কয়েক মাস ধরে চলা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে কৃষি সংস্কার আইন বাতিলে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন তারা।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, উত্তর ভারতের ধান ও গম উৎপাদনকারী কৃষকরা প্রাথমিক প্রতিবাদ শুরু করে দিল্লির প্রান্তে জড়ো হলেও দেশজুড়ে তাদের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে সেসব রাজ্যগুলোতে যেগুলো বিজেপি শাসিত নয়।
দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের ছাড় দিতে রাজি হলেও গত বছর পাস করা তিনটি আইন বাতিল করার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। কৃষিখাতে নতুন বিনিয়োগের জন্য এসব আইন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়ে আসছে তারা।
ভারতের দুই দশমিক নয় ট্রিলিয়ন অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশ কৃষিখাতের অবদান এবং দেশটির প্রায় অর্ধেক কর্মজীবী মানুষ এখাতে নিয়োজিত।
কিন্তু কৃষির এসব সংস্কার তাদের বড় বড় কর্পোরেট ক্রেতাদের কৃপানির্ভর করে তুলবে বলে শঙ্কা কৃষকদের। এটি ধান ও গমের মতো খাদ্যশস্যের সরকারি নির্ধারিত মূল্যের বিষয়টির অবসান ঘটাবে বলে মনে করছেন তারা।
শনিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নয়া দিল্লি ও পাশ্ববর্তী কয়েকটি রাজ্য বাদে সারা দেশজুড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী ‘চাক্কা জ্যাম’ বা সড়ক অবরোধ শুরু করেন আন্দোলনকারী কৃষকরা।
কৃষক আন্দোলনের অন্যতম নেতা যোগেন্দ্র যাদব টুইটারে বলেছেন, “আজ পুরো সমাজের সমর্থন কৃষকদের সাথে রয়েছে। জয় নিশ্চিত।”
রাজধানীর নয়া দিল্লির কাছে একটি সড়কে অবস্থানরত কৃষকরা হুক্কা পান করছিলেন, তখন মাইকে গান বাজছিল।
উড়িষ্যা ও কর্নাটকে সড়ক অবরোধ করে বসে থাকা কৃষকরা ব্যানার ও পতাকা হাতে নিয়ে কৃষি আইন বিরোধী শ্লোগান দেয়। তাদের হাতে থাকা কয়েকটি প্ল্যাকার্ডে তাদের ‘শত্রুজ্ঞান’ না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে নয়া দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থান নেওয়া প্রায় লাখো কৃষক তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে জাতীয় মহাসড়কগুলোতে রাত কাটাচ্ছেন। তারা এ পর্যন্ত প্রায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসলেও ২৫ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লিতে ট্রাক্টর র্যালি কর্মসূচী চলাকালে কিছু কৃষক পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
তারপর থেকে কর্তৃপক্ষ দিল্লির আশপাশে কৃষকদের অবস্থানস্থলগুলো ঘিরে ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছে এবং তাদের রাজধানীতে প্রবেশ ঠেকাতে প্রবেশপথগুলোতে ব্যাপক সড়ক অবরোধ বসিয়েছে।
ইতোমধ্যে ভারতের কৃষকদের এই আন্দোলন প্রতি বিশ্বের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। পপ তারকা রিয়ানা ও পরিবেশ আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গ কৃষকদের এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র কৃষকদের সঙ্গে ফের আলোচনা শুরুর জন্য নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।