বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য উপাত্ত সেই আশাই জাগিয়ে তুলেছে, যেখানে গত চার সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হারে নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে দুই সপ্তাহ ধরে কমছে মৃত্যুর হার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “যদিও এখনও বিশ্বের অনেক দেশেই সংক্রমণ বাড়ছে, তারপরও এই প্রবণতা উৎসাহব্যঞ্জক।”
ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে বিশ্ববাসী যখন টিকা নিয়ে নেমেছে, তখনই আশা জাগানিয়া এই খবর এল।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে সার্স জাতীয় এই ভাইরাস মানবদেহে বাসা বাঁধার পর দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে দেশে দেশে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।
পরে ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাস হিসেবে পরিচিতি পায়, আর এর সংক্রমণের ফলে সৃষ্ট রোগ নাম পায় কোভিড-১৯।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বুধবার পর্যন্ত বিশ্বে ১০ কোটি ৬৫ লাখেরও বেশি মানুষের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, আর মৃত্যু ঘটেছে ২৩ লাখ ৩৩ হাজার জনের।
মহামারী নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মঙ্গলবার প্রকাশিত সাপ্তাহিক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, গত সপ্তাহে বিশ্বে ৩১ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল, যা তার আগের সপ্তাহের চেয়ে ১৭ শতাংশ কম। আর গত বছরের অক্টোবরের পর সংক্রমণের হার এখনই সবচেয়ে কম।
গত সপ্তাহে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮৮ হাজার জনের মৃত্যুর খবর দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মৃত্যুও আগের সপ্তাহের চেয়ে ১০ শতাংশ কম।
বিশ্বে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় এখনও শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই দেশটিতেও নতুন রোগীর হার এক সপ্তাহে ১০ শতাংশ কমেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেখছে।
যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ কমে যাওয়া এই কারণে গুরুত্বপূর্ণ যে বিশ্বে নতুন যত রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তার অর্ধেকই এই দেশটির।
ব্রাজিল, ফ্রান্স, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতেও সংক্রমণ বৃদ্ধির গতি কমছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, এক সপ্তাহে রোগী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি কমেছে আফ্রিকায় ২২ শতাংশ; আর কম কমেছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ২ শতাংশ।
গত মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নতুন রোগী বৃদ্ধির হার এক-তৃতীয়াংশ কমেছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গণ টিকাদান কর্মসূচিতে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এক স্বাস্থ্যকর্মী কোভিড-১৯ টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছরের শুরুতেই টিকা প্রয়োগ শুরু হয় বিভিন্ন দেশে, যা আবার বিতর্কের মধ্যেও পড়ে।
বাংলাদেশে যে টিকাটি ব্যবহার হচ্ছে, সেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাটি বয়স্কদের ক্ষেত্রে কার্যকর নয় বলে দাবি করেছিল জার্মানি। সেদেশে টিকাটি ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের দেওয়া বন্ধও করে দেওয়া হয়।
আবার নানা রূপে নিজেকে বদলে ফেলা করোনাভাইরাসের যে ধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয়, সেটা প্রতিরোধেও অক্সফোর্ডের টিকা তেমন কার্যকর নয় বলে দাবি ওঠে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন দুটি ক্ষেত্রেই অক্সফোর্ডের টিকা প্রয়োগের অনুমোদন দিয়েছে বলে বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়।
সংস্থাটির স্ট্র্যাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্ট অন ইমিউনাইজেশন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেছে, ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদেরও অক্সফোর্ডের টিকা ব্যবহার করা যাবে।
এই বিশেষজ্ঞ গ্রুপের প্রধান ডা. আলেসান্দ্রো ক্রাভিয়েতো আরও বলেন, যেখানে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ছড়িয়েছে, সেখানেও এই টিকা প্রয়োগ না করতে বলার কোনো কারণ নেই।