স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেলে ইনফরমেশন সার্ভিসেস বিভাগ (এমআইএস) এক সংবাদ
বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, যারা টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে ২১ জনের ‘সামান্য উপসর্গ’ দেখা
যাওয়া ছাড়া বড় কোনো সমস্য হয়নি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক
রোববার সকাল ১০টা মহাখালীতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে ভার্চুয়ালি টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন
করেন। এর পরপরই সারা দেশে সহস্রাধিক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেওয়া শুরু
হয়।
প্রথম দিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত টিকা হলেও সোমবার থেকে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রথম দিন যারা টিকা পেয়েছেন, তাদের মধ্যে
২৩ হাজার ৮৫৭ জন পুরুষ এবং ৭ হাজার ৩০৩ জন নারী।
রোববার ঢাকা মহানগরে টিকা নিয়েছেন ৫ হাজার ৭১ জন। ঢাকার ৪৭টি কেন্দ্রের
মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৬০ জন টিকা নিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
আর বিভাগভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ৯ হাজার ৩১৪ জন টিকা নিয়েছেন
ঢাকা বিভাগে। এছাড়া ময়মনসিংহে ১ হাজার ৬৯৩ জন, চট্টগ্রামে ৬ হাজার ৪৪৩ জন, রাজশাহীতে
৩ হাজার ৭৫৭ জন, রংপুরে ২ হাজার ৯১২ জন, খুলনায় ৩ হাজার ২৩৩ জন, বরিশালে ১ হাজার ৪১২
জন এবং সিলেট বিভাগে ২ হাজার ৩৯৬ জন টিকা নিয়েছেন।
প্রাথমিকভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে ১০১৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা
দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। ঢাকায় ২০৪টি এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ১৯৬টি স্বাস্থ্যকর্মীদের
দল এসব কেন্দ্রে সরাসরি টিকাদানে নিয়োজিত রয়েছেন।
ধারাবাহিকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের
নিয়ে মোট ৭ হাজার ৩৪৪টি দল প্রস্তুত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি দল দৈনিক ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে।
সে হিসেবে দৈনিক তিন লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।
টিকা নিতে আগ্রহী সবাইকেই
আগে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকার জন্য চার লাখের বেশি মানুষ নিবন্ধন
করেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন
ডিরেক্টর এবং মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,
প্রথম দিন যত মানুষ টিকা নিয়েছে, সেই সংখ্যাটি তাদের প্রত্যাশিতই ছিল।
“প্রথম দিন বেশিরভাগ লোক দর্শকের সারিতে থাকে। তারা দেখে কি হচ্ছে। নতুন
একটা বিষয়, নতুন অভিজ্ঞতা। যাচাই বাছাই করে পরে সিদ্ধান্ত নেয়।”
বাংলাদেশে প্রথমদিন যত সংখ্যক মানুষ টিকা নিয়েছে, তাতে স্বাস্থ্য বিভাগ
সন্তুষ্ট জানিয়ে ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, “ভারতে যেদিন প্রথম টিকা দিয়েছিল তা জনসংখ্যার
অনুপাতে আমাদের চেয়ে কম ছিল। সেই হিসেবে আজকে আমাদের টার্নআউট অনেক ভালো। রেজিস্ট্রেশন
করেছেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তারা আজ দেখতে গেছেন টিকাদান কেমন হচ্ছে।
এই কয়েকটা দিন একটু দেখবে, কদিন পর সবাই টিকা নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে আমি আশাবাদী।”
বাংলাদেশে দেওয়া হচ্ছে ভারতের
সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সবাইকে এ
টিকার দুটি ডোজ নিতে হবে।
এই টিকার তিন কোটি ডোজ পেতে
সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশের, যার মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ হাতে পাওয়ার
পর জেলায় জেলায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে আগেই। এছাড়া ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে
আরও ২০ লাখ ডোজ টিকা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
গত ২৭ জানুয়ারি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের
উদ্বোধন করেন। সে সময় দুই দিনে মোট ৫৬৭ জনকে টিকা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে এই টিকার পরীক্ষামূলক
প্রয়োগ না হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ
করা হয়। কারও মধ্যে গুরুতর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না যাওয়ায় পরিকল্পনা মত রোববার
গণ টিকাদান শুরু হল।
এই টিকা নিরাপদ এবং করোনাভাইরাস
প্রতিরোধে কার্যকর বলে প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ।
জাতীয়ভাবে কোভিড-১৯ টিকা
বিতরণ ও প্রস্তুতি পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন ভাগে (ফেইজ) মোট পাঁচ ধাপে এসব টিকা দেওয়া
হবে। কোভিড-১৯ মহামারী প্রতিরোধে সামনের কাতারে থাকা মানুষ প্রাধান্য পাবেন।