কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের মদনেরগাঁওয়ের বিল্লাল হোসেনের দুই পা কেটে ফেলতে হয় ১২ বছর আগে।
এরপর জীবন চালাতে আর পরিবার-পরিজনের মুখে দুই বেলা খাবার জোগাতে স্বল্প পরিসরে জমিতে নানা ধরনের শস্য আবাদ শুরু করেন তিনি।
বর্তমানে দুই একর জমিতে মৌসুমী নানা জাতের সবজি আবাদ করছেন জানিয়ে বিল্লাল বলেন, “আমি পেশায় কৃষক। অনেক কষ্ট করে আজকে জীবনের এই প্রান্তে এসেছি। ১২ বছর আগে কৃষি জমিতে কাজ করতে গিয়ে পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হই। ঢাকায় গিয়েও চিকিৎসা নিই। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কুষ্ঠ রোগের কারণে দুই পায়ে বেশি জটিলতা দেখা দেওয়ায় এক পর্যায়ে কেটে বাদ দিতে হয়।
“এরপর থেকে পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। পরিবারের বোঝা না হয়ে নিজেই এগিয়ে যেতে চাই। সংসারের অভাব দূর করতে অন্যের জমিতে বর্গাচাষ করছি। বর্তমানে আমি ২ একর জমিতে নানা ধরনের শস্যের আবাদ করছি।”
শত প্রতিকূলতার মাঝেও নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন বিল্লাল। সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী বা বয়স্ক ভাতা পেলে কৃষি কাজের মাধ্যমে নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
দুই একর জমিতে টমেটো, আলু, শাক, মুলা, আখসহ নানা মৌসুমী শস্যের আবাদ করেন এই কৃষক।
বিল্লাল বড় হয়েছেন অভাবের সংসারে। আর তার নিজের সংসারে স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
দুই ছেলে জাকির গাজী ও হোসেন গাজী এলাকায় মোটর মেকানিকের দোকানে কাজ করেন। বাকি দুই ছেলের মধ্যে জাহাঙ্গীর গাজী ঢাকায় মাছ ব্যবসা ও আখের গাজী বিস্কুট কারখানায় কাজ করেন।
বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, “অভাবের সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে পা হারানো স্বামী অনেক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। অনেক কষ্ট করে বর্গাচাষে জমিতে ফসল ফলাচ্ছেন।”
ছেলে জাকির হোসেন বলেন, “১২ বছর আগে জমিতে কাজ করতে গিয়ে বাবার পায়ে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, কিন্তু পা দুটি রক্ষা হয়নি। এখন দুই পা ছাড়াই কৃষি কাজ করছেন। সংসারে বাবার পাশাপাশি আমরাও চেষ্টা করি বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে।”
মদনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কাওসার মিজি বলেন, বিল্লালের দুই পা না থাকলেও তিনি থেমে থাকেননি। কঠোর পরিশ্রম করে বর্গা জমিতে নানা ধরনের শস্য ফলাচ্ছেন তিনি।
একই এলাকার বাসিন্দা হাবিব মুন্সী বলেন, “প্রতিবন্ধী বিল্লাল নিজের প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছেন। তাকে ভিক্ষাবৃত্তি বা কারো কাছে কখনও হাত পাততে দেখিনি।”
বিল্লালকে সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বালিথুবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সফিকুর রহমান বলেন, “বিল্লালকে প্রতিবন্ধী বা বৃদ্ধ ভাতার মাধ্যমে সহায়তা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাকে সরকারিভাবে সহায়তা করা যাচ্ছে না।”
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অসীম চন্দ্র বণিক বলেন, দৃঢ় মনোবলে জীবন-সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়া এই প্রতিবন্ধী সরকারি সহায়তা পেলে আরও উন্নত জীবনযাপন করতে পারবেন। বিল্লাল কোনো ধরনের সহায়তা চাইলে তাকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন বলেন, “আমরা কৃষিকাজে কৃষকদের সব ধরনের সহায়তা করে থাকি। শারীরিক প্রতিবন্ধী কোনো কৃষক যদি আমাদের কাছে সহায়তা চায়, তাহলে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”