেলিভারিতে উপড়ে যায় আকবর আলির মিডল স্টাম্প। মাহমুদুল হাসান জয়কেও ফেরান তিনি।
সোহান ওয়ারিক্যানের বলে ১৩ রানে জীবন পান শর্ট মিড উইকেটে ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটেরে হাতে। এরপর নিজের মতোই কিছু উদ্ভাবনী শট তিনি খেলেন। অন্যপ্রান্তে সঙ্গী কাউকে না পেয়ে এক পর্যায়ে তেঁড়েফুড়ে মারতে গিয়ে ওয়ারিক্যানকেই উপহার দিয়ে আসেন তিনি উইকেট।
শেষ উইকেট নিয়ে অফ স্পিনার কর্নওয়াল পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৫৭
বিসিবি একাদশ ১ম ইনিংস: ৪৭.৪ ওভারে ১৬০ (আগের দিন ২৪/০) (সাইফ ১৫, সাদমান ২২, নাঈম ৪৫, ইয়াসির ১, শাহাদাত ১৩, সোহান ৩০, হৃদয় ৭, আকবর ৫, মাহমুদুল ৪, রিশাদ ১*, খালেদ ০; রোচ ৭-৪-১৩-১, গ্যাব্রিয়েল ৮-২-৩০-০, কর্নওয়াল ১৬.৪-৩-৪৭-৫, জোসেফ ৭-০-৩১-১, মেয়ার্স ২-০-৬-০, ওয়ারিক্যান ৭-১-২৫-৩)।