মঙ্গলবার ১ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছিল। বুধবার তা ছাড়িয়ে গেল।
এ নিয়ে গত চার দিনে সারাদেশে ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬৯ জন টিকা নিয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কিনে বিনামূল্যে প্রয়োগ গত রোববার থেকে সারাদেশে শুরু করেছে সরকার। প্রতিদিন সকাল ৮টা বেলা আড়াইটা পর্যন্ত চলে টিকাদান।
এ পর্যন্ত যারা টিকা নিয়েছেন তাদের ২৭৭ জনের মধ্যে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস (মেডিকেলে ইনফরমেশন সার্ভিসেস) জানিয়েছে।
বুধবার ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ১৯ হাজার ১১৫ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকরাও রয়েছেন।
ঢাকার ৪৭টি হাসপাতালের টিকা নেওয়ার যে তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, তাতে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ১৮৩৭ জন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে টিকা নিয়েছেন।
বিভাগভিত্তিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি ৪০ হাজার ৯০৭ জন টিকা নিয়েছেন ঢাকা বিভাগে। এছাড়া ময়মনসিংহে ৭৫৪৯ জন, চট্টগ্রামে ৩৭ হাজার ৪৫৮ জন, রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৯৭১ জন, রংপুরে ১৪ হাজার ২২৪ জন, খুলনায় ১৭ হাজার ১১৫ জন, বরিশালে ৬১৪৭ জন এবং সিলেট বিভাগে ১৭ হাজার ৮০ জন টিকা নিয়েছেন।
নিবন্ধন করে ঢাকাসহ সারা দেশে ১০১৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেওয়া হচ্ছে। ঢাকায় ২০৪টি এবং ঢাকার বাইরে ২ হাজার ১৯৬টি স্বাস্থ্যকর্মীর দল এসব কেন্দ্রে টিকা প্রয়োগ করছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রতিটি দল দৈনিক ১৫০ জনকে টিকাদান করতে পারবে। সে হিসেবে দৈনিক তিন লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগের।
সারাদেশে রোববার দেওয়া শুরু হলো ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা । ছবি: মাহমুদ জামান অভি
টিকাদানের
চতুর্থ দিন
দিন যত গড়াচ্ছে, রাজধানীর টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ভিড় তত বাড়ছে।
বুধবার মালিবাগ থেকে স্বামী প্রদীপ দাস গুপ্তর সঙ্গে টিকা নিতে মুগদা
জেনারেল হাসপাতালে এসেছিলেন শিক্ষিকা পূরবী দাস গুপ্ত।
তিনি বললেন, “সরকার টিকা
নেওয়ার জন্য এত প্রচার করছে, আমাদের এত সুবিধা দিচ্ছে, এটা নেওয়া উচিত বলে আমি মনে
করি। নেতিবাচক কথাবার্তা কেন হবে? আমার নিজ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। সুনাগরিক হিসেবে
এগিয়ে আসা দরকার। এ কারণেই আমি টিকা নিতে এসেছি। টিকা নেওয়ার পর কোনো নেতিবাচক
কিছু মনে হচ্ছে না।”
মুগদা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল হাশেম শেখ
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার হাসপাতালে এদিন মোট ৯০৬ জনকে টিকা দেওয়া
হয়েছে। এর আগের তিন দিন যথাক্রমে ৩১৪, ৩৫৪ এবং ৬৬৯ জন টিকা নিয়েছিলেন।
“আজ অনেক ভিড় ছিল। সকাল ৮টায় দেখেছি ২০০ জনের বেশি
মানুষ ভিড় করে আছে। আমাদের এখানে অনস্পট রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নেওয়া যাচ্ছে।”
রাজধানীর টিকাদান কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেখানে প্রতিদিন টিকা দেওয়ার সক্ষমতা আছে ১২শ জনকে। কিন্তু বুধবার
সেখানে ১ হাজার ৮৭২ জন টিকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল
জুলফিকার আহমেদ আমিন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “মানুষের
আগ্রহ বাড়ছে এটা অবশ্যই খুশির খবর। কিন্তু আমাদের যে ব্যবস্থা, তাতে এটা ম্যানেজ
করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে টিকার বরাদ্দ পাওয়াটা।”
তবে আজিমপুর মেটার্নিটি হাসপাতালে ভিড় ছিল তুলনামূলকভাবে কম। এ
হাসপাতালের পরিচালক ডা. ইশরাত জাহান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের
হাসপাতালে ৪০০ জনকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। লোক কম হওয়ায় চারটি বুথের দুটি বন্ধ
রেখেছেন।
“লোকজন কম আছে। প্রথমদিন তো মাত্র ৮ জন এসেছিল টিকা
দিতে। এখন আস্তে আস্তে বাড়ছে। আজ বেলা ১২টা পর্যন্ত ৫০জনের বেশি মানুষ টিকা
নিয়েছেন।”
পরীবাগ এলাকা থেকে সেখানে টিকা নিতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি
কর্মকর্তা খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস
মহামারীতে সুরক্ষিত থাকতে এই মুহূর্তে সবাইকেই টিকা নিতে তবে। টিকা নিয়ে আমার কোনো
আশঙ্কা নেই। এ কারণে স্ত্রীকে নিয়ে আমিও টিকা নিচ্ছি।”
দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে করোনাভাইরাসের টিকা
নেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ইনজেকশন নিতে
আমার ভয় আছে। কিন্তু আজকে কোনো ব্যথা পাইনি। ভ্যাকসিন নিলে মহামারী থেকে কিছুটা
আমরা রক্ষা পাব। সেজন্য দেশবাসীকে এই ভ্যাকসিন নেওয়ার অনুরোধ করছি।”