ক্যাটাগরি

স্পিন ত্রয়ীর নৈপুণ্যে বাংলাদেশের বড় লিড

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনে তৃতীয় সেশনের শুরুর দিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংসে অলআউট ২৫৯ রানে। বাংলাদেশের লিড ১৭১ রানের।

ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর বল হাতেও বাংলাদেশের সফলতম বোলার মিরাজ। এই অফ স্পিনারের শিকার ৪ উইকেট। তাইজুল ও নাঈমের শিকার দুটি করে।

প্রথম দুই দিনের চেয়ে অনুমিতভাবেই উইকেটে এ দিন টার্ন মিলেছে অনেক বেশি। বাংলাদেশের স্পিনাররা তা কাজেও লাগান। তবে পাশাপাশি দারুণ কিছু ডেলিভারির পাশাপাশি প্রচুর আলগা বলও করেন তারা, যেটির ফায়দা নেন ক্যারিবিয়ানরা। আড়াইশ পেরিয়ে যান তারা কেবল ৫ উইকেট হারিয়েই। তবে এরপর নাটকীয় ধসে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে ব্যাটিং।

ইনিংসের শেষের মতো দিনের শুরুটাও বাংলাদেশের জন্য ছিল দারুণ। ২ উইকেটে ৭৫ রান রান নিয়ে দিন শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের দিন গড়া ব্র্যাথওয়েট ও এনক্রুমা বনারের ৫১ রানের জুটি নতুন দিনে এগোতে পারেনি এক ধাপও। তাইজুলের করা দিনের প্রথম বলেই বনার ক্যাচ দেন ম্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে।

ওই ওভারেই ধরা দিতে পারত আরেক উইকেট। নতুন ব্যাটসম্যান কাইল মেয়ার্স সুযোগ দেন তৃতীয় বলেই। কিন্তু উইকেটের পেছনে ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস। তার কাছ থেকে ফসকে আসা বল প্রথম স্লিপে লুফে নিতে পারেননি শান্তও।

এরপর বাংলাদেশের বাজে বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে অভিষিক্ত মেয়ার্স খেলতে থাকেন একের পর এক শট। রানের চাকাও ঘুরতে থাকে দ্রুত। ৪৯ রানে দিন শুরু করা অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটও এগোতে থাকেন স্বচ্ছন্দে।

আগের দিন দারুণ বোলিং করা মুস্তাফিজুর রহমান ২ ওভারে দেন ১৮ রান। তাইজুল, নাঈমও শর্ট বল করেন প্রচুর। ব্র্যাথওয়েট-মেয়ার্স জুটির পঞ্চাশ আসে ৬৫ বলেই।

শেষ পর্যন্ত দারুণ টার্নিং এক বলে এই জুটিতে ৫৫ রানে থামান নাঈম। অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে পিচ করা বল তীক্ষ্ণভাবে অনেকটা টার্ন করে ঢোকে ভেতরে। অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে যাবে ভেবে ছেড়ে দেন ব্র্যাথওয়েট। বল ছোবল দেয় স্টাম্পে। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক থামেন ১২ চারে ১১১ বলে ৭৬ রান করে।

এরপর নতুন ব্যাটসম্যান জার্মেইন ব্ল্যাকউডকে ফেরানোর দুটি সুযোগ পায় বাংলাদেশ। শূন্য রানেই নাঈমের বলে তার ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন। নাঈমের বলেই ২ রানে শর্ট লেগে ক্যাচ নিতে পারেননি বদলি ফিল্ডার ইয়াসির আলি চৌধুরি।

এসবের ফাঁকেও অবশ্য ধরা দেয় উইকেট। এ দিন নিজের প্রথম ওভারেই মেয়ার্সকে ৪০ রানে থামান মিরাজ।

সাতে নামা কিপার ব্যাটসম্যান জশুয়া দা সিলভাকেও দ্রুত ফেরাতে পারতেন মিরাজ। কিন্তু তার ৫ রানে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে আপাত সহজ ক্যাচটি নিতে পারেননি ইয়াসির।

সুযোগ হাতছাড়ার সেই মহড়া চলতে থাকে পরের সেশনেও। জশুয়ার ১৭ রানে ইয়াসির ক্যাচ নিতে পারেননি আবার, ২৪ রানে স্লিপে তার সহজ ক্যাচ ছাড়েন শান্ত। ব্ল্যাকউডের ৪৩ রানেও এসেছিল সুযোগ, ইয়াসির পারেননি যথারীতি।

৪২ ওভারের বেশি টিকে থাকা এই জুটিতে শেষ পর্যন্ত ভাঙন ধরান নাঈম। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে ৪২ রানে ফেরেন জশুয়া। জুটির রান তখন ৯৯।

এই আউটেই শুরু ক্যারিবিয়ানদের ধসের। পরের ওভারেই বাজে শটে ৬৮ রানে বিদায় নেন ব্ল্যাকউড। মিরাজের লেগ স্টাম্পের বাইরে থাকা বল ব্যাটে হালকা ছুঁয়ে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে।

চা বিরতির পর মিরাজকে ছক্কা মারার চেষ্টায় উইকেট উপহার দেন কেমার রোচ। মিরাজের বলেই রাকিম কর্নওয়াল বোল্ড হন এলেমেলো শটে।

তাইজুল শেষ উইকেটটি নেওয়ায় মিরাজ করতে পারেননি সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেটের ডাবল। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তো সুযোগ থাকলই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৪৩০

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৭৫/২) ৯৬.১ ওভারে ২৫৯ (ব্র্যাথওয়েট ৭৬, বনার ১৭, মেয়ার্স ৪০, ব্ল্যাকউড ৬৮, জশুয়া ৪২, কর্নওয়াল ২, রোচ ০, ওয়ারিক্যান ৪, গ্যাব্রিয়েল ০*; মুস্তাফিজ ১৫-৪-৪৬-২, সাকিব ৬-১-১৬-০, মিরাজ ২৬-৯-৫৮-৪, তাইজুল ৩৩.১-১১-৮৪-২, নাঈম ১৬-১-৫৪-২)।