ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।
রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৪ জানুয়ারি তিনি রায়ের এ তারিখ ঠিক করে দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে লেখক-প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর ধারাবাহিক হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে আক্রান্ত হন দীপন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে দীপনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়।
জিয়াসহ দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরুর এক বছর তিন মাসের মাথায় আলোচিত এ মামলা রায়ের পর্যায়ে এসেছে।
দীপন হত্যা মামলায় সাক্ষ্য শেষ, যুক্তিতর্ক ১৭ জানুয়ারি

এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেছেন, “রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সাক্ষ্য প্রমাণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি বলে মনে করি। আশা করছি, আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডই হবে।”
অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে ‘পারেনি’। আসামিরা ‘খালাস পাবেন’ বলে আশা করছেন তারা।
এ মামলার আট আসামি হলেন- বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়া, আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে আবদুল্লাহ, মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান, আবদুর সবুর সামাদ ওরফে সুজন ওরফে রাজু, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ওরফে শাহরিয়ার ও শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের।
আসামিদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন। গ্রেপ্তার সবাই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে পুলিশের ভাষ্য।
দীপনের বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক রায় হওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে দুই আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় অসন্তোষ রয়েছে মামলার বাদী দীপনের স্ত্রী রাজিয়া রহমানের।
সম্প্রতি তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিয়া ও আকরাম পলাতক। মূল হোতাই তো এই দুজন। সুতরাং আসলে এদেরকে ধরতে না পারলে, এদের বিচারটা না হলে পুরো প্রক্রিয়াই অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।”
দীপন হত্যা: চাকরিচ্যুত মেজর জিয়াসহ ৮ আসামির বিচার শুরুর আদেশ

বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের ছদ্মবেশ এই রকম হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা
২০১২ সালের ১৯ জানুয়ারি সেনাবাহিনী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকার উৎখাতে ধর্মান্ধ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার একটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা নস্যাৎ করার খবর দেয়। অভ্যুত্থানচেষ্টাকারীদের নেতা হিসেবে জানানো হয় মেজর জিয়ার নাম।
তখন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া জিয়া পালিয়ে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামে যুক্ত হন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিজিৎ হত্যা মামলাসহ আরো বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
দীপনকে যে বছর হত্যা করা হয়েছিল, সেই ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা চলার সময় টিএসসিতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। এরপর কয়েক মাসের ব্যবধানে নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়সহ কয়েকজন ব্লগার-লেখককে হত্যা করা হয়।
এরপর ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে দীপনকে হত্যার দিন একই সময়ে লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে একই কায়দায় কোপানো হয়েছিল। তবে টুটুলসহ তিনজন বেঁচে যান।
জাগৃতি ও শুদ্ধস্বর দুই প্রকাশনা থেকেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হয়। দুটি ঘটনাতেই জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের নাম আসে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই জঙ্গি দলের সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই দীপনকে হত্যা করা হয়।
ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যার পর ওই দিনই তার স্ত্রী রাজিয়া রহমান শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
তিন বছর পর ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান। অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয়।
২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এ আদালতে আসামিদের বিচার শুরু হয়। তারপর রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৩ জনের সাক্ষ্য শুনেছে আদালত।
অন্যদিকে কারাগারে থাকা আসামিরা গত ৫ জানুয়ারি আত্মপক্ষ শুনানিতে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
পুরনো খবর
জিয়াকে ‘ফলো’ করা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
দীপন হত্যার বিচার নিয়ে হতাশ পরিবার
দীপন হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ
শামীম বলেছে, জিয়াই হোতা: পুলিশ
হত্যার আগে নিলয়-দীপনকে ‘নিয়মিত অনুসরণ করা হয়’
দীপন হত্যায় স্ত্রীর মামলা, আসামি অজ্ঞাত
প্রকাশক দীপন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দাখিল