ক্যাটাগরি

সুজনের ‘আরও মূল্যায়ন’ চান নওফেল

শনিবার রাতে নগরীর লালদীঘি পার্কে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক সুজন আয়োজিত জ্যোৎস্না উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে প্রয়াত নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত সুজন। আর নওফেল সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের বড় ছেলে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রশাসক হিসেবে সুজনের ভূমিকার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে নওফেল বলেন, “নাগরিক সেবা নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর অনেক মানুষের মনে যখন অমাবস্যা দেখা দিয়েছিল, তখন তিনি (সুজন) পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে এই শহরের মানুষের কাছে এসেছিলেন। আজ বলতে পারি, ছয় মাসে তিনি ছয় বছরের কাজ করে দলমত নির্বিশেষে সবার মনে স্থান করে নিয়েছেন।

“তিনি রাজনীতি দিয়ে গণমানুষের মনে স্থান করে নিয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে যেভাবে মানুষের সেবা করাতে চান, তার উদাহরণ সুজন। কঠিন সময়ে তিনি (সুজন) আমাদের দেখিয়ে দিয়েছেন নিষ্ঠা, একাগ্রতা আর মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলে সেটি করা অসম্ভব কিছু নয়। এর জন্য পেশী শক্তি বা বিত্তের প্রয়োজন হয় না, আন্তরিকতা প্রয়োজন হয়- সেটি আমাদের প্রশাসক মহোদয় দেখিয়ে দিয়েছেন।”

নওফেল বলেন, “নগরীর নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন নাগরিক সেবায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা করেছেন রেজাউল তার ধারাবাহিকতা রাখবেন। মত-দ্বিমত যাই থাক, মানুষের সেবার চেয়ে বড় কোনো রাজনীতি নেই। মাত্র ছয় মাসে তিনি অনেক সৃষ্টিশীল কাজ আমাদের উপহার দিয়েছেন।

“ভিন্ন মাপে, ভিন্নভাবে আরও অন্য উচ্চতায় উনার মূল্যায়ন আমরা দেখতে চাই। চট্টগ্রামের মানুষ উনাকে ভালোবেসেছে। উনি করোনা আক্রান্ত হওয়ার সময় দেখেছি, এই শহরের সর্বস্তরের মানুষ উনার সুস্থতার জন্য দোয়া করেছেন। একজন রাজনীতিবিদের জন্য মানুষের ভালোবাসার চেয়ে বড় কোনো পাওয়া নেই।”

চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য নওফেল বলেন, “আমরা নগরবাসী সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে সেবা সংস্থার সমন্বয় যেন দেখতে পাই। জনগণের প্রতিনিধির কর্তৃত্ব যেন প্রতিষ্ঠিত হয়। আমরা রাজনীতিবিদরা আসব-যাব, সেবা সংস্থাগুলোকে সব মানুষের কাজে লাগাতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বক্তব্যের আগে উপমন্ত্রী নওফেলকে ‘আমাদের সন্তান’ বলে পরিচয় করিয়ে দেন সুজন।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছর মার্চে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত হলে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজনকে প্রশাসক নিয়োগ দেয় সরকার। গত বছর ৬ অগাস্ট তিনি দায়িত্ব নেন। তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬ ফেব্রুয়ারি।

ইতোমধ্যে ২৭ জানুয়ারি হওয়া সিটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী।

প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে সুজন নগরীর বেহাল সড়ক সংস্কার, নগরীতে সৌন্দর্য্য বর্ধন প্রকল্পে হওয়া নানা অনিয়মের অনুসন্ধান, নগর সেবার ক্যারাভান চালু, খালের আবর্জনা পরিষ্কার করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। তার এসব উদ্যোগ নগরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে।

নগরীর লালদীঘির পাড়ে জ্যোৎস্না উৎসবও প্রশাসক সুজনের ব্যতিক্রম এক উদ্যোগের উদাহরণ।

‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে উছলে পড়ে আলো, ও রজনীগন্ধা তোমার গন্ধসুধা ঢালো’ শিরোনামে উৎসবের আয়োজনের কারণ ব্যাখ্যা করে সুজন বলেন, “সুপ্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রামকে বিশ্ব চেনে। এ শহরের ঋদ্ধ ঐতিহ্য আছে। চিত্তের নয়, বিত্তের শহর হোক এ চট্টগ্রাম।

“রায় বাহাদুর রাজ কুমার ঘোষ এ জমিটি দিয়েছিলেন পার্ক করার জন্য। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এ পার্ক করেন। পরে এটি মুখ থুবড়ে পড়ে। ছয় মাসের জন্য কেন এসেছিলাম, জানি না। প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব দিলেন। এ সময়ে লালদীঘিকে পুনরুদ্ধার করে সংস্কার করেছি।”

তিনি বলেন, “পাশে আছে লালদীঘি মাঠ, এখানে ছয় দফা উত্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। শহীদ মিনার, মুসলিম হল, লাইব্রেরি, লালদীঘি মাঠ, এই পার্ক সব মিলিয়ে হবে আমাদের সংস্কৃতির কেন্দ্রভূমি। আজ লালদীঘিতে দাঁড়িয়ে অনিন্দ্য জোছনা দেখব। চাই অন্তরে অন্তরে এ জোছনা গন্ধসুধা ঢালুক। করোনার দুঃসহ স্মৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে চাই।”

সুজন বলেন, “আরেকটা উৎসব ছিল, করতে পারলাম না। ঘুড়ির মেলা। যিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন উনাকে প্রাণঢালা অভিনন্দন। তিনি শিক্ষিত, সজ্জন রাজনীতিবিদ। মনে করি চট্টগ্রামের মানুষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তিনি এগিয়ে নিয়ে যাবেন।”

কাপাসগোলা সিটি করপোরেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাংস্কৃতিক দলের ‘তুমি নির্মল কর মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে’ গানের মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

এরপর তারা একে একে গেয়ে শোনায় ‘চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে’ ও ‘কর্ণফুলীর সাম্পান মাঝি আমার মন’।

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম, ড. সুমন বড়ুয়া।

জ্যোৎস্না নিয়ে আড্ডায় অংশ নেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অ্যালেক্স আলিম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সাইফুল আলম বাবু, মিলি চৌধুরী ও তানভীর শাহরিয়ার রিমন।

উৎসব উপলক্ষে ফানুস ওড়ানো হয়। তখন পার্কের সব আলো নিভে গেছে। দীঘির জলে চাঁদের ছায়া আর আগুন জ্বলা ফানুস উড়ে চলে আকাশের পানে।