ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, প্রকল্প এলাকা থেকে পাঁচ ট্রাক লোহা ‘চুরির’ চেষ্টা ঠেকিয়ে দেওয়ায় তাদের মারধর করা হয়।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দোলন বিশ্বাস।
স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের অফিসে হামলার খবর তারা শুনেছেন। অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নেবেন।
বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল রানা সাংবাদিকদের বলেন, “দোলন বিশ্বাস ও তার সহযোগীদের সিন্ডিকেট রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় নির্মাণকাজে ব্যবহৃত লৌহসামগ্রী অবৈধভাবে বিক্রির উদ্দেশ্যে আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে পাঁচটি ট্রাকে করে প্রকল্প এলাকা থেকে বের করার চেষ্টা করছিল।
“তা আমাদের নজরে আসলে প্রকল্পের প্রশাসনিক বিভাগকে জানাই। প্রশাসনের লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে লৌহসামগ্রীভর্তি পাঁচটি ট্রাক আটক করে। মাল বের করতে না পেরে দোলন বিশ্বাস ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র লোক নিয়ে নতুনহাট এলাকায় আমাদের অফিসে হামলা চালায়।”
তিনি বলেন, “হামলাকারীরা অফিসে ঢুকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ভাঙচুর চালায় এবং আমাকে লোহার রড দিয়ে পেটাতে শুরু করে। এ সময় নারীকর্মীরা ছুটে এসে আমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে আমার চিৎকারে আশপাশের মানুষ ছুটে এলে তারা চলে যায়।”
বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান রাসেল বলেন, “রূপপুর প্রকল্পে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ক্লিনিং সার্ভিস পরিচালনা করে আসছি। যেহেতু আমরা প্রকল্পে ক্লিনিং সার্ভিস দিই, এ কারণে কোনো কিছু খোয়া গেলে কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হয়। এজন্য নিজেদের স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে লৌহসামগ্রী চুরির সময় প্রশাসনকে অবহিত করি।”
কামরুল বলেন, অফিসে হামলার আগে দোলন বিশ্বাসের সহযোগীরা তার বাসায় গিয়ে তার স্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসে।
নিজে আতঙ্কে থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সোহেল রানাকে নিয়ে ভয়ে আমরা ঈশ্বরদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে পারিনি। পরে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার চেষ্টা করলে সেখানেই দোলনের বাহিনী আমাদের পিছু নেয়। প্রাণভয়ে আমরা ঢাকার পথে রওনা হয়েছি। আমাদের প্রতিনিধি থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে।”
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবীর বলেন, “বাংলা পাওয়ার সার্ভিসের অফিসে হামলা ও এক ব্যক্তিকে জখমের খবর পেয়েছি। লিখিত অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
রূপপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আতিকুল ইসলাম বলেন, “দোলন বিশ্বাসের অনুসারী জয়নগর এলাকার ফরিদ নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে প্রকল্প এলাকা থেকে বিভিন্ন মালপত্র মাঝে মাঝে বের করা হয়। তবে তা বৈধ না অবৈধ, তা আমার জানা নেই।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে লোহা চুরি চক্রের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য নূরুজ্জামান বিশ্বাসের ছেলে দোলন।
তিনি বলেন, “রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো একটি সুরক্ষিত এলাকা থেকে মালপত্র চুরি অসম্ভব কল্পনা।”
হামলার অভিযোগও অস্বীকার করে তিনি বলেন, “রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতেই আমাকে জড়িয়ে অসত্য অভিযোগ করা হচ্ছে।”