ক্যাটাগরি

অভিজিৎ হত্যার রায় ১৬ ফেব্রুয়ারি

দুই পক্ষের যুক্ততর্ক শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ মামলার রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করে দেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন- সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াউল হক ওরফে জিয়া, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস্), আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ এবং  উগ্রপন্থি ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী।

আসামিদের মধ্যে ফারাবী ছাড়া বাকি সবাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে তদন্তকারীদের ভাষ্য। জিয়া ও আকরাম পলাতক আছেন, বাকি সবাই কারাগারে।

আদালতে অভিজিৎ হত্যার আসামিরা

আদালতে অভিজিৎ হত্যার আসামিরা

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সামনে জঙ্গি কায়দায় হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অভিজিৎ রায়। চাপাতির আঘাতে আঙুল হারান তার স্ত্রী।

পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎ থাকতেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখির পাশাপাশি মুক্তমনা ব্লগ সাইট পরিচালনা করতেন তিনি। জঙ্গিদের হুমকির মুখেও তিনি বইমেলায় অংশ নিতে দেশে এসেছিলেন।

ঘটনার পর শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন অধ্যাপক অজয় রায় (বর্তমানে প্রয়াত)। ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হাত ঘুরে মামলাটির তদন্তভার কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে যায়।

হত্যাকাণ্ডের চার বছর পর ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ ছয়জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম। অভিযোগের পক্ষে ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।

ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইবুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান ওই বছর ১ অগাস্ট অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ মামলার ছয় আসামির বিচার শুরুর আদেশ দেন।

অভিযোগপত্রে নাম থাকা রাষ্ট্রপক্ষের ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর কারাগারে থাকা চার আসামি গত ২৭ জানুয়ারি আদালত নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। 

এরপর গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে যুক্তিতর্ক শেষ করেন। বৃহস্পতিবার আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক রায়ের দিন ঠিক করে দেন।

অভিজিৎ হত্যা: আসামিদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে যুক্তিতর্ক শেষ রাষ্ট্রপক্ষের
 

অভিজিৎ হত্যায় জিয়া-ফারাবীসহ ৬ জনের বিচার শুরুর আদেশ

জিয়ার নির্দেশেই বইমেলায় অভিজিতকে হত্যা: অভিযোগপত্র

বইমেলার বাইরে হামলায় লেখক অভিজিৎ নিহত

অভিজিৎ রায়

অভিজিৎ রায়

যুক্তিতর্কের শেষ দিন যা হল

বৃহস্পতিবারে শুনানিতে বেশিরভাগ সময় নেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। পরে রাষ্ট্রপক্ষ   তাদের বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ পান।

আসামি শাফিউর রহমান ফারাবীর পক্ষে শুনানি করেন ঢাকা জেলা আইন সহায়তা সংস্থা (ঢাকা জেলা লিগ্যাল এইড) থেকে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী। পরে ফারাবী নিজেই বক্তব্য দেন।

আত্মপক্ষ সমর্থনে যে লিখিত বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার পুনরাবৃত্তি করে এ মামলার দায় থেকে খালাস চান ফারাবী।

বিচারক তাকে বলেন, “‘নাস্তিকরা পোকা মাকড়ের মত, তাদের মেরে ফেলা উচিৎ।’- আপনার এ লেখায় এ মামলার আসামিসহ অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে আদালতে কোনো প্রমাণ তো হাজির করতে পারেননি। আপনার বিরুদ্ধে তো প্ররোচনার দায় রয়েছে। চালাকি করে লাভ নেই।”

ফারাবী তখন বলেন, “আমার একমাত্র সৎ বোন ছাড়া আর কেউ নেই। আমি অসহায়, টাকা পয়সা নেই। আমার সৎ বোন আমার খরচ দেয় না। কারাগারে কেইস পার্টনারদের আত্মীয় স্বজনরা কত কিছু পাঠায়, আমাকে কেউ কিছু দেয় না।”  

আসামি আরাফাত রহমান সাজ্জাদ ওরফে শামস ওরফে সিয়াম তার আইনজীবীর মাধ্যমে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে খালাস চান। খালাস চান আসামি মোজাম্মেল হোসেন সায়মনও।

সায়মনের আইনজীবী নজরুল ইসলাম মাঝখানে বিরতি দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে বক্তব্য দেন। তার সার কথা ছিল-“রাষ্ট্রপক্ষ মামলা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছে।”

তিনি বলেন “তদন্তে ত্রুটি রয়েছে। ঘটনার কোনো চাক্ষুস সাক্ষী নাই। কোনো পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য ঘটনা প্রমাণ করেনি। শুধুমাত্র ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে   সাজা দেওয়া যায় না।”

