তিনি
বলেছেন, দেশ ও সমাজকে আবার
পুরোদমে কাজ করার মত সচল করতে
টিকা নেওয়া জরুরি।
সারা
দেশে টিকাদান কার্যক্রমের পঞ্চম দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে টিকা নেন খালিদী।
পরে
টিকা নিয়ে গুজব প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এটা নিয়ে একটা প্রচারণা চলেছে। বিশেষ করে যেহেতু বাংলাদেশে ভারতকে নিয়ে রাজনীতি আছে, সেই কারণে এইটা বলা হয়েছে।
“টিকাটা
ভারত থেকে এসেছে, কিন্তু টিকাটা উদ্ভাবন করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা। যে কম্পানিকে অনুমতি
দেওয়া হয়েছে এটি বানানোর জন্য বা এটির স্বত্ত্ব
দেওয়া হয়েছে সেটি অ্যাস্ট্রাজেনেকা।… ভারত থেকে আসা টিকা মানে এই নয় যে
ভারতের তৈরি টিকা।”
তৌফিক
ইমরোজ খালিদী বলেন, “টিকা নিয়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছেন তারা অকারণে ছড়াচ্ছেন। শুধু বাংলাদেশের বিষয় না। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশে এই ধরনের গুজব
ছড়ানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ছড়ানো হয়েছে। অন্যান্য দেশে ছড়ানো হয়েছে।
“ডানপন্থিরা
এই কথা বলার চেষ্টা করেছেন যে টিকা দেওয়ার
প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ তো মাস্কের বিরোধী।
ডনাল্ড ট্রাম্প, তার সমর্থকরা কী করতেন? যুক্তরাষ্ট্রে
অনেকে অ্যাক্টিভিজম করেছে। মানে রাস্তায় নেমে পারলে মিছিল করেছে, পারলে সহিংস আচরণ করেছে যে তারা মাস্ক
পরবে না। তাদের অধিকার (নাকি) হরণ করা হয়েছে।”
তিনি
বলেন, “যখন বিল গেটস লিখেছেন টিকা ছাড়া, ভ্যাকসিনেশন ছাড়া এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে
লড়াই করা যাবে না, আমরা পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারব না… ইকোনমিস্টে তিনি লিখেছিলেন, ইকোনমিস্ট বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন। ইকোনমিস্ট যখন ওই লেখা সোশ্যাল
মিডিয়ায় শেয়ার করল, হাজার হাজার লোক যাচ্ছে-তাই গালিগালাজ করেছে তাকে, যে ‘ব্যবসা করার জন্য’ বলছে।”
খালিদী
বলেন, “ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে সেটা অন্য বিষয়। কিন্তু এটাকে পাবলিক গুড হিসেবে দেওয়া হচ্ছে বলা হয়েছে। অনেক কম্পানি বলেছে, তারা (টিকা নিয়ে) ব্যবসা করতে চায় না। তারা এটা দিতে চায়, কারণ যত বেশি মানুষকে
টিকা দেওয়া হবে এবং যত বেশি দেশে
‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরি হবে…।
যুক্তরাষ