ক্যাটাগরি

পাপুলের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করবে দুদক

এতে তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও পাচারের অভিযোগ আনা হচ্ছে বলে কমিশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পাপুলের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা পাচারেরও প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে রোববার ওই কর্মকর্তা জানান।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাউদ্দিন পাপুলের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধান করছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
“তার (পাপুল) বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলবে। আশা করা যায়, খুব শিগগিরই অনুসন্ধান শেষ করা যাবে। তারপর কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করে মামলা করতে অনুমোদন চাওয়া হবে।”

পাপুলের বিরুদ্ধে কী পরিমাণ অবৈধ সম্পদ ও পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে-
জানতে চাইলে অনুসন্ধান কর্মকর্তা বলেন,
“সেই সংখ্যা বা পরিমাণ এখই সঠিকভাবে বলা সম্ভব না। কারণ এখনও কিছু তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ের কাজ বাকি রয়েছে।”

এর আগে গত ১১ নভেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ১৪৮ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে পাপুল ও তার স্ত্রী সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম, শ্যালিকা ও মেয়েকে আসামি করে মামলা করে দুদক।

দুদক কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বাদী হয়ে দায়ের করা ওই মামলায় পাপুলের শ্যালিকা জেসমিন প্রধানকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারে সহযোগিতা করায় পাপুল-সেলিনার মেয়ে ওয়াফা ইসলামকেও আসামি করা হয়।

অর্থ পাচারের পাশাপাশি মামলায় জেসমিন দুই কোটি ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এই মামলাটি দুদকের উপ-পরিচালক সালাউদ্দিন তদন্ত করছেন।

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
“এই মামলাটি সম্পর্কে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কিছু দিনের মধ্যে কয়েকজনকে তলব করা হবে।”

পাপুলের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে গত বছরের ২২ জুলাই সেলিনা ইসলাম ও জেসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।

‘অঢেল টাকা ছড়িয়ে’ তারা আইনপ্রণেতা দম্পতি
 

এর আগে গত ২২ জুন একই অভিযোগে দেশি-বিদেশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাপুল, স্ত্রী সেলিনা, মেয়ে ওয়াফা ইসলাম ও শ্যালিকা জেসমিনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক সব হিসাব স্থগিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয় দুদক।

গত ১৭ জুন পাপুলের স্ত্রী, মেয়ে ও শ্যালিকার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি। পাশাপাশি পাপুল দেশে ফিরলে আর যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দিয়েছে দুদক।

জনশক্তি রপ্তানিকারক পাপুলকে গত ৬ জুন কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। মানব ও অর্থ পাচারের
দায়ে গত ২৯ জানুয়ারি ‍কুয়েতের আদালত বাংলাদেশি এই আইনপ্রণেতাকে চার বছরের কারাদণ্ড
দেয়।

কুয়েতে পাপুলের চার বছরের কারাদণ্ড
 

সাধারণ শ্রমিক হিসাবে কুয়েত গিয়ে বিশাল সাম্রাজ্য গড়া পাপুল ২০১৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন লক্ষ্মীপুরের আসনটিতে।

ওই নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেষ মূহূর্তে ভোট থেকে সরে দাঁড়ালে বিএনপিকে ঠেকাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ পাপুলের পক্ষে কাজ করেছিল।

পাপুল নিজে এমপি হওয়ার পর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কোটায় পাওয়া সংরক্ষিত একটি আসনে তার স্ত্রী সেলিনাকে এমপি করে আনেন।

প্রবাসী উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠিত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান পাপুল, যেখানে তার বড় অঙ্কের শেয়ার রয়েছে।

পাপুলের মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি কাজ করেন বলে কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটির ধারণা।