ক্যাটাগরি

প্রতিবন্ধী কার্যক্রমে নানা অনিয়মের তথ্য টিআইবির গবেষণায়

‘উন্নয়নে
অন্তর্ভুক্তি ও প্রতিবন্ধিতা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে
প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন বাস্তবায়নে সমাজসেবা কার্যালয়ের কার্যক্রমেও
গাফিলতির চিত্র ফুটে উঠেছে।

বৃহস্পতিবার
সকালে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই গবেষণা প্রতিবেদনে উপস্থাপন করে টিআইবি।

২০১৯
সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়।


সময়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও তাদের পরিচর্যাকারী বা অভিভাবক, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও শাখা
কার্যালয়, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট,
নিউরো ডেভেলপমেন্ট (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, আদালত, প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময়ে ব্যবহৃত আশ্রয় কেন্দ্র,
রাস্তাঘাট, গণপরিবহন, এনজিও কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে।

গবেষণায়
সংশ্লিষ্ট আইন, বিধিমালা, নির্দেশিকা, প্রাসঙ্গিক নথি, গবেষণা প্রতিবেদন, টিআইবি পরিচালিত
জাতীয় খানা জরিপ-২০১৭ এর তথ্যভাণ্ডার, বার্ষিক প্রতিবেদন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ
ও প্রবন্ধ থেকে তথ্য সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় বিপাকে প্রতিবন্ধীরা

নভেল
করোনাভাইরাসজনিত অসুস্থতা কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য অধিকাংশ
পরীক্ষা কেন্দ্রে পৃথক সারি ও চিকিৎসার জন্য পৃথক হাসপাতাল নির্দিষ্ট করা হয়নি বলে
উল্লেখ করা হয়েছে টিআইবির প্রতিবেদনে।

এতে
অধিকাংশ কর্মহীন দরিদ্র পরিবারের পক্ষে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বেসরকারিভাবে প্রয়োজনীয়
চিকিৎসা ও থেরাপি দেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রতিবেদনে
বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এপ্রিল-মে মাস পর্যন্ত প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য
কেন্দ্রে থেরাপি ও কাউন্সেলিং সেবা বন্ধ ছিল। এছাড়াও এসব সেবার পরিসর সীমিত হওয়ায় সাধারণ
মানুষের চেয়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সার্বিক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারিভাবে
দুই হাজার ৫০০ টাকার অর্থ সহায়তার কর্মসূচিতে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধিতাসহ
ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি এবং এক্ষেত্রে সমাজসেবা মন্ত্রণালয় কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা, প্রতিপালন, উন্নয়ন ও পুনর্বাসনমূলক কার্যক্রমের আওতায়
সুবর্ণ নাগরিক কার্ড (পরিচয়পত্র) দেওয়া হয়, তাও প্রান্তিকের অধিকাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির
না থাকায় তারা আরও বেশি বিপাকে পড়েছেন বলে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

সুর্বণকার্ড সংক্রান্ত দুর্নীতি

২০১৯-২০
অর্থবছরে যে নতুন দুই লাখ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ভাতার আওতায় এসেছে, ক্ষেত্রবিশেষে তাদের
ভাতার অর্থের অংশবিশেষ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে এসেছে গবেষণায়।

টিআইবির
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকৃত প্রতিবন্ধী না হলেও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের একাংশ
তাদের আত্মীয় ও পরিচিতজনদের সুবর্ণকার্ড দেওয়ার জন্য সমাজসেবা কার্যালয়ে তদবির করেছেন।

ইউনিয়ন
পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিরা সুবর্ণকার্ড দিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায় করছেন। একইসঙ্গে
কার্ড থাকা সত্ত্বেও প্রাপ্য সুযোগ সুবিধা না পাওয়া ও প্রাপ্য সুবিধা পেতে মধ্যস্থতা
করার অভিযোগ এসেছে।

কোনো
কোনো সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও তার সহকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী
শনাক্তকরণ কার্যক্রমে নিয়মবহির্ভূত অর্থ আদায়ের অভিযোগও পাওয়ার কথা জানিয়েছে টিআইবি।

অধিকাংশ
জেলা সদর হাসপাতালে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণ কার্যক্রমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সময়ক্ষেপনের
পাশাপাশি হয়রানির শিকারও হয়েছেন।

শহর
বা উপজেলায় সমাজসেবা কার্যালয়ে তথ্যভাণ্ডারে নাম অন্তর্ভুক্তিকরণে ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিবন্ধী
ব্যক্তি বা তাদের নিকটাত্মীয়ের কাছ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

প্রতিবন্ধী ভাতা সংক্রান্ত

টিআইবির
প্রতিবেদন বলা হয়েছে, মাঠ পর্যায়ে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর
করে জনপ্রতিনিধিদের সদিচ্ছার উপর। দেশের নানা স্থানে ভাতা প্রাপ্তির কার্ড পেতে রাজনৈতিক
প্রভাব বিস্তারের ঘটনাও ঘটেছে।

অভিযুক্ত প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনও

জাতীয়
প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বিভিন্ন থেরাপি মেশিন এবং প্রতিবন্ধী শিশু ও ব্যক্তিদের
জন্য সহায়ক উপকরণ যা কিনছে সেগুলোকে ‘নিম্নমানের’ মনে করছেন গবেষকরা

তারা
বলছেন, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ জাতীয় প্রতিবন্ধী

উন্নয়ন
ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একাংশের পরিচিত ও আত্মীয়দের বাসা ভাড়া নিয়ে
কার্যক্রম পরিচালনা করছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসব ভাড়া করা কেন্দ্রের অবকাঠামো প্রতিবন্ধীবান্ধব
নয়।

জাতীয়
প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন থেকে যেসব এনজিও অর্থ সাহায্য নেয়, তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ সব কার্যক্রম
বাস্তবায়ন করেনা।

নানা সুপারিশ

প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় দুর্নীতি নিরসনে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে নানা সুপারিশ উপস্থাপন
করেন টিআইবির সদস্যরা। এসবের মধ্যে রয়েছে-

#প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ এর যথাযথ বাস্তবায়ন; এর আওতায় পরিচয়পত্রবিহীন প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির জন্য নির্ধারিত সুবিধা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।

#প্রতিবন্ধী
ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা নীতিমালার আওতায় কমিটিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

#জাতীয়
বাজেটে প্রতিবন্ধিতা সংশ্লিষ্ট খাতের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদাভাবে বরাদ্দ
রাখতে হবে এবং চাহিদার নিরিখে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত বাজেট
বাড়াতে হবে।

#জেলা
ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য আলাদা
ইউনিট করতে হবে।

#প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের সেবা প্রদানকারী সব কার্যালয়ে কার্যকর তদারকি এবং অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে
জবাবদিহিমূলক নিয়মিত পরীক্ষা নিশ্চিৎ করতে হবে। এছাড়া সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অন্য
মন্ত্রণালয়ের প্রতিবন্ধিতা সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম তদারকি করতে হবে।

টিআইবির
নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “আমরা প্রতিবন্ধিতার উন্নয়ন সূচকে যে ধারণার
কথা বলি, তা কিন্তু বাস্তবে আমাদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে না।
তারা উন্নয়নের অংশীদার হতে পারছেন না। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও তাদের অংশগ্রহণ অনুকম্পার
উপর নির্ভর করে। অথচ তারাও আমাদের মতই সমান অধিকার পাবেন।

“এ
অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে গেলে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম নিরীক্ষা করতে হবে; পাশাপাশি
নিয়ন্ত্রণ ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিৎ করতে হবে।”