ক্যাটাগরি

 অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বিক্রি করে দেয়ার কথা ভাবছে দক্ষিণ আফ্রিকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনাভাইরাসের একটি ধরনের বিরুদ্ধে অক্সেফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা সামান্যই কার্যকর, গবেষণায় এমন হতাশাজনক ফল আসার পর কিছুদিন আগেই টিকাদান কর্মসূচি স্থগিত করেছিল সরকার।

এখন দেশটি এই টিকাগুলো বিনিময় কিংবা বিক্রি করে দিয়ে এর পরিবর্তে বিকল্প হিসাবে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আগামী সপ্তাহে কোনও এক সময় ‘প্রায়োগিক গবেষণা’ হিসাবে স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে এই টিকা দেওয়া শুরু হবে।

তাছাড়া, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বিক্রি কিংবা কারও সঙ্গে বিনিময় করার প্রক্রিয়া শুরুর আগে বিজ্ঞানীদের পরামর্শের জন্য অপেক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন ‘‘এরই মধ্যে কয়েকটি দেশ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টিকাগুলো তাদের কাছে বিক্রি করতে বলেছে।”

“অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবহার করা হবে কিনা তা নিয়ে আমাদের বিজ্ঞানীরা আরও বিস্তারিত আলোচনা করবেন। তাদের পরামর্শের উপরই সব কিছু নির্ভর করছে। টিকার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সেগুলো বিনিময় করা হবে।”

সংবাদ সম্মেলনের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৫ লাখের বেশি মানুষের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে প্রায় ৪৭ হাজার মানুষ। আফ্রিকা মহাদেশের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় যা অনেক বেশি।

গবেষণায় কী পাওয়া গেছে?

দক্ষিণ আফ্রিকার উইটওয়াটারসর‌্যান্ড ইউনিভার্সিটি এবং যুক্তরাজ্যের  অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা মিলে এই গবেষণা চালান। যে গবেষণা প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ পায়নি।

গবেষকরা প্রায় দুই হাজার সুস্বাস্থ্যের অধিকারী যুবকের উপর গবেষণা চালিয়েছেন। যাদের গড় বয়স ৩১ বছর। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই বয়সের মানুষদের কম ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করা হয়।

গবেষকরা দেখেন, এই বয়সের মানুষ যারা করোনাভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকা ধরনে সংক্রমিত হয়েছেন এবং যাদের দেহে মৃদু ও মাঝারি উপসর্গ দেখা গেছে তাদের বেলায় অক্সফোর্ড-অস্ট্রাজেনেকার টিকা ‘খুব সমান্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা’ তৈরি করতে পারে।

যার অর্থ টিকা দেওয়ার পরও ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে।

কিন্তু উচ্চ ঝুঁকির বয়সের ব্যক্তিদের বেলায় এই টিকা কতটা কার্যকর তা এখনও জানা যায়নি। কারণ, গবেষকরা যাদের উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন তাদের কারও বয়সই ৫০ বছরের উপরে ছিল না বা কারও দীর্ঘমেয়াদে অসুখ ছিল না।

দক্ষিণ আফ্রিকা এখন দেশটির এক লাখ বয়স্ক নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। তারা দেখতে চায়, বয়স্কদের বেলায় এই টিকা ভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকা ধরনের উপর কতটা কার্যকর হয়।

ভাইরাসের দক্ষিণ আফ্রিকা ধরনটি কেমন?

করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্য ধরনটির মত দক্ষিণ আফ্রিকা ধরনটিও মূল ভাইরাসের চেয়ে অতি-সংক্রামক বা সহজে রোগের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম।

কিন্তু সেটি অধিক প্রাণঘাতী কিনা তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ মানুষ ভাইরাসের নতুন এই ধরনে সংক্রমিত হয়েছেন।

করোনাভাইরাসের মূল ধরনটি বয়স্কদের বেলায় বা যারা দীর্ঘমেয়াদী রোগে ভুগছেন তাদের বেলায় অধিক প্রাণঘাতী।

অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কেনিয়া, নরওয়ে এবং যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের অন্তত ২০টি দেশে দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনটি শনাক্ত হয়েছে।

জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা কতদূর?

বেলজিয়ামের ওষুধ কোম্পানি জানসন এই টিকাটি উৎপাদন করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা টিকার দাম এবং পরিমাণ নিয়ে এখনও কোম্পানিটির সঙ্গে আলোচনা করছে।

যদিও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দক্ষিণ আফ্রিকা এখনও দেয়নি।

তবে তারা জনসন অ্যান্ড জনসনের ৯০ লাখ ডোজ টিকার অর্ডার দিয়ে দিয়েছে। অর্ডারের প্রথম চালান আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছানোর কথা বলে জানায় বিবিসি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিকার কার্যকারিতা দেখতে প্রাথমিকভাবে পাঁচ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে ওই টিকা দেওয়ার কথা। আগামী সপ্তাহ থেকে টিকাদান শুরু হতে পারে। এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।