ক্যাটাগরি

ভারতে কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুললেন মোদী

মোদী সরকারের করা নতুন তিন কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে গত বছর ডিসেম্বর থেকে ভারতের লাখো কৃষক টানা আন্দোলন করে আসছে।

গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন বিক্ষোভরত কৃষকদের একাংশ ট্রাক্টর মিছিল নিয়ে রাজধানী দিল্লিতে ঢুকে পড়ে ঐতিহাসিক লাল কেল্লা প্রঙ্গনে অবস্থান নেয়। পুলিশ তাদের বাধা দিতে গেলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ হয়।

ওই দিনের প্রসঙ্গ টেনে রোববার স্থানীয় এক বেতার ভাষণে মোদী বলেন, ‘‘দিল্লিতে ২৬ জানুয়ারি ভারতের জাতীয় পতাকাকে যেভাবে অপমান করা হয়েছে তা দেখে পুরো দেশ স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে।

“আমাদের সরকার কৃষির আধুনিকায়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সেই লক্ষ্যে আরও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।”

গত মঙ্গলবার প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিলের সময় একাধিক জায়গায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও একদল বিক্ষোভকারী লাল কেল্লার সামনে চলে যায় এবং দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে কেল্লার মিনারের একটি খুঁটিতে নিজেদের পতাকা উড়ায়; যা নিয়ে রীতিমতো বিতর্ক হচ্ছে।

একটি অংশ বলছে, বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা খুলে ফেলে নিজেদের পতাকা উড়িয়েছে। যদিও বিভিন্ন ছবিতে লাল কেল্লায় বিক্ষোভকারীদের পতাকার সঙ্গে জাতীয় পতাকাও দেখা গেছে। জাতীয় পতাকা যে খুঁটিতে উড়ছিল তার সামনের একটি খুঁটিতে বিক্ষোভকারীদের পতাকা ছিল।

‘হিন্দুস্তান টাইমস’ বাংলার খবরে বলা হয়, অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে জাতীয় পতাকা ছুড়ে ফেলতে দেখা যায়। যদিও ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করা যায়নি।

এ ঘটনায় জাতীয় পতাকার ‘অপমান’ হয়েছে অভিযোগ তুলে একদল সরব হয়েছে। পার্লামেন্টে বক্তৃতার সময় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘‘গণতন্ত্রে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে কোনও সমস্যা নেই মোদী সরকারের। কিন্তু প্রজাতন্ত্র দিবসে যেভাবে জাতীয় পতাকার অবমাননা করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

কৃষক নেতাদের দাবি, তারা এ কাজ করেননি। বরং ট্রাক্টর মিছিলে অংশ নেওয়া অল্প কয়েকজন এ কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

মঙ্গলবারের ওই সংঘর্ষের দিন আন্দোলনরত এক ‍কৃষক মারা গেছেন। এছাড়া, শতাধিক কৃষক আহত হয়েছেন। দিল্লি পুলিশ তাদের প্রায় তিনশ’ সদস্য আহত হওয়ার দাবি করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ ২২টি মামলাও করেছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কৃষকদের আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে কৃষক ইউনিয়নের নেতাদের ১১ দফা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হওয়া সব আলোচনাই ব্যর্থ হওয়ায় এ অচলাবস্থার ‍অবসান হচ্ছে না।

কৃষকরা মোদী সরকারের করা নতুন ওই তিন কৃষি আইনের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চাইছে।

ভারতীয় কৃষকদের আশঙ্কা, নতুন কৃষি আইনের ফলে সরকার আর ন্যায্যমূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কিনতে বাধ্য থাকবে না। বাজারের উপর সরকারের নজরদারিও কমে যাবে। ফলে বাজারের নিয়ন্ত্রণ এবং কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা বড় বড় ব্যক্তিমালিকানাধীন কোম্পানির হাতে চলে যাবে এবং কৃষকদের জীবন তাদের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

পাঞ্জাব থেকে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। শীত মৌসুমে প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেই কৃষকরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। যতদিন পর্যন্ত সরকার ওই তিন আইন বাতিল না করবে ততদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন।

গত ১২ জানুয়ারি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নতুন তিনটি কৃষি আইন বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ দিয়েছে।