এই দুই সমস্যা নিয়েই ভোগার কথা জানিয়েছেন রাজধানীর শনির আখড়ার বাসিন্দা মরিয়ম বেগম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায়ই গ্যাসের চাপ কম থাকে। আধাঘণ্টার রান্না শেষ করতে তিন-চার ঘণ্টা লেগে যায়।”
গ্যাসের চাপ নিয়ে একই অভিযোগ পাওয়া গেছে মোহাম্মদপুর, ধানমণ্ডি, হাজারীবাগ, মিরপুর, শেওড়াপাড়া, পীরেরবাগ এলাকা থেকে। বিদ্যুৎ সমস্যার অভিযোগ এসেছে আরও নানা এলাকা থেকে।
শনির আখড়ার মরিয়ম বিদ্যুৎ নিয়ে বলেন, “মাঝে মাঝেই আমাদের এখানে বিদ্যুৎ চলে যায়। আজ (রোববার) দুপুরেও তিন ঘণ্টা ছিল না।”
দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা এখন চাহিদার চেয়ে বেশি বলে শুনছেন তিনি; তাই এর কারণ খুঁজে না পাওয়ার কথা বললেন।
“এর উপর এখন তো শীতকাল। বিদ্যুতের ব্যবহার কম। এরপরও কেন বিদ্যুৎ যায়?“
মহামারীকালে বিদ্যুৎ না থাকলে সমস্যা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি মরিয়মের কাছে।
“এখন বাচ্চাদের অনলাইন স্কুল। বিদ্যুৎ না থাকলে ওয়াইফাই থাকে না। ডেটা কিনতে হয়। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে ডিভাইসে চার্জ থাকে না।”
গ্যাস-বিদ্যুতে সাফল্য এলেও সমস্যা ব্যবস্থাপনায়: ফরাস উদ্দিন
গ্যাসের সমস্যার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন। অন্যদিকে বিদ্যুত কর্মকর্তারা বলছেন, এক্ষেত্রে উৎপাদনে কোনো সমস্যা নেই, ছোটখাটো মেরামতের কারণে কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সাময়িক বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
রাজধানীর দক্ষিণ অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী ডিপিডিসির পরিচালন বিভাগের পরিচালক এটিএম হারুন অর রাশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক কম থাকে। তাই এই সময় লোডশেডিং হওয়ার প্রশ্নই আসে না।
“তবে শীতকালে সরবরাহ লাইন, ট্রান্সমিটার, সাবস্টেশনগুলোতে ব্যাপকভাবে মেনটেইন্যান্স বা বিভিন্ন সংস্কার কাজ করা হয়ে থাকে। এটা হচ্ছে গরমকালে ভালো বিদ্যুৎ সরবরাহের একটা প্রস্তুতি। চলতি বছরের শুরু থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো শুরু করতে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেকারণে হয়ত কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ যেতে পারে।”
ঢাকার উত্তরাংশের বিতরণ সংস্থা ডেসকোর নির্বাহী পরিচালক নুর মোহাম্মদও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার এলাকায়ও রক্ষণাবেক্ষণের কিছু কাজ চলছে।
শীতে রাজধানীর বিভিন্ন ‘পকেট’ এলাকায় প্রতিবছরই গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। যেসব এলাকায় বিতরণ লাইনের তুলনায় গ্রাহক বেশি সেসব এলাকায় গ্যাসের চাপজনিত সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
তবে সম্প্রতি চাহিদার তুলনায় গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সব এলাকায় নতুন ভোগান্তির শুরু বলে জানা গেছে।
রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহকারী কোম্পানি তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মির্জা মাহবুব হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এলএনজির সরবরাহ কমে গেছে। তাই চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় চাপজনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, “তিতাস এলাকায় ২২০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের প্রয়োজন হয়। মাঝখানে ১৯০০ এমএমসিএফডি, পরে ১৭০০ এমএমসিএফডিতে নেমে এসেছে। কাতার থেকে এলএনজি আসতে দেরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।“
এলএনজি সঙ্কটের কারণে জানতে যোগাযোগ করা হলে পেট্রোবাংলার এলএনজি শাখার উপ মহাব্যবস্থাপক ডিজিএম শাহ আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সম্প্রতি স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট থেকে কিছুদিন কেনাকাটা বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে চুক্তি অনুযায়ী ওমান ও কাতার থেকে এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক আছে।
“প্রতি ইউনিট যেটা ৫/৬ ডলার ছিল, সম্প্রতি তা বেড়ে ৩২ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন আবার কিছুটা কমে এসেছে। আসলে এত বেশি দামে তো এলএনজি কেনা সম্ভব না।”
দেশে গ্যাসের উৎপাদন চাহিদার চেয়ে কম হওয়ায় ঘাটতি মেটাতে এলএনজি আমদানির পথ বেছে নেয় সরকার। এলএনজি আনার পর তা গ্যাসের জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হয়।
শাহ আলম বলেন, “এখন ৪০০ এমএমসিএফডি করে এলএনজি দেওয়া হচ্ছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসে আরও ৫০ এমএমসিএফডি বাড়বে।”
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড, সিলেট গ্যাসফিল্ড, বাপেক্স, শেভরন ও তাল্লোর ২২টি কূপ এবং এলএনজি সরবরাহ মিলিয়ে দেশে সরবরাহ সক্ষমতা ছিল ৩৭৬০ এমএমসিএফডি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর দেশে গ্যাসের উৎপাদন ছিল ৩১৩৫ এমএমসিএফডি; যাতে এলএনজির মিশ্রণ ছিল ৭০১ এমএমসিএফডি।
৩০ অক্টোবর ৩১৭৩ এমএমসিএফডি গ্যাস উৎপাদন হয়েছিল যার মধ্যে এলএনজি ছিল ৬৪১ এমএমসিএফডি।
আর গত ৪ ফেব্রুয়ারি গ্যাসের উৎপাদন ছিল ২৮৭২ এমএমসিএফডি, যেখানে এলএনজির মিশ্রণ ছিল ৪০০ এমএমসিএফডি।