পাশাপাশি
ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দেওয়ার উদ্যোগকে ‘১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর
রুটি রুজি বন্ধের চক্রান্ত’ আখ্যায়িত করে তা বন্ধের দাবি
জানিয়েছে সংগঠনটি।
মঙ্গলবার
জাতীয় প্রেসক্লাবে এক মানববন্ধন থেকে পিডব্লিউসিএসপির এ দাবি তুলে
ধরা হয়। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাফনের কাপড় পরে এ কর্মসূচিতে যোগ
দেন এবং এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর
হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ঢাকার
বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ও ব্যবস্থাপনার মূল
দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটি শুধু নির্ধারিত কনটেইনার থেকে ল্যান্ডফিলে ময়লা অপসারণের কাজ করছে।
সিটি
করপোরেশনের ভাষ্য, যে জনবল রয়েছে
তা দিয়ে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা শহরের প্রধান সড়কগুলো ঝাড়ু দেওয়ার কাজটি করেন।
তাদের
সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারদের (পিডব্লিউসিএসপি) প্রায় ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী
নাগরিকদের বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের কন্টেইনারে পৌঁছে দেন।
পিডব্লিউসিএসপি-এর সংগঠক ছিলেন
প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর তিনি ২০১৫
সালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার
জন্য পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওয়ার্ডভিত্তিক সব সংগঠনকে একত্রিত
করে ময়লা নিয়ে কাজ করার জন্য এই ফাউন্ডেশনকে প্রত্যয়ন
দেওয়ার ক্ষমতা দেন।
পিডব্লিউসিএসপির
অভিযোগ, তাদের ১৯ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মীর
রুটি-রুজির ব্যবস্থা ‘হরণ করে শুধুমাত্র কাউন্সিলরদের ব্যবসার জন্য’ এখন ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দেওয়া হচ্ছে।
সংগঠনের
সভাপতি নাহিদ আক্তার লাকী বলেন, “বর্জ্য অপসারণের জন্য শুধুমাত্র সেবামূল্য হিসেবে আমরা ২৫ থেকে ৩০
টাকা করে নিতাম, যা দিয়ে কর্মীদের
বেতন-ভাতা ও অফিস ব্যয়সহ
অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করা হত।
“কিন্তু
আশ্চর্য্য হলেও সত্য যে, নগরবাসী তাদের হেল্ডিং করের সঙ্গে মোট করের ২ শতাংশ বর্জ্যের
জন্য বিল দিয়ে থাকেন। তার সঙ্গে আবার নতুন করে ১০০ টাকা ধার্য করে টেন্ডারের মাধ্যমে এই কাজ স্থানীয়
ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে যেসব বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মী এই কাজের সঙ্গে
জড়িত ছিলেন, তারা এখন কর্ম হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন।”

লাকীর
অভিযোগ, এরই মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন তাদের ময়লা সংগ্রহের কাজ টেন্ডারে দিয়ে দিয়েছে। ফলে দক্ষিণ সিটিতে ১০ হাজার বেসরকারি
পরিচ্ছন্নতাকর্মী বেকার হয়ে পড়েছেন।
“তারা
এখন কর্ম হারিয়ে বিভিন্ন অপরাধকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে। ময়লা সংগ্রহের এই সেবামূলক কাজ
এখন ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।”
লাকী
বলেন, “টেন্ডারে দেওয়ার কারণে দক্ষিণ সিটিতে নাগরিকদের হয়রানি আরও বেড়েছে। ২৫ টাকা থেকে
বাড়িয়ে ময়লার বিল ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
“সিটি
করপোরেশন কৌশলে এই সেবামূলক কাজকে
ব্যবসায় রূপান্তর করে কাউন্সিলরদের হাতে তুলে দিচ্ছে। এতে যেমন অতিরিক্ত করের চাপে পড়ছে নগরববাসী, ঠিক একইভাবে এই করোনাকালে কর্ম
হারাতে বসেছে আমাদের বেসরকারি পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।”
গত
দুই বছর ধরে দুই মেয়রের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা
বলার চেষ্টা করা হলেও তাতে সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ করা হয় প্রতিবাদ কর্মসূচিতে।
লাকী
বলেন, “আমরা যখন গত ১২ জানুয়ারি