এর আগে আরাফাত ও আবু সিদ্দিক সোহেলের আইনজীবী খায়রুল ইসলাম লিটন তার মক্কেলদের খালাস চেয়ে বিভিন্ন আইনি যুক্তি তুলে ধরেন।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গোলাম ছারোয়ার খান জাকির উচ্চ আদালতের কয়েকটি সিদ্ধান্ত তুলে ধরে আসামিদের বক্তব্য খণ্ডন করেন এবং যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করেন।

আসামিদের কয়েকজনের স্ত্রী-কন্যা এবং আত্মীয়-স্বজন এ সময় এজলাসে হাজির ছিলেন।

অভিজিতের ছোট ভাই অনুজিৎ রায় রায়ের দিন ঠিক হওয়ার প্রতিক্রিয়ায়
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আশা করব, নিরাপরাধীরা যেন শাস্তি না পায়, আর প্রকৃত অপরাধীরা যেন সাজার আওতায় আসে।

নিশ্চয়ই বিচারে  তা উঠে এসছে। বিচারক এটা দেখে বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করেই রায় দেবেন। আমরা চাই, অভিজিতের প্রকৃত হত্যাকারীদের শাস্তি।

অভিজিৎ ও বন্যা এবং তাদের অনুসরণকারী

অভিজিৎ ও বন্যা এবং তাদের অনুসরণকারী

পুলিশের সিসিটিভি ভিডিওতে দুই সন্দেহভাজন

পুলিশের সিসিটিভি ভিডিওতে দুই সন্দেহভাজন

যা ছিল অভিযোগপত্রে

বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দেওয়া ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে ২০১৯ সালে জমা দেওয়া সিটিটিসির অভিযোগপত্রে বলা হয়, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে ১২ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেলেও তাদের মধ্যে পাঁচজনের পূর্ণfঙ্গ নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। একজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যাওয়ায় অভিযোগপত্রে আসামি করা হয়েছে মোট ছয়জনকে। আসামিরা জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আগের নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা জিয়ার ‘নির্দেশেই’ সেদিন অভিজিতের ওপর হামলা হয় বলে উল্লেখ করা হয় অভিযোগপত্রে।

সেখানে বলা হয়, আসামি মোজাম্মেল, আকরাম, হাসান ও আবু সিদ্দিক হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের ১৯২/২ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে অভিজিৎ রায়কে বিভিন্ন স্থানে অনুসরণসহ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করেন।

আসামি মোজাম্মেল রেকি টিমের নেতৃত্বে থেকে অপারেশন শাখার মুকুল রানা ওরফে শরিফুলকে অনুসরণসহ এ হত্যাকাণ্ডের সার্বিক সহযোগিতা এবং আসামিদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেন।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অপারেশন শাখার সদস্য আসামি আরাফাত রহমান, আলী ওরফে খলিল, অনিক এবং অন্তু সাংগঠনিকভাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন টার্গেট ব্যক্তিকে হত্যা করার।

সিসি ক্যামেরায় অভিজিতের ‘খুনি’

অভিজিৎ হত্যায় সন্দেহভাজনদের নতুন ভিডিও

অভিজিৎ রায়

অভিজিৎ রায়

অভিজিৎকে তারা চারজনই চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন বলে অভিযোগপত্র বলা হয়। এসময় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও চাপাতির আঘাতে একটি আঙুল হারান।

অপারেশন শাখার চারজন আসামি যাতে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারে তার জন্য চারপাশে বেষ্টনি করে রাখে আসামি জিয়া, সেলিম, মুকুল রানা, মোজাম্মেল, আবু সিদ্দিক ও আকরাম।

আসামিদের মধ্যে মারা যাওয়ার কারণে মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন তিনজন। মান্না ইয়াহিয়া ওরফে মান্নান রাহি ও আবুল বাশার চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান।

হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়া দলটির নেতৃত্বে থাকা মুকুল রানা ওরফে শরিফুল ২০১৬ সালের ১৯ জুন ঢাকার খিলগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।

উগ্রপন্থি ব্লগার সরাসরি ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও ফেইসবুকে পোস্ট দিয়ে অভিজিৎ রায়কে ‘হত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন’ বলে তাকেও এ মামলায় আসামি করা হয়।

 

পুরনো খবর


সাক্ষ্য দিলেন অভিজিতের বাবা
 

‘আমার বাবা অভিজিৎ রায়’
 

চলে গেলেন অভিজিতের বাবা অজয় রায়

কেউ আমাকে সাক্ষ্য দিতে বলেনি: বন্যা

‘হামলার সময় দাঁড়িয়ে দেখছিল পুলিশ’