তিনি বললেন, প্রথমে একটু ভয় করেছিল, কিন্তু টিকা নেওয়ার পর তা কেটে গেছে।
সারা দেশে গণ টিকাদান শুরুর পর বিভিন্ন হাসপাতাল ও চিকিৎসালয়ের টিকাদান কেন্দ্রে দ্বিতীয় দিনের মত টিকা দেওয়া চলছে।
দিনের প্রথম ভাগেই ছেলে আনোয়ারুল ইসলাম রাহাতকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে আসেন আনোয়ারা বেগম।
কেন্দ্রের নার্স ও স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। একজন চিকিৎসক তার রেজিস্ট্রেশন কার্ডটি দ্রুত এন্ট্রি ডেস্কে নিয়ে যান। চারজন নারী স্বেচ্ছাসেবী এসে যত্নের সঙ্গে এই বৃদ্ধাকে নিয়ে যান টিকা দেওয়ার বুথে।
তার ছেলে রাহাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার মা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি। এই বয়সেও শারীরিকভাবে ভালো আছেন।
“রেজিস্ট্রেশন করার পর রোববার এসএমএস পেয়েছি। মায়ের ইচ্ছা আর মনোবলের কারণেই উনাকে টিকা দিতে এনেছি।”
গত দুদিন ধরে টিকার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসক তাসমিনা পারভীন বলেন, বয়স্কদের টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তারা টিকা নিতেও আসছেন।
“গতকাল রাশেদ খান মেনন (বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি) স্যার টিকা নিয়েছেন, তার বয়স আশির কাছাকাছি। আর একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক কাজী কামরুজ্জামান স্যারের বয়স ছিল ৭৭ বছর।”
টিকা দেওয়ার পর আধা ঘণ্টা অবজারভেশন কক্ষে রেখে আনোয়ারা বেগমকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। কোনো অসুবিধা না হওয়ায় ছেলের সঙ্গে তিনি পুরানা পল্টনের বাসায় চলে যান।
রাহাত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মা ভালো আছেন। কোনো সমস্যা হয়নি।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ জানান, সোমবার সকাল ৯টা থেকে কার্যক্রম শুরুর পর প্রথম ঘণ্টায় প্রায় একশ জন টিকা নিয়েছেন।
সকালে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ খান আবুল কালাম আজাদ।
ভ্যাকসিন বুথে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাসমিনা পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গতকালের চেয়ে আজ টিকা নিতে বেশি মানুষ আসছে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও আসছেন।”
ধানমণ্ডি থেকে টিকা নিতে ঢাকা মেডিকেলে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৫৯ বছর বয়সী আসাদুল আলম সিদ্দিকী।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “৫৫ বছরের কোটায় গতকাল রেজিস্ট্রেশন করার পর এসএমএস পেয়েছি। ভ্যাকসিন নিতে পেরে আমি খুশি, শারীরিক কোনো সমস্যা হচ্ছে না।”
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মত শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটেও সোমবার টিকা নেওয়ার ভিড় প্রথম দিনের তুলনায় বেড়েছে।
রোববার নিবন্ধন ডেস্ক অনেকটা ফাঁকা দেখা গেলেও সোমবার সকালে সেখানে কিছুটা ভিড় দেখা যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, রোববার তার হাসপাতালে ২৭০ জন টিকা নিয়েছিলেন, সোমবার এ সংখ্যা বাড়বে বলে তার ধারণা।
ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও দ্বিতীয় দিনের মত টিকাদান চলছে।
কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. শাহাদত হোসেন জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা টিকা নিতে আসছেন।
তবে হাসপাতালে এসে নিবন্ধন করার ক্ষেত্রে সাময়িক কিছটা অসুবিধা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোববার এ হাসপাতালে এসে নিবন্ধন করেছেন চার হাজার নাগরিক। তাদের মধ্যে দুইশ জনকে এসএমএস পাঠান হয়েছে।
বর্তমানে চারটি বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে শাহাদত হোসেন বলেন, তাদের ১০টি বুথ করার পরিকল্পনা রয়েছে। চাপ বাড়লে বাকি বুথগুলো খোলা হবে। তখন প্রতিদিন এক হাজার জনকে টিকা দেওয়া যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর
জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী
এবং তার স্ত্রী আসমা চৌধুরী সোমবার সকালে ঢাকা সিএমএইচে গিয়ে টিকা নেন বলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার সকাল ১০টা মহাখালীতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে ভার্চুয়ালি টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর পরপরই সারা দেশে সহস্রাধিক হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেওয়া শুরু হয়।
সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এসব কেন্দ্রে টিকা দেওয়া হবে।
টিকা নিতে আগ্রহী সবাইকেই আগে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকার জন্য চার লাখের বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
[প্রতিবেদনটি তৈরি করতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক লিটন হায়দার।]