কীভাবে জনগণ এ অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবে? যেখানে অতীতে দেশটিতে নিষ্ঠুরভাবে গণবিক্ষোভ দমন করা হয়েছে।
এ অবস্থায় প্রতিবাদের অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছে মানুষ। কেউ কেউ হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে, কেউ তিন আঙুলে স্যালুট দিয়ে প্রতিবাদ করছেন। কেউ হাতে কাগজ-কলম তুলে নিয়েছেন, কেউ অনলাইনে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
আবার কেউ কেউ প্রতিবাদের এসব ছবি এঁকে নিজের ভাষায় জানাচ্ছেন প্র্রতিবাদ।
ছবি বিবিসি
হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে প্রতিবাদের ছবি:
‘পেন হোল্ডার’ ছদ্মনামে মিয়ানমারের এক চিত্রশিল্পী বিবিসি’কে বলেন, আমরা বিশ্বাস করি ‘ছবি আঁকার মাধ্যমে’ প্রতিবাদ জানানো আমাদের ‘দায়িত্ব’।
“আমাদের জনগণের প্রকৃত নেতা ক্ষমতায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাব।”
এই চিত্রশিল্পীর ছবিতে মিয়ানমারের একটি পরিবারের ছোট থেকে বড় সব সদস্যকে দেখানো হয়েছে; যাদের সবাই এক জায়গায় জড়ো হয়ে হাঁড়ি-পাতিল বাজিয়ে প্রতিবাদ করছে।
গত সোমবার অভ্যুত্থানের পর থেকে সন্ধ্যায় মিয়ানমার জুড়ে এই প্রতিবাদ নিয়মিত দৃশ্যে পরিণত হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেন হোল্ডারের ছবি পোস্ট হওয়ার পর সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। হাজারের বেশি বার সেটি শেয়ার হয়।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জনগণের হাতে কোনও অস্ত্র নেই..আমাদের অস্ত্র কেনার ক্ষমতাও নেই। তার পরিবর্তে একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে আমি আমার কলম দিয়েই লড়াই করব।
“আমি আতঙ্কে আছি। কিন্তু আমি কী করতে পারিনি তা নিয়েও দুঃখ করতে চাই না। আমি এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে চাই।”
ছবি বিবিসি
তিন আঙুল স্যালুট:
ফি থু (আসল নাম নয়) নামে আরেক চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবিও ভাইরাল হয়েছে। তিনি তিন আঙুলে স্যালুট দেওয়ার ছবি এঁকেছেন। পাশে লেখা ‘মনে রাখুন, পহেলা ফেব্রুয়ারিকে মনে রাখুন’।
তিনি বিবিসি’কে বলেন, ‘‘আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই ছবি এঁকেছি; যে কিনা দেশে ঘটে চলা অন্যায় নিয়ে ক্ষুব্ধ।”
“সেনাবাহিনী জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সরকার এবং আমাদের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চিকে আটকে রেখেছে।”
তিন আঙুলে স্যালুট দেওয়া ছবিতে আঙুলের চোখ থেকে পানি পড়ছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে এই চিত্রশিল্পী বলেন, ‘‘এই অশ্রু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের জনগণের অশ্রু। আমরা সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত বাহিনীর অধিনে বসবাস করতে ভয় পাচ্ছি।”
কেন তিনি প্রতিবাদ জানাতে ছবি আঁকাকে বেছে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ফি থু বলেন, ‘‘আমার উত্তর খুব সোজা। আমি চাই বিশ্ববাসী আমাদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানুক। আমি চাই তারা জানুক, আমরা সেনাবাহিনীর এ অভ্যুত্থানের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি কোনও স্বৈরশাসকের অধীনে বাস করতে চাই না। আমি শান্তিপূর্ণ জীবন চাই।”
ছবি বিবিসি
দুধ চা জোট:
‘দ্য মিল্ক টি অ্যালায়েন্স’ থাইল্যান্ড, হংকং ও তাইওয়ানের বিক্ষোভকারীদের একই বন্ধনে বেঁধেছে। অতি সম্প্রতি ভারতের বিক্ষোভকারীরাও এই জোটে যোগ দিয়েছেন।
মিল্ক টি অ্যালায়েন্স নামে সরকার-বিরোধী এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে এই চার দেশের ‘দুধ চা’ প্রেমী বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ দেওয়া হয়। একে অপরের গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের পথ হিসাবেই এর সূচনা।
থাইল্যান্ডের এক চিত্রশিল্পী মনে করেন, মিয়ানমারেরও এখন এই জোটে যোগ দেওয়া উচিত। তার আঁকা ছবিতে দেখানো হয়েছে, দুধ চায়ের এই জোটে যোগ হয়েছে মিয়ানমারের এককাপ দুধ চা।
শিল্পী বলেন, তাইওয়ান এবং হংকং যেভাবে থাইল্যান্ডের গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকে সমর্থন দিয়েছে, ঠিক সেভাবে মিয়ানমারের প্রতিবাদে সমর্থন দেওয়ার প্রয়াসেই তিনি এই ছবি এঁকেছেন।
বিবিসি জানায়, সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে সম্ভবত এই ছবিটিই সবচেয়ে বেশি ভাইরাল হয়েছে। বিশেষ করে তরুণরা ছবিটি বেশি শেয়ার করেছেন।
মিয়ানমারে যারা নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তাদের প্রশংসা করে থাই চিত্রশিল্পী বলেন, “তারা সেনা অভ্যুত্থানের মাত্র ২৪ ঘণ্টা পরই অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছেন- আমার মনে হয় মিয়ানমারে এখন যে কোনওকিছুই ঘটে যেতে পারে।”