ক্যাটাগরি

পকেটে ছিল মাত্র ২০ পাউন্ড, ফিলিপি এখন অস্ট্রেলিয়ার ‘সেনসেশন’

বিগ ব্যাশে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আগামী মাসের নিউ জিল্যান্ড সফরের অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা করে নিয়েছেন ফিলিপি। চলতি বিগ ব্যাশে এখনও পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫৪ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে, প্রায় দেড়শ স্ট্রাইক রেটে।

গত বিগ ব্যাশে প্রায় ১৩০ স্ট্রাইক রেটে তিনি করেছিলেন ৪৮৭ রান। ওই পারফরম্যান্সের পর আইপিএলের নিলামে তাকে দলে নেয় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। বিরাট কোহলির দলের হয়ে এবার আইপিএলে মাঠেও নামেন তিনি। পরে ইংল্যান্ড সফর করেন অস্ট্রেলিয়া দলের হয়ে। ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সেবার। এবার নিউ জিল্যান্ডে ৫টি টি-টোয়েন্টি খেলবে অস্ট্রেলিয়া, দলে নেই শীর্ষ তারকাদের অনেকে, ২৩ বছর বয়সী ফিলিপির অভিষেকের সম্ভাবনা তাই প্রবল।

অথচ ২০১৭ সালেও তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার ছিল দিশাহীন। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে কোনো জায়গায় সুযোগ হচ্ছিল না, ভবিষ্যৎ ছিল অনিশ্চিত। নিরুপায় হয়ে ইংল্যান্ডে যান নিউক্যাসল ইউনাইটেড ক্রিকেট ক্লাবে। জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ওয়েবসাইটকে সেই দিনগুলির গল্প শোনালেন ফিলিপি।

“ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার কোনো স্কোয়াডের অংশ ছিলাম না তখন, রাজ্য দলে খেলার স্বপ্ন তখন দূরে সরে যাচ্ছিল বলেই মনে হচ্ছিল আমার। খুব অদ্ভূত সময় ছিল তখন…আমার পকেটে তখন ২০ পাউন্ড…ঠিকমতো লাঞ্চ করার অবস্থাও ছিল না।”

কোনো প্রক্রিয়ায় থাকার সুযোগ না পেয়ে, পাশে কোনো কোচ না পেয়ে, আপনজনদের থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে একটা টিকে থাকার সংগ্রাম করতে করতে জীবনকে নতুন ভাবে উপলব্ধি করেন তিনি। বদলে যায় তার দর্শন। যখন কিছুই হারাবার নেই, দেয়ালে ঠেকে গেছে পিঠ, সেখান থেকে কেবল এগোনোই সম্ভব!

ওই ক্লাবের হয়ে সেবার প্রায় ৬০ গড়ে এক হাজার ৩১৪ রান করেন ফিলিপি। সেঞ্চুরি ছিল ৫টি। এই পারফরম্যান্সে ডারহাম কাউন্টি দলের নজরে পড়েন তিনি। ডারহামের দ্বিতীয় একাদশের হয়ে খেলার সুযোগও মেলে।

সিডনি সিক্সার্সের হয়ে বিগ ব্যাশ মাতিয়ে এখন জাতীয় দলে ফিলিপি। ছবি : সিডনি সিক্সার্স।

সিডনি সিক্সার্সের হয়ে বিগ ব্যাশ মাতিয়ে এখন জাতীয় দলে ফিলিপি। ছবি : সিডনি সিক্সার্স।

এরপর তার ভাগ্যের চাকাও ঘুরে যায়। দেশে ফিরে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার সিস্টেমে জায়গা পেয়ে যান। ওই বছরই সফরকারী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি গা গরমের ম্যাচে তার সুযোগ হয়। সেখানে অ্যান্ডারসন-ব্রড-ওকসদের বিপক্ষে ১৬ চারে খেলেন ৮৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। আর তাকে থামতে হয়নি। ওই ইনিংসের কিছুদিন পর বিগ ব্যাশে অভিষেক। কদিন পর শেফিল্ড শিল্ডেও অভিষেক হয়ে যায়। শুরু হয় এগিয়ে যাওয়ার পালা, যে পথ ধরে আজ তিনি জাতীয় দলে।

এই সুসময়ে দাঁড়িয়ে ফিলিপি কৃতজ্ঞচিত্তে ফিরে তাকান সেই দুঃসময়ে।

“ওই সময়টাই আমাকে আজকের ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলেছে। সিস্টেমের অংশ হতে না পেরে, দূরে সরে গিয়ে স্রেফ নিজের জন্য নিজের খেলা নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। এখন আমি যে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলি, ওই সময়টা থেকেই তা পেয়েছি আমি।”

“ওখানে দলের ফলের কোনো মূল্য যেন ছিল না আমার কাছে। ঠিক করেছিলাম, মাঠে নামব, নিজের ঘরানার ক্রিকেট খেলব, মজা করব। আউট হলে হব, কী যায় আসে! ক্রিকেটের পারফরম্যান্স দিয়ে তো কেউ মানুষ হিসেবে আমাকে বিবেচনা করবে না। এই ভাবনা নিয়ে খেলে সেখানে খুব ভালো করলাম। এরপর সেই মানসিকতাই আমার ভেতরে গেঁথে গেছে।”

আইপিএলে তিনি কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো তারকাদের সঙ্গে খেলেছেন। তাদের কাছ থেকে শিখে নিজে সমৃদ্ধ হয়েছেন বলেও জানালেন ফিলিপি।

“২৩ বছর বয়সী একটি ছেলের জন্য এমন ক্রিকেটারদের পাশে থাকতে পারা মানে বিশেষ কিছু। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যা শিখেছি, তারা কিভাবে খেলাটাকে সাধারণ রাখে। যদিও টি-টোয়েন্টি খুব গতিময়, তারপরও তারা বলেন, একটু গভীর শ্বাস নিতে, স্থির হতে এবং কোনো পূর্বধারণা ও পূর্বভাবনা ধরে না রেখে চনমনে থেকে পরের বলটি খেলতে।”

“বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে এমন পরামর্শ পাওয়া দারুণ প্রেরণার।”

এখন তার চোখে শুধু জাতীয় দলে খেলাই নয়, আগামী বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন। মূলত ওপেনার হলেও অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজনে অন্য পজিশনে খেলতেও তার আপত্তি নেই।

“স্বপ্ন হলো অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা। যে ভূমিকাই দেওয়া হোক, দু হাতে লুফে নেব। সিডনি সিক্সার্সের হয়ে (বিগ ব্যাশে) ৬ নম্বরে ব্যাটিং করেই আমার শুরু হয়েছিল, কিছু সাফল্যও পেয়েছি। ওরকম ভূমিকা পেলে তাই অবশ্যই পালন করতে পারব বলে মনে করি। আমার তো মনে হয়, স্পিন বেশ ভালোই খেলি…স্কোয়াডে জায়গা পেয়েই আমি রোমাঞ্চিত।”

“বছরের শেষ দিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে জায়গা পাওয়ার দাবি জানাতে পারলে ভালো লাগবে।”