এই জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছি, তখন মেয়র আমাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য রাজি হলেন। তিনি ডেকে নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলে দিলেন আমাদের অনুমোদন দিয়ে দিতে। তখন আমরা সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করি।
“এরপর
নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদেরকে বললেন, মেয়র নাকি তাকে কিছুই বলেননি। অপরদিকে বর্তমানে আমাদের কোনো অনুমোদন না থাকায় সব
ওয়ার্ডে কাউন্সিলর ও তাদের সন্ত্রাসীরা
আমাদের প্রতিটি ওয়ার্ড দখল করে নিয়েছে। আমরা যতদূর জানতে পেরেছি, কাউন্সিলরদের চাপের কারণে এই টেন্ডার আহ্বান
করা হচ্ছে।”
তিনি জানান,
টেন্ডারের প্রাথমিক
কাগজপত্র যা তারা দেখেছেন, তাতে
যেসব কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে, তা কেবল বড় বড় প্রতিষ্ঠিত ঠিকাদারদের পক্ষেই দেওয়া সম্ভব।
“তাহলে
আমাদের এই পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেই কাগজপত্র
কোথায় পাবে। তাদের থেকে টিন সার্টিফিকেট, ভ্যাট ও ট্যাক্স পরিশোধের
কাগজ, ব্যাংক সলভেন্সি ও ব্যাংকে জামানতের
মতে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। তাদের যদি এসব কাগজপত্র থাকত, তাহলে তো তারা এই ময়লা সংগ্রহের
কাজ করত না। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীর মতে ব্যবসা করত।”
এ
অবস্থায় টেন্ডার ব্যবস্থা বাতিল করে প্রাইমারি ওয়েস্ট কালেকশন সার্ভিস প্রোভাইডারদের (পিডব্লিউসিএসপি) অনুমোদন ও প্রত্যয়ন আগামী সাত দিনের
মধ্যে ফিরিরে না দিলে তারা
নগরীর বাসাবাড়ির ময়লা নেওয়া বন্ধ করে দেবে বলে ঘোষণা দেন সংগঠনের সভাপতি।
পিডব্লিউসিএসপির
অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা উত্তর
সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম সাইদুর রহমান
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের নিয়ে এতদিন কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না সিটি করপোরেশনের।
আমরা এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দিতাম। তাদের শুধু বলা হত, উপযুক্ত সংখ্যক কর্মী ও যানবাহন থাকতে
হবে। আমরা এখন তাদের একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে চাই।
“পিডব্লিউসিএসপির
কর্মীদের বাদ দেওয়ার প্রশ্ন আসছে না। আমরা তাদের বাদ দিলে কর্মী পাব কোথায়? তারা টেন্ডারের কথা বলছে। এখনও টেন্ডার দেওয়া হয়নি। তবে শৃঙ্খলা ও নিয়মকানুনের কথা
জানিয়ে টেন্ডার দেওয়া হবে। তখন নিয়মকানুন মেনে যারা নিবন্ধন করবেন, তাদের আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য অনুমোদন দেব।”
ঢাকা
উত্তরে ২৮টি ওয়ার্ডে ২ হাজার ৮০০
জন কর্মী রয়েছেন সিটি করপোরেশনের। ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে আটটিতে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন করে ১ হাজার ৫০০
জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত বছরের অগাস্টে
পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় থাকা নানা প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে নিবন্ধন করানো হয়। তাদের ৭৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে এখন ৭১টি ওয়ার্ডে ৭১টি সংগঠন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করছে।
ঢাকা
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বদরুল আমিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যারা কাজ করছে এখন, তাদের শৃঙ্খলায় আনতেই আমরা নতুন করে নিবন্ধন করাচ্ছি। আমরা পুনঃপুনঃ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন নিয়ম কানুনের কথা জানিয়েছি পত্রিকায়।
“এখন
কেউ যদি এসে বলে, আমরা ৫ জন, আমরা
৬ জন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার
কাজ করছি; তাহলে তো সেটা হবে
না। নির্দিষ্ট একটা নিয়মের মধ্যে সবাইকে আসতে হবে। তারা নিয়ম না মেনে অভিযোগ
করলেই তো আর হবে
না।“