স্টেট ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের বরাত দিয়ে ভাতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানায়, ‘‘উত্তরাখণ্ডের আকস্মিক বন্যায় সাতজন নিহত, ছয় জন আহত এবং প্রায় ১৭০ জন নিখোঁজ রয়েছেন।”
নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ত্রিভেন্দ্র সিং রাওয়াত। তিনি নিহতের প্রত্যেকের পরিবারকে চার লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে, নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এনটিপিসি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নয়শ’ মিটার লম্বা তপোবন টানেলে উদ্ধার কাজ স্থগিত করা হয়েছে বলে পিআইবিকে জানিয়েছেন উত্তরাখণ্ডের ডিজিপি অশোক কুমার।
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় রোববার ওই ধসের পর ধউলিগঙ্গা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় আশপাশের অনেকগুলো গ্রাম প্লাবিত হয় বলে জানায় ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
শীতের মধ্যে হিমালয়ের পাদদেশের ওই এলাকায় যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে, তখন কী করে এই বিশাল বরফের চাঁই ধসে পড়ল, তার সুনির্দষ্ট কারণ বিশেষজ্ঞরাও খুঁজে পাচ্ছেন না। তবে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এর কারণ হতে পারে বলে কারও কারও ধারণা।
এনডিটিভি জানায়, এরইমধ্যে স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ) জোশীমঠ এলাকায় উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে।
ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) সদস্যরাও দেরাদুন থেকে জোশীমঠের পথে রওয়ানা হয়েছেন বলে জানান এনডিআরএফ মহাপরিচালক এসএন প্রধান।
তিনি বলেন, ‘‘আমরা এনডিআরএফ-র আরো তিন/চারটি দল দিল্লি থেকে আকাশ পথে দেরাদুন পাঠাচ্ছি। সেখান থেকে তারা জোশীমঠে যাবে।”
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছয়টি দলে প্রায় ছয়শ সেনাসদস্যও বন্যা দুর্গত এলাকার দিকে রওয়ানা হয়েছেন। চিকিৎসকদের দুইটি এবং প্রকৌশলীদের একটি দলও রিনগি গ্রামে রওয়ানা হয়েছে বলে জানায় এনডিটিভি।
রোববার সকালে হিমবাহটি যখন বাঁধের উপর ধসে পড়ে তখন কাছের এনটিপিসি বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র এবং ঋষিগঙ্গা বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রে প্রায় ১৬০ জন কর্মী কাজ করছিলেন। প্রচণ্ড পানির তোড়ে তারা সবাই ভেসে গেছেন। যাদের অনেকেই এখনো নিখোঁজ। তাদের মধ্যে ১৬ জন তপোবন বাঁধের একটি টানেলে আটকা পড়েছিলেন। ওই ১৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
কাছের রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকদের অবস্থা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
নদীর ধারে জ্বালানি কাঠ খুঁজতে যাওয়া ও গবাদিপশু চরানো অনেকেও ভেসে গেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
রাইনি গ্রামের বাসিন্দা সঞ্জয় সিং রানা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, “জানি না কতজন নিখোঁজ। এটা (পানি) এত দ্রুত এল যে কাউকে সাবধান হওয়ার সুযোগই দেয়নি। আমার মনে হয়েছে যে আমরাও ভেসে যেতে পারতাম।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথা জানিয়েছেন।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার পর এক টুইটে তিনি লিখেছেন, “ভারত উত্তরাখণ্ডের পাশে আছে, পুরো দেশ সেখানকার সবার জন্য প্রার্থনা করছে।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য দুর্যোগ মোকাবেলা দলের সদস্যদের আকাশপথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডের প্রতিবেশী রাজ্য উত্তর প্রদেশেও নদীর আশপাশের এলাকাগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা জারি করা হয়েছে।
হিমবাহের তোড়ে বাঁধ ও এর পথে পড়া সবকিছু ভেসে যাওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।