ক্যাটাগরি

ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন শুনানি ৩ মাসের জন্য মুলতবি

তার জামিন আবেদনটির শুনানি তিন মাসের জন্য মুলতবি করেছে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

আদালতে জামিন আবেদনের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মুরাদ রেজা। তার সঙ্গে ছিলেন রেদওয়ান আহমেদ রানজীব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম।

আইনজীবী রেদওয়ান আহমেদ রানজীব পরে বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০১৯ সালে ২৮ নভেম্বর রায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় মোয়াজ্জেম হোসেনকে আট বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৮ আগস্ট মোয়াজ্জেম হোসেনের আপিল গ্রহণ করে। এরপর নভেম্বরে এই জামিন আবেদনটি করা হয়েছিল। আদালত জামিন না দিয়ে আবেদনটির শুনানি তিনমাসের জন্য মুলতবি করেছেন।”    

শুনানিতে মোয়াজ্জেম হোসেনের আইনজীবী মুরাদ রেজা বলেন, ‘মোয়াজ্জেম হোসেন ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেনি। তার মোবাইলে করা ওই ভিডিওটি একজন সাংবাদিক মোবাইল থেকে নিয়ে প্রকাশ করেছেন।

তাই এক্ষেত্রে ওসির কোন অপরাধ নেই। যদি অপরাধ হয় তাহলে সেটা ওই সাংবাদিকের। কারন সে ভিডিওটা প্রকাশ করেছে।

এসময় বিচারপতি হাবিবুল গনি সাংবাদিকের বলেন, অনুসন্ধিৎসু মন তো তথ্য খুঁজবেই। এতে অপরাধের কিছু দেখছি না। সাংবাদিককে সুযোগ করে দিলে সে তো তথ্য প্রকাশ করবেই।

মুরাদ রেজাকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, একজন ওসি একটি থানার দায়ীত্বশীল কর্মকর্তা। সে কোনো সাধারণ কেউ না। তাহলে সে কেন তার ব্যাক্তিগত মোবাইলে ভিডিও ধারণ করণে? আমারাতো তার ওই ভিডিও ধারণ করাটাকেই অপরাধ মনে করছি। আর বিচারিক আদালত তো এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই সাজার রায় দিয়েছেন।

সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত ২০১৯ সালের মার্চে অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন। সেসময় সোনাগাজী থানায় তার জবানবন্দি নেন তৎকালীন ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

তার কয়েক দিন পর মাদ্রাসার ছাদে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের গায়ে আগুন দিলে সারাদেশে আলোচনা শুরু হয়। তখন নুসরাতের ওই জবানবন্দির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু হলে ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল ওসি মোয়াজ্জেমকে আসামি করে ঢাকায় বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

পরিদর্শক মোয়াজ্জেমই ওই ভিডিও ছড়িয়েছেন- পিবিআইয়ের এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ মামলার বিচার শুরু হয়।

মামলার শুনানিতে আত্মপক্ষ সমর্থনে দাঁড়িয়ে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর সোনাগাজীর সাবেক ওসি নুসরাতের জবানবন্দি ভিডিও করার বিষয়টি স্বীকার করলেও বলেছিলেন, জ্ঞানতঃ তিনি কোনো অপরাধ করেননি।

কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বিচারককে বলেছিলেন, “এই অভিযোগে যত বড় শাস্তিই দেন না কেন, তার চেয়ে বড় শাস্তি আমি পেয়ে গেছি।”

বেআইনিভাবে নুসরাতের জবানবন্দির ভিডিও করার দায়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারায় মোয়াজ্জেমকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারক। আর সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ায় ২৯ ধারায় তাকে দেওয়া হয়েছে তিন বছরের কারাদণ্ড।

দুই ধারার শাস্তি একটির পর একটি কার্যকর হবে বলে মোট আট বছর জেল খাটতে হবে বরখাস্ত এই পুলিশ কর্মকর্তাকে। তবে হাজতবাসকালীন সময় নিয়ম অনুযায়ী সাজা থেকে বাদ যাবে। 

কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাকে দুই ধারায় পাঁচ লাখ করে মোট দশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার এই টাকা নুসরাতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। আর ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে আরও ছয় মাস করে মোট এক বছর সাজা খাটতে হবে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রীমা সুলতানা ২০১৯ সালের ২৭ মে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলে ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

আগাম জামিনের চেষ্টায় পরে ওই বছরের ১৬ জুন গোপনে হাই কোর্টে গিয়েছিলেন ওসি মোয়াজ্জেম। কিন্তু শুনানি হওয়ার আগেই পুলিশ শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।

১৭ জুন সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে জমিন নাকচ করে এই পুলিশ কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পরে ওই বছরই ১৭ জুলাই আদালত আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়।

মামলার বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, নুসরাতের মা, ভাই ও দুই বান্ধবী, দুই পুলিশ সদস্য ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১২ জন এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন। আসামিপক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষী এ মামলায় ছিল না।

নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় তার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড দেয় ফেনীর নারী ও শিশুনির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। সেই রায় ডেথ রেফারেন্স হিসেবে শুনানির জন্য ইতোমধ্যে হাই কোর্টে গেছে।