বাংলাদেশ লিড নিয়েছে ১৭১ রানের। সাকিব আল হাসানের বোলিং ছাড়াই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অলআউট করা গেছে ২৫৯ রানে। ইয়াসিরের ভুলগুলো তাই খুব বড় হয়ে ফুটে উঠছে না। অথচ সুযোগগুলোর অর্ধেক তিনি নিতে পারলেও বাংলাদেশের লিড হতে পারত আরও বেশি। কিংবা, তার না পারায় অনেক বড় খেসারত দিতে হতে পারত দলকে।
৬৮ রান করা জার্মেইন ব্ল্যাকউড ফিরতে পারতেন ২ ও ৪৩ রানে। দুবারই তিরি রক্ষা পান ইয়াসিরের ব্যর্থতায়। ৪২ রানের ইনিংসে জশুয়া দা সিলভা ৫ ও ১৭ রানে বেঁচে যান ইয়াসিরের বদান্যতায়। এই দুজনের জুটি বাংলাদেশকে উইকেটবিহীন রাখে ৪২ ওভারের বেশি।
সাধারণ হিসেবে ‘জীবন’ নয় কোনোটিই, কারণ ইয়াসির একবারও হাত লাগাতে পারেননি বলে। কিন্তু প্রতিটিই ছিল ভালো সুযোগ!
সুযোগ তার সামনে এসেছিল আরও কয়েকটি। কোনোটি ‘হাফ চান্স’, কোনোটি কঠিন। হাতে জমে না গেলে সেসব ধরে ফেলা সম্ভব নয়। কিন্তু ওই চারটি ছিল ধরার মতোই। ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে অমন ক্যাচ টেস্টে হরহামেশাই দেখা যায়।
ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ বা ব্যাটসম্যানের কাছ ঘেঁষে অন্য জায়গাগুলিতে ফিল্ডিং করার কাজটি এমনিতে খুব সহজ নয়। এখানে দাঁড়াতে সাহস যেমন থাকতে হয়, তেমনি এখানকার উপযুক্ত বাসিন্দা হয়ে উঠতে প্রয়োজন দুর্দান্ত রিফ্লেক্স, প্রবল অনুমানশক্তি, গভীর মনোযোগ, দীর্ঘক্ষণ নীচু হয়ে থাকা ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সাড়া দেওয়ার মতো ফিটনেস এবং প্রচুর প্রাণশক্তির। এটি তাই স্পেশালিস্টের জায়গা।
মুমিনুল দীর্ঘসময় ক্লোজ-ইন পজিশনে ফিল্ডিং করলেও আপাতত করছেন না
ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ, সিলি পয়েন্ট, সিলি মিড অন, সিলি মিড অফ, লেগ স্লিপ, এসব ক্লোজ ইন পজিশনের জন্য সব দলেই স্পেশালিস্ট ফিল্ডার আছেন। বাংলাদেশ দলে মুমিনুল হক অনেকদিন সামলেছেন এই দায়িত্ব। পুরোপুরি বিশ্বমানের না হলেও বেশ দক্ষতায় সামলেছেন। এখন তিনি অধিনায়ক। অধিনায়কেরা এই পজিশনে দাঁড়ান কমই। আপাতত কাজটি সাদমান ইসলামের। কিন্তু দ্বিতীয় দিন বিকেলে এখানে ফিল্ডিং করতে গিয়ে বলের আঘাত পাওয়ার পর তৃতীয় দিনে তাকে আর দেখা যায়নি এখানে। সাকিব আল হাসানের ঊরুর চোটের কারণে বদলি হিসেবে নামা ইয়াসিরের ওপর পড়ে সেই ভার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা এই ব্যাটসম্যানকে এখানে একদমই সাবলীল মনে হয়নি।
ইয়াসির কোনো ব্যতিক্রম নন। বরং একটি নমুনা মাত্র। বাস্তবতা হলো, এই পজিশনে সত্যিকারের বিশ্বমানের ফিল্ডার হয়তো বাংলাদেশ কেবল একজনই পেয়েছে, রাজিন সালেহ! এমনিতে তিনি সব পজিশনেই ছিলেন দারুণ। তবে ব্যাটসম্যানের কাছাকাছি ছিলেন অসাধারণ। আদর্শ ক্লোজ ইন ফিল্ডারের সবকিছুই ছিল সাবেক এই ব্যাটসম্যানের মধ্যে।
অথচ স্পিন প্রধান দেশ হিসেবে বিশ্বমানের আরও অনেক ক্লোজ-ইন ফিল্ডার বাংলাদেশের থাকার কথা ছিল। তেমন মানের ফিল্ডার নেই বলে বঞ্চিত হন স্পিনাররা, ভুগতে হয় দলকে।
এসব পজিশনে ভালো মানের ফিল্ডার কেন এখন নেই, আগেও কেন সেভাবে ছিল না, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় রাজিন সালেহই তুলে ধরলেন কারণ।
“এটা খুবই সত্যি যে সিলি পজিশনগুলোতে খুব ভালো ফিল্ডার আমরা সেভাবে পাইনি। এখনকার দলকে কাছ থেকে দেখি না। জানি না, কতটা অনুশীলন হয়। তবে আগের অভিজ্ঞতা থেকে বা এখন খেলায় যতটা দেখি, আমার মনে হয়, অনুশীলনের একটা ঘাটতি থেকে যায়। এখানে ভালো করতে হলে অনেক অনেক অনুশীলনের ব্যাপার । দলের অনুশীলনের বাইরেও অনেক সময় দিতে হবে।”
ক্লোজ-ইন ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা নিঃসন্দেহে রাজিন সালেহ।
“আমি যতটুকু ভালো ছিলাম, তাতে বড় ভূমিকা ছিল নিজে আলাদা করে অনুশীলন করার। অনেক সময় নিয়ে প্র্যাকটিস করতাম। এসব পজিশনে ভালো হতে হলে রিফ্লেক্স, অ্যান্টিসিপেশন, অ্যাজিলিটি, এসব তো দারুণ হতে হবেই। পাশাপাশি নিবিড়ভাবে প্র্যাকটিস করেও এই ব্যাপারগুলিতে উন্নতি করা সম্ভব। আমাদের ফিল্ডারদের চেষ্টা ততটা তীব্র বলে মনে হয় না।”
রাজিনের মতে, ঘাটতি আরেকটি জায়গাতেও। এসব পজিশনে ফিল্ডিং করার যে অনুরাগ, যে ভালোবাসা, সেটির অভাব দেখেন তিনি ক্রিকেটারদের মধ্যে।
“সিলিতে ফিল্ডিং করার কাজটি কিন্তু খুব কঠিন। অনেক একাগ্রতার ব্যাপার। এখানে প্যাশন থাকতে হয়। আমার সেই প্যাশন ছিল। বড় বড় ক্রিকেটারদের দেখতাম, তাদের মতো হতে চাইতাম। এজন্য অনেক কষ্ট করতাম। কিন্তু আমাদের অনেক ক্রিকেটারের সেই চেষ্টা দেখি না।”
“জাতীয় লিগের কথাই ধরুন, অনেক সময় দেখেছি, জোর করে এসব পজিশনে ফিল্ডিংয়ে পাঠানো হতো। করতে হয় বলেই দাঁড় করানো হতো কাউকে। অনেকে ভয় পায়, অনেকের বিরক্ত লাগে, উপভোগ করে না। কিন্তু ফিল্ডিং ব্যাপারটাই এমন যে উপভোগ না করলে ভালো করা কঠিন। এসব পজিশনে আরও বেশি ভালোবাসা থাকতে হয়। নাহলে কখনোই ভালো করা সম্ভব নয়।”
জাতীয় দলের অনুশীলনে ক্লোজ-ইন ফিল্ডিং নিয়ে যে কাজ হয় না, তা নয়। তবে প্রথাগত অনুশীলন, সুনির্দিষ্ট কিছু সময় দেওয়া ছাড়া বিশেষ কিছু বা এখানে লম্বা সময় দেওয়ার ব্যাপার চোখে পড়ে কমই।
রাতারাতি এখানে উন্নতি সম্ভব নয়। তবে উন্নতির প্রক্রিয়াও তো সেভাবে শুরু হয়নি! এবার হয়তো ইয়াসিরের চার ভুলেও ততটা ভুগতে হয়নি দলকে। কিন্তু চরম ভোগান্তি ঠিকই কড়া নাড়ছে দরজায়।