সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশে পাচার করা বিপুল পরিমাণ
অর্থ উদ্ধারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনের শুনানিতে
রোববার একথা বলেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার।
ভার্চুয়াল এই হাই কোর্ট বেঞ্চে কনিষ্ঠ বিচারক হিসেবে
আছেন বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীম।
শুনানির এক পর্যায়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খানকে উদ্দেশ
করে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “দুদকের কাজ হলো দুর্নীতি ও অর্থপাচার
প্রতিরোধ করা। সেগুলো করতে গিয়ে দুদককে ঢোঁড়া সাপ হলে হবে না, জাত সাপ হতে হবে।
“দাঁত নেই এরকম সিংহ হয়ে লাভ নেই। ভাঙ্গা দাঁত নিয়ে
কাজ করতে পারবেন না। দন্তহীন বাঘ হলে চলবে না।”
আট বছর আগে দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান গোলাম রহমান
বলেছিলেন, দুদক ‘দন্তহীন বাঘে’ পরিণত হয়েছে।
দুদক এখনো নখদন্তহীন, মানলেন চেয়ারম্যান
তবে রোববারের শুনানিতে বিচারপতির কথার জবাবে দুদকের
আইনজীবী বলেন, “দুদক কখনওই দন্তহীন বাঘ ছিল না।”
তখন দুদকের দায় মনে করিয়ে দিয়ে বিচারপতি বলেন, দুদককে
দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে হবে।
এসময় আদালতের জুম প্লাটফর্মে যুক্ত থাকা আইনজীবী মনজিল
মোরসেদ বলেন, “দাঁত আছে, কিন্তু দাঁতে বিষ নাই।”
দুদক আইনজীবী প্রত্যুত্তরে বলেন, “সবই আছে মাই লর্ড।”
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক তখন বলেন, “অর্থ পাচার রোধে কী
পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলেন?”
দুদকের আইনজীবী তখন সুনির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে
পারেননি।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান বলেন, পাচার
হওয়া টাকা উদ্ধারের ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয়তা, দুদকের কাছে এ সংক্রান্ত যে তথ্য আছে
সেটা দাখিল করা, অর্থ পাচার রোধে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন এবং বিতর্কিত ব্যবসায়ী
মুসা বিন সমশেরের অর্থ জব্দ করার আরজি জানিয়ে আদেশ চেয়েছি।
বিচারক বলেন, “সঠিক তথ্য না থাকলে আমরা এটা কীভাবে
দেব?”
কাইয়ুম খান তখন বলেন, “রুল দিয়ে আপনারা দুদকের কাছে
তথ্য জানতে চাওয়া যায়। দুদক তথ্য দিতে বাধ্য। মুসা বিন শমসের ১৬ পৃষ্ঠার সম্পদের
হিসাব দাখিল করেছে। পত্রিকায় এসেছে। এরপর দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা আদৌ পদক্ষেপ
নিয়েছে কি না, এটা জানতে চান মাই লর্ড।”
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, দ্বিপাক্ষিক
চুক্তি না থাকলে দুদক কীভাবে দেবে?
আইনজীবী কাইয়ুম খান বলেন, “উনারা সুইস সেন্ট্রাল
ব্যাংকের কাছে দরখাস্ত দিক। বলুক, এটা বিতর্কিত বিষয়। এটা নিয়ে বাংলাদেশের আদালতে
মামলা চলছে। এই অর্থ (মুসা বিন শমসেরের অর্থ) জব্দ করা হোক।”
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন,
দুদক অন্য একটি মামলায় বলেছে, বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সশিয়াল ই্নটেলিজেন্স
ইউনিট) যদি তথ্য দেয়, তাহলে পুনরায় তথ্য পাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।
এ সময় ভারতের আদালতের একটি মামলার রায়ের উদাহরণ টেনে
আইনজীবী কাইয়ুম বলেন, “ওখানেও অনেক এ রকম বেফাস কথাবার্তা বলেছে। এটা দেওয়া সম্ভব
না, ওটা সম্ভব না। ভারতের আদালত সরকার পক্ষের প্রত্যেকটি যুক্তির পোস্টমর্টেম করে
বলেছে, তথ্য দিতে বাধ্য।
“আমাদের একটা দিন সময় দেন, শুধু তথ্য দিতে পারে কিনা এ
ব্যাপারে শুনানি হোক।”
এরপর আদালত আগামী মঙ্গলবার এ ব্যাপারে পরবর্তী শুনানির
জন্য রাখে।
অর্থ পাচার: দুদকের ভূমিকায় অসন্তোষ আদালতের
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল
এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
বিদেশি ব্যাংক বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে পাচার করা বিপুল
পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে গত ১ জানুয়ারি রিট
আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাস।
এতে বিবাদী করা হয়েছে, অর্থ সচিব, প্রধানমন্ত্রী মুখ্য
সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের
সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুর্নীতি দমন
কমিশনের চেয়ারম্যন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান,বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর,
ডেপুটি গভর্নর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান,
যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের রেজিস্ট্রার ও পুলিশ প্রধানকে।