ট্রাম্পের আইনজীবী দল যুক্তি তুলে ধরে বলেছিল, প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর ট্রাম্পকে অভিশংসন বিচারের মুখোমুখি করা যায় না, তাই সেনেটের এই বিচার ‘অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক’।
কিন্তু এ বিচার সংবিধানসম্মত বলে রায় দিয়ে পূর্ণ কার্যক্রম শুরু করার অনুমোদন দিয়েছে সেনেট, জানিয়েছে বিবিসি।
সেনেটে মঙ্গলবারের ভোটাভুটিতে বিচার কার্যক্রম নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৫৬ জন সেনেটর, বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৪৪ জন। এর ফলে প্রথমবারের মতো একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট অভিশংসন বিচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মার্কিন ক্যাপিটলে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার আগে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে ‘বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার’ অভিযোগ আনা হয়েছে। ৬ জানুয়ারির ওই ঘটনার ১৪ দিন পর ২০ জানুয়ারি মেয়াদ শেষে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত অভিশংসিত তিন প্রেসিডেন্টের মধ্যে একজন ট্রাম্প দেশটির ইতিহাসের একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যিনি এক মেয়াদে দুইবার অভিশংসিত হয়েছেন।
অভিশংসন বিচারের মাধ্যমে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করে তিনি যেন আর কখনো কোনো সরকারি পদের জন্য প্রার্থী হতে না পারেন তা নিশ্চিত করতে চায় ডেমোক্র্যাটরা, কিন্তু তাদের সে আশা পূরণ হবে না বলেই মঙ্গলবারের ভোট থেকে ধারণা পাওয়া গেছে।
তাদের এ আশা পূরণে সেনেটের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের পাশাপাশি আরও ১৭ জন রিপাবলিকান সদস্যের সমর্থন দরকার, কিন্তু বিচার কার্যক্রম শুরু করার পক্ষে ভোটে মাত্র ছয় জন রিপাবলিকান সেনেটর ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করতে ১০০ আসনের সেনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে, কিন্তু চেম্বারটি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে ৫০-৫০ এ ভাগ হয়ে আছে।
সেনেট কক্ষে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে ভোটের দিনটি শুরু হয়। অভিশংসন বিচারে কৌঁসুলির দায়িত্বপালনকারী ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা একটি গ্রাফিক ভিডিওর মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করেন। ভিডিওতে ক্যাপিটলে সহিংসতার ছবি ও দাঙ্গার কিছুক্ষণ আগে একদল সমর্থকের উদ্দেশ্যে ট্রাম্পের দেওয়া ভাষণের ক্লিপ তুলে ধরা হয়।
ক্লিপে দেখা যায়, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনী পরাজয় উল্টে দেওয়ার জন্য ট্রাম্প সমর্থকদের ‘নরকের মতো লড়াই করার’ আহ্বান জানাচ্ছেন।
জুরি সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালনকারী সেনেটরা দেখেন, ট্রাম্পের অনুসারিরা ক্যাপিটলে গিয়ে প্রতিবন্ধকগুলো ছুড়ে ফেলে দিচ্ছেন এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের আঘাত করছেন। ভিডিওতে ওই দৃশ্যটিও ছিল যখন পুলিশ প্রতিনিধি পরিষদ কক্ষটি পাহারা দিচ্ছে এবং হামলকারী আশলি বাবিটকে গুলি করছে; এই দাঙ্গায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ যে পাঁচ জন মারা গেছেন বাবিট তাদের একজন।
ট্রাম্পের উত্তেজিত অনুসারিরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়, নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য আইনপ্রণেতারা ছোটাছুটি শুরু করেন আর তাতে কংগ্রেসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয়ের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে বলে দুই মাস ধরে অভিযোগ করার পর এ ঘটনা ঘটে।
“এটা যদি অভিশংসনমূলক অপরাধ না হয় তাহলে এ ধরনের কোনো জিনিসই নেই,” ভিডিও দেখানোর পর উপস্থিত সেনেটরদের উদ্দেশ্যে বলেন ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা জেমি রাসকিন, তিনি মামলার পক্ষ হয়ে লড়া প্রতিনিধি পরিষদের নয় সদস্যের একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
তিনি জানান, বাইডেনের জয়ের স্বীকৃতি প্রত্যক্ষ করানোর জন্য সেদিন ক্যাপিটলে কিছু আত্মীয়কে নিয়ে এসেছিলেন তিনি, কিন্তু হামলার মুখে হাউস ফ্লোরের পাশের একটি কক্ষে তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছিল এবং তারা ভাবছিলেন, “হয়তো তারা মারা যাবেন।”
এসব বর্ণনা দেওয়ার সময় রাসকিন কেঁদে ফেলেন। কিন্তু তার আবেগঘন এ উপস্থাপনের বিপরীতে ট্রাম্পের আইনজীবীরা হোয়াইট হাউস থেকে তার চলে যাওয়ার পর শুরু করা এ বিচার প্রক্রিয়াকে অসাংবিধানিক, ট্রাম্পের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ শেষ করার জন্য দলীয় প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেন।
কিন্তু বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সেনেটর জানান, তারা ট্রাম্পের আইনজীবীদের যুক্তিতে সন্তুষ্ট নন কারণ সেগুলো পরিষ্কার নয়।
অধিকাংশ আইন বিশেষজ্ঞ জানান, এ অভিশংসন বিচার সংবিধান সম্মত হবে। কিন্তু তারপরও অল্প কিছু রিপাবলিকান সেনেটর ট্রাম্পের পক্ষ ত্যাগ করতে সম্মত হন।