করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে গত বছরের ২৯ জুলাই ২০২০-২১ অর্থবছরের যে
মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতে মোট অভ্যন্তরীণ
ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। সংশোধন করে তা ১৭ দশমিক ৪ শতাংশে
নামিয়ে আনা হয়েছে।
মুদ্রানীতির এই পরিবর্তনে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ১৪
দশমিক ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৪৪ দশমিক ৪ শতাংশ
থেকে কমিয়ে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
গত ৩১ জানুয়ারি গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে মনিটারি পলিসি কমিটির ৫০তম সভায়
২০২০-২১ অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে এ সব পরিবর্তনসহ আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে
জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনীতির সামষ্টিক চলকসমূহের সর্বশেষ পরিস্থিতি (আউটকাম) ও
স্বল্প মেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি (আউটলুক) পর্যালোচনা করে চলতি অর্থবছরের ঘোষণা করা
সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রেখে অবশিষ্ট সময়ের জন্য মুদ্রা ও ঋণ
কর্মসূচিতে মধ্য-মেয়াদী পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে।
সেখানে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মুদ্রা
তহবিল প্রকাশিত সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক আউটলুক (জানুয়ারি ২০২১), বৈশ্বিক শিল্পোৎপাদন, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং ও বৈশ্বিক বাণিজ্যের মাসিক
চিত্র (ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত) এবং রয়টার্স প্রকাশিত দৈনিক (২১ জানুয়ারি ২০২১
পর্যন্ত) স্বর্ণ ও অপরিশোধিত তেলের দামের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে মনিটারি পলিসি
কমিটির সভায় এই মত প্রকাশ করা হয় যে “কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক
কর্মকাণ্ড ২০২১ সালের মধ্যে অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত
দিচ্ছে।
“তবে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির
প্রকৃত খাতের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তের পর্যালোচনা, আমদানি-রপ্তানিসহ সার্বিক চাহিদা পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ইকোনোমিক
মডেলিং অ্যান্ড ফোরকাস্টিং অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি
সরকারের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রয়েছে, যা বছরের শুরুতে ৮ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে প্রক্ষেপণ করা
হয়েছিল।”
বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের এফএও প্রকাশিত পণ্যের (এনার্জি ও নন-এনার্জি)
মূল্যসূচক এবং খাদ্য (চালসহ) মূল্যসূচকের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে সভায় বলা হয়, নিকট ভবিষ্যতে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বৃদ্ধি পেতে
পারে। সে হিসেবে দেশেও মূল্যস্ফীতির উপর চাপ আসতে পারে।
মহামারীকালে অর্থ জোগান বাড়াতে রেপো হার কমিয়ে নতুন মুদ্রানীতি
সরকার ইতোমধ্যে চাল আমদানির ওপর থেকে শুল্ক কমানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ায়
বর্তমানে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিন্মমুখী এবং আপাতত চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা
অনুযায়ী গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে সীমিত থাকবে বলে সভায় আশা প্রকাশ
করা হয়।
গত ডিসেম্বরের তথ্য বিশ্লেষণ করে সভায় দেখানো হয়, রেমিটেন্স অন্তঃপ্রবাহের জোরালো প্রবৃদ্ধি এবং আমদানি ব্যয়
উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণে চলতি অর্থবছরে নিট বৈদেশিক সম্পদ
উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ অবস্থায়, সম্প্রসারণমূলক
মুদ্রানীতি ভঙ্গি অব্যাহত রেখেই নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি এবং নিট
অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে চলতি অর্থবছরের মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে
মধ্য-মেয়াদে পরিবর্তন আনা সমীচীন হবে বলে সভায় মত দেওয়া হয়।
সরকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৮ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশে
নামিয়ে আনায় অর্থনীতিতে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির নিরাপদ সীমাও কিছুটা সংশোধন করে
১৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশে
নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
তবে করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে নিকট ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক
হওয়ার সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ১৪
দশমিক ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
মুদ্রানীতির মুদ্রা ও ঋণ কর্মসূচিতে মধ্যমেয়াদে আরও কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
বৈদেশিক লেনদেন খাতের সম্ভাব্য গতিধারা বিবেচনা করে ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের অন্যতম
উপাদান ব্যাংক ব্যবস্থার নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮
শতাংশ। তা সংশোধন করে ২০ দশমিক ১ শতাংশ করা হয়েছে।
এছাড়া নীট অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৩ দশমিক
৬ শতাংশ করা হয়েছে। আর ব্যাপক মুদ্রা সরবরাহের প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে
কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।