করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও খেলাপি না হওয়ার যে ‘বিশেষ’ সুবিধা দেওয়া হয়েছিল তা এখন আর নেই। চলতি মাস থেকে কেউ ঋণের কিস্তি না দিলে নিয়ম অনুযায়ী খেলাপি হয়ে পড়বেন। তবে বকেয়া কিস্তি পরিশোধে ‘বিশেষ’ সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার এ বিষয়ে একটি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বরের সার্কুলারের মাধ্যমে অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর নেতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় ঋণগ্রহীতার উপর এর প্রভাব সহনীয় মাত্রায় রাখতে গতবছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের ঋণ শ্রেণিকরণে ডেফারেল সুবিধা দেওয়া হয়েছিল, যা এবছর ১ জানুয়ারি থেকে আর বর্ধিত না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
“ঋণের কিস্তি পরিশোধ সহজ করার লক্ষ্যে ১ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে বিদ্যমান অশ্রেণিকৃত ঋণগ্রহীতার উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং ঋণের বকেয়া স্থিতির পরিমাণ বিবেচনায় ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে কেবলমাত্র মেয়াদী ঋণ হিসাবের অবশিষ্ট মেয়াদের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ সময় বৃদ্ধি করা যাবে। তবে, এরূপ বর্ধিত সময়সীমা কোনভাবেই দুই বছরের বেশি হবে না।”
বিষয়টি ব্যাখা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাছের বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ধরুন, একজন উদ্যোক্তা ২০ কিস্তিতে পরিশোধ করার শর্তে একটি প্রকল্পের জন্য কোনো ব্যাংক থেকে নির্দিষ্ট অংকের ঋণ নিয়েছিলেন। কোভিড-১৯ এর বিশেষ ছাড়ের আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ কিস্তি শোধ করেছেন, বাকি যে ১০ কিস্তি শোধ করতে হয়নি, তা এখন ১৫ কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন।
“তবে, অবশ্যই এই ১৫ কিস্তি দুই বছরের মধ্যে শোধ করতে হবে।”
এছাড়া অন্যান্য ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান নীতিমালা এবং বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় প্রদত্ত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রণোদনা প্যাকেজের নীতিমালা অনুসরণীয় হবে বলে সার্কুলারে বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ঋণগ্রহীতাদের সুরক্ষা দিতে ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণ পরিশোধের বাধ্যবাধকতায় স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। সরকারের নির্দেশনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে জানায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ শোধ না করলেও ঋণের শ্রেণিমানে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না। এরপর এ ছাড়ের মেয়াদ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। পরে তৃতীয় দফায় এ সুযোগ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
যদিও ডিসেম্বর শেষ হওয়ার আগেই ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই ঋণ পরিশোধে শিথিলতার মেয়াদ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়ে গভর্নরকে চিঠি দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সময়সীমা না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা।
‘বিশেষ’ ছাড়ের কারণে গত বছর ব্যাংকগুলো কোনো খেলাপি ঋণ আদায় করতে পারেনি।