বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নেপিডো হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেছেন, আহত নারীর মাথায় আঘাত লেগেছে।
তিনি বলেন, ‘‘ওই নারী এখনও মারা যাননি। তাকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে ওই আঘাতের কারণে তার জীবননাশের শতভাগ আশঙ্কা আছে।
“তার মাথায় এক্স-রে করা হয়েছে এবং দেখে মনে হচ্ছে তাজা গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছে।”
এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে রয়টার্স থেকে পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগযোগ করা চেষ্টা করে কোনও সাড়া মেলেনি।
রাবার বুলেটে আহত আরও তিনজনের চিকিৎসা চলছে। তাদের মধ্যে একজন বুকে আঘাত পেয়েছেন। তবে সেই আঘাত গুলির নাকি রাবার বুলেটের তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশ আহত হওয়ার কথা জানানো হয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলের পর দেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে মঙ্গলবারই প্রথম বিক্ষোভে রক্ত ঝরল।
নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলকারীদের হাত থেকে মুক্তি এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে মঙ্গলবারের এ বিক্ষোভে অংশ নেওয়াদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামানও ব্যবহার করা হয়েছিল।
বিক্ষোভ দমনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেশ কয়েকটি শহরে বড় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা এবং রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করেছে; তা সত্ত্বেও অনেক শহরেই টানা চতুর্থদিনের মতো অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
এছাড়া মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ইয়াংগনে এনএলডির প্রধানকার্যালয়ে অভিযান চালায় বলেও দাবি করেন এনএলডির নির্বাচিত দুই এমপি।
সোমবার মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং ‘কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়’ বলে সতর্ক করেছেন। তিনি অবশ্য বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে সরাসরি কোনো হুমকি দেননি।
হ্লাইংয়ের ভাষণের পর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে ‘যারা আইন ভঙ্গ করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই হবে’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
নেপিডোতে মঙ্গলবারের বিক্ষোভে পুলিশের কর্মকর্তারা রাবার বুলেট ছোড়ার আগে জলকামান ব্যবহার করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বিবিসি’র এক প্রতিবেদক।
শহরটির এক বাসিন্দা একটি বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, “তারা (পুলিশ) প্রথমে সাবধান করতে দুই দফা আকাশে গুলি ছোড়ে, এরপর বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে রাবার বুলেট ছোড়ে।”
প্রতিবাদকারীরা এর আগে তাদের দিকে ছোড়া জলকামান অগ্রাহ্য করেই বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং পিছু হটতে অস্বীকৃতি জানায় বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
“সামরিক একনায়কতন্ত্র নিপাত যাক,” বিক্ষোভে অংশ নেওয়া মানুষজন চিৎকার করে এমনটাই বলেছেন।
নেপিডোতে বিক্ষোভে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে প্রতিবাদে যোগ দিতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন বিবিস ‘র এক প্রতিবেদক। বিভিন্ন কর্মসূচিতে আরও আরও পুলিশ সদস্যের অংশগ্রহণেরও খবর পাওয়া গেছে।
পুলিশ সদস্যদের বিক্ষোভে যুক্ত হতে অভ্যুত্থানবিরোধীরা আগেই আহ্বান জানিয়েছিলেন।
মিয়ানমারের অন্যান্য শহরেও বিক্ষোভকারীরা তাদের জমায়েত অব্যাহত রেখেছেন; বিভিন্ন ছবিতে কয়েকটি শহরে ব্যাপক সংখ্যক প্রতিবাদকারীকে জড়ো হতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
বাগো শহরে বিক্ষোভরতদের ওপর পুলিশের জলকামান ছোড়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এর আগে সোমবার শিক্ষক, আইনজীবী, ব্যাংক কর্মকর্তা ও সরকারি কর্মীরা মিয়ানমারের বিভিন্ন অংশে অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখায়।
সেনাশাসনের বিরুদ্ধে দেশটিতে এখন পর্যন্ত হওয়া কর্মসূচিগুলোকে কেন্দ্র করে কয়েকজন আহত হয়েছে বলে শোনা গেলেও কোথাও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।
মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াংগনে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বৌদ্ধ ভিক্ষু, সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য, শীর্ষ ফুটবল খেলোয়াড়, চলচ্চিত্র ও সংগীত জগতের সুপরিচিত অনেককে দেখা গেছে। সামনের দিনে তারকাদের এই উপস্থিতি আরও সংগঠিতভাবে দেখা যেতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে অভ্যুত্থানের এক সপ্তাহ পর টেলিভিশনে দেওয়া প্রথম ভাষণে জেনারেল মিন অং হ্লাইং তার ক্ষমতা দখলের পেছনে ‘ভোট জালিয়াতিকে’ কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন।
নভেম্বরের নির্বাচনে ভোটার তালিকা নিয়ে অনিয়ম তদন্তে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
অভ্যুত্থানের আগে মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন ভোটে ব্যাপক জালিয়াতির দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিল; নভেম্বরের ওই ভোটে শান্তিতে নোবেলজয়ী অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে।
সু চি ও এনএলডির অন্যান্য শীর্ষ নেতা এমনকী মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে গত সপ্তাহে আটক করার পর থেকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
জেনারেল মিন অং হ্লাইং ‘সংস্কারকৃত’ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন এবং সেই নির্বাচনে বিজয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তার শাসনকাল মিয়ানমার এর আগে ৪৯ বছরের যে সামরিক শাসন দেখেছিল তার থেকে ভিন্ন হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন হ্লাইং।
মঙ্গলবার নিউ জিল্যান্ড মিয়ানমারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের সব ধরনের যোগাযোগ স্থগিত এবং ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তাদের সফরে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের পর দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এটিই আন্তর্জাতিক মহলের দিক থেকে প্রথম বড় পদক্ষেপ।