ক্যাটাগরি

এমসি কলেজে ধর্ষণ: দুই অভিযোগের বিচার এক আদালতে করার নির্দেশ

সেসঙ্গে মামলার বাদি, সাক্ষী ও বাদিপক্ষের আইনজীবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া কোনো আসামির আইনজীবী না থাকলে সে আসামির আইনজীবী নিয়োগ দিতেও বলেছে আদালত।

আদালত পরিবর্তনের আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সাবরিনা জেরিন ও এম আব্দুল কাইয়ুম লিটন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

কাইয়ুম লিটন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এমসি কলেজের এই ঘটনায় পুলিশ একটি মামলায় দুটি অভিযোগপত্র দেয়। একটি ধর্ষণের অভিযোগপত্র,
আরেকটি ছিনতাই, মারামারি, চাঁদাবাজির অভিযোগপত্র।

“ধর্ষণের অভিযোগপত্রটি দেয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। আর ছিনতাই, মারামারি, চাঁদাবাজির অভিযোগপত্রটি দেয় দায়রা জজ আদালতে। পরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হলে আমরা দুটি অভিযোগ একসঙ্গে করে বিচারের আবেদন করি।


এমসি কলেজে ধর্ষণ: ৮ আসামির বিচার শুরুর আদেশ

“কিন্তু গত ২৪ জানুয়ারি আমাদের সে আবেদন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাকচ করে দেন। এরপর হাই কোর্টে আবেদন করা হয়।”

স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া নববধূকে ছাত্রাবাসে তুলে নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় আটজনকে আসামি করে গত ৩ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

ঘটনার দুই মাস ৭ দিন পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহপরাণ থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য এ অভিযোগপত্র জমা দেন।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আটজনের জনের মধ্যে ছয়জন ধর্ষণে সরাসরি জড়িত, বাকিরা সহযোগিতা করেছে।

সরাসরি জড়িতরা হলেন-  সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, তারেকুল ইসলাম তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম রাজন মিয়া।

আর রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুমের বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওই আট আসামির সবাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। ডিএনএ পরীক্ষাতেও নমুনার সঙ্গে মামলার আলামত হিসেবে সংগ্রহ করা ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া গেছে।

৩৪৭ পৃষ্ঠার এ অভিযোগপত্রে ৪৯ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে।

এছাড়া ছাত্রলীগ কর্মী সাইফুর রহমানের কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের আরেক মামলায় সাইফুর এবং মাহবুবুর রহমান রনিকে আসামি করে অপর একটি অভিযোগপত্রও আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর  রাত সাড়ে ৯টার দিকে টিলাগড় এলাকায় এমসি কলেজে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া এক গৃহবধূকে ক্যাম্পাস থেকে তুলে ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে।

ঘটনার পরদিন তার স্বামী শাহপরাণ থানায় ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও দুই-তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

ওই ঘটনা দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। প্রতিবাদে সরব হয় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও অধিকার সংগঠন।

তদন্তে নেমে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আটজনের সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

সিলেটের ওই ঘটনার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের কয়েকটি ঘটনায় এ ধরনের অপরাধের শাস্তি বাড়ানোর দাবি আবারও আলোচনায় আসে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে টানা বিক্ষোভের মধ্যে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। পরে তা সংসদেও আইন হিসেবে পাস হয়।

অবশ্য আগের আইনেও ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছিল।