শীর্ষ ক্রিকেটাররা থাকলে বাংলাদেশ সফরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট দলে হয়তো জায়গা হতো না মেয়ার্সের। পরিস্থিতি তাকে করে দিল সুযোগ। সময় ও সুযোগকে তিনি করে নিলেন নিজের সঙ্গী। ২১০ রানের রেকর্ড গড়া ইনিংসে চট্টগ্রাম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এনে দিলেন অসাধারণ এক জয়।
মাত্র ২৯ ছুঁইছুঁই ব্যাটিং গড় নিয়ে তার টেস্ট অভিষেক। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সেঞ্চুরি ছিল মোটে ২ টি, সর্বোচ্চ কেবল ১৪০। বয়স ২৮, কিন্তু প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভিজ্ঞতা মাত্র ৩২ ম্যাচের। সেই তিনিই চমকে দিলেন টেস্ট অভিষেকে।
দারুণ প্রতিভাবান হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটে তার আবির্ভাব। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেন ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের নেতৃত্বে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে অভিষেক হয় যুব বিশ্বকাপের আগেই। তবে এরপর ব্যক্তিগত, পারিবারিক জীবনে অস্থিরতা ও নানা কারণ মিলিয়ে তার ক্যারিয়ার পথচ্যুত হয় বারবার।
সবকিছু পেছনে ফেলে আবার তিনি ক্যারিয়ার সাজান নতুন করে। গত নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেকও হয়ে যায় নিউ জিল্যান্ড সফরে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। তবে টেস্ট দল তখনও তার থেকে ছিল অনেক দূরে। বাংলাদেশ সফরে সেটিই কাছে চলে আসে শীর্ষ ক্রিকেটারদের অনেকে না থাকায়।
এরপর যাকে বলা হয়, ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম!’ যুব দলের অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটের নেতৃত্বেই অভিষেক টেস্ট রাঙালেন তিনি। এখন শীর্ষ ক্রিকেটাররা ফেরার পরও মেয়ার্সকে রাখতেই হবে দলে।
প্রায় সাত ঘণ্টায় ৩১০ বল খেলে ২১০ রানের অসাধারণ ইনিংসের পর স্বাভাবিক ভাবেই মেয়ার্স ছিলেন উচ্ছ্বসিত।
“অবশ্যই এটি আমার কাছে স্পেশাল কিছু। আমার সর্বোচ্চ স্কোর, সেটিও প্রথম টেস্টেই। এই প্রথম আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এত লম্বা সময় ব্যাট করলাম। প্রথম টেস্টেই ডাবল সেঞ্চুরি পাওয়া সত্যিই স্পেশাল।”
উইকেট বেশ কঠিন ছিল শেষ দিনে, বাংলাদেশের বোলাররাও তার পরীক্ষা নিয়েছেন বলে জানালেন মেয়ার্স। তবে তিনি সফল হয়েছেন নিজের পরিকল্পনায় অটুট থেকে।
“এই উইকেটে ব্যাট করা চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিছু বল নিচু হয়েছে, কিছু লাফিয়েছে। ওরা বল টার্ন করাচ্ছিল, আর্ম বল করছিল। আমি আমার পরিকল্পনায় থেকে চেষ্টা করেছি যতটা সম্ভব সোজা ব্যাটে ব্যাট করতে। কঠিন কিছু সময় ছিল, তখন উইকেট আঁকড়ে রাখতে হয়েছে। চেষ্টা করেছি আঁটসাঁট থাকতে এবং সুযোগ পেলে রান বাড়াতে।”
“স্কোরকার্ডের দিকে তাকাচ্ছিলাম না আমি। চেষ্টা করেছি, নিজের পরিকল্পনায় থাকতে। যতটা সম্ভব, লম্বা সময় ব্যাট করতে। জানতাম, যদি সারাদিন উইকেটে থাকি, দলও লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলবে।”
সেঞ্চুরি বা এরকম মাইলফলক পার হওয়ার পর একটু গা ছাড়া ভাব চলে আসা, উইকেট হারানো বা আত্মতুষ্টি চলে আসার নজির ক্রিকেটে আছে অসংখ্য। কিন্তু দলের জন্যই মেয়ার্স নিজেকে চ্যালেঞ্জ করেছেন শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে।
“সেঞ্চুরির সুযোগ তো আমার সামনে ছিলই। কিন্তু আমি জানতাম, আমার কাছে দলের প্রয়োজন সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি কিছু। ব্যাটিংয়ের সময় ভাবছিলাম, আমাকে ১৫০ করতে হবে। দিনের শুরুতেই মনে হয়েছে, ১৫০-১৬০ করতে পারলে, দল লক্ষ্য পার হওয়ার ভালো সম্ভাবনায় থাকবে। ১৬০ ছোঁয়ার পর মনে হলো, আমাকে আরও চেষ্টা করতে হবে। এগিয়ে যেতে নিজেকে আরও প্রেরণা জুগিয়েছি আমি।”