ক্যাটাগরি

বেসরকারি মেডিকেল: ১২০০ টাকার জায়গায় ৮ হাজারও নেওয়া হচ্ছিল

গত ২৫ জানুয়ারি প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সব মেডিকেল কলেজে অনুষ্ঠেয় ২০২০ সালের মে-নভেম্বর মাসের প্রথম প্রফেশনাল (এমবিবিএস) পরীক্ষার ফরম পূরণ ও ফি জমা দিতে বলা হয়।

এতে বলা হয়, প্রতিটি বিষয়ের জন্য পরীক্ষা ফি ১২০০ টাকা, প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর নম্বরপত্র ফি ৪৫০ টাকা। আর অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের ‘রিটেনশন’ ফি হিসেবে আরও ৭৫০ টাকা জমা দিতে হবে।

সেখানে বেশ কয়েকটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছিল, কোনো কোনো কলেজ ১২০০ টাকার জায়গায় আট হাজার টাকাও নিচ্ছিল।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহালুল হক চৌধুরী বৃহস্পতিবার বিকেলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি।

“আপনারা লেখেন। আমি ফরম ফিল-আপ স্থগিত করে দেব।”

তিনি এই কথা বলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গুলশানের সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ, ডেল্টা মেডিকেল কলেজ, ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ, কেয়ার মেডিকেল কলেজ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ এবং ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রফেশনাল পরীক্ষার জন্য অনলাইনে ফরম পূরণ সাময়িকভাবে স্থগিতের ঘোষণা দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মেডিকেল শিক্ষার্থীদের প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষা (২০২০ সালের মে, নভেম্বর) শুরু হবে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে, শেষ হবে ৭ মার্চ।

এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মেডিকেল কলেজগুলো। সেখানে সাহাবউদ্দিন, কুমুদিনী, বাংলাদেশ মেডিকেল, ডেল্টা মেডিকেল, ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল ও কেয়ার মেডিকেলে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হচ্ছিল। আর উত্তরা আধুনিক ও ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষার ফি হিসেবে বাড়তি অর্থ আদায়ের তথ্য পাওয়া যায়।

সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজে ২৭ জানুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফরম ফিল-আপের ফি জমা দিতে বলা হয়।

সেখানে এক বিষয়ের জন্য ৮০০০, দুই বিষয়ের জন্য ১৬০০০ এবং তিন বিষয়ের জন্য ২৪০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছিল। ডিন অফিস ফি বাবদ আরও ৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছিল। আর যারা অনিয়মিত শিক্ষার্থী তাদের আরও ২০০০ টাকা অতিরিক্ত দিতে বলা হয়।

নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত আদায় না করতে গত ২৭ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করেন পরীক্ষার্থীরা।

সেখানকার প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষার একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, দুটি বিষয়ের ফি হিসেবে তার কাছ থেকে ১৬৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে।

ফি কমাতে ‘অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করেও’ কোনো লাভ হয়নি বলে জানান তিনি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. জাফরুল্লাহ বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি এখন বাইরে আছি। ডকুমেন্টটা হাতের কাছে নেই। পরে কথা হবে। আপনি সকাল ৯টার পর ফোন করেন, অফিস টাইমে।”

কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রতি বিষয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত পরীক্ষার ফি ১২০০ টাকা এবং নম্বরপত্র ফি হিসেবে ৪৫০ টাকা নিচ্ছিল। এর সঙ্গে কেন্দ্র ফি ৩৫৩০ টাকা, অ্যাপ্লিকেশন ফরম চার্জ ১২০ টাকা এবং ডিন অফিস ফি হিসেবে আরও ৩০০ টাকা ধরা হয়েছিল। সে হিসেবে তিন বিষয়ের জন্য নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছিল ৮ হাজার টাকা করে।

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার ফি জমা দিতে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দেয়। তারা এক বিষয়ে ৪৫০০, দুই বিষয়ে ৫৫০০ এবং তিন বিষয়ের জন্য ৬৫০০ টাকা জমা দিতে বলে।

ডেল্টা মেডিকেল কলেজে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের তিন বিষয়ের জন্য ১০ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছিল। এই মেডিকেল কলেজে অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এক বিষয়ের জন্য ৭৫০০, দুই বিষয়ে ৯৫০০ এবং তিন বিষয়ে ১১,৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছিল।

ইস্টওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের প্রতি বিষয়ের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ফির সঙ্গে আরও ৬০০০ টাকা যোগ করা হয়েছিল কেন্দ্র ফি হিসেবে।

জানতে চাইলে এই মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. জাফর উল্লাহ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “ইউনিভার্সিটি যা নির্ধারণ করে দিয়েছে তাই নেওয়া হচ্ছে। আমরা নোটিশও দিয়ে দিয়েছি।”

তবে কেন্দ্র ফি হিসেবে ৬০০০ হাজার টাকা কেন নেওয়া হচ্ছিল, সে বিষয়ে তার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

কেয়ার মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ এক বিষয়ের জন্য ৭০০০, দুই বিষয়ের জন্য ৯ হাজার এবং তিন বিষয়ের জন্য ১১০০০ টাকা করে নিচ্ছিল।

ইউএস-বাংলা মেডিকেল কলেজে তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষার ফরম পূরণে এক বিষয়ের জন্য ৩৪০০ টাকা, দুই বিষয়ের জন্য ৭৫০০ টাকা, তিন বিষয়ের জন্য ৮৫০০ টাকা করে আদায় করছিল। গত ডিসেম্বরেই টাকা আদায়ের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল তারা।

এই মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, প্রায় সব মেডিকেল কলেজেই নির্ধারিত ফির চেয়ে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ হয়ত ১-২ হাজার টাকা বেশি নিচ্ছে, আবার কেউ আরও বেশি নিচ্ছে। আমি এখানে সম্প্রতি থার্ড প্রফ পরীক্ষা দিয়েছি। সেখানে ডিন অফিস থেকে ফি নির্ধারণ করা ছিল ৪ হাজার ৭০০ টাকা। কিন্তু আমার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে সাড়ে নয় হাজার করে। আরও বেশিও আছে। আমাদের মেডিকেলে প্রথম প্রফের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, সেখানেও বেশি নেওয়া হচ্ছে।”

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষার প্রতি বিষয়ের জন্য ৩৮০০, দুই বিষয়ে ৫০০০ এবং তিন বিষয়ের জন্য ৬২০০ টাকা করে ফি নিচ্ছিল।

অনলাইনে ফরম পূরণ সাময়িকভাবে স্থগিত করে জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের নিজেদের কলেজে যোগাযোগ করতে বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে ৫৩টি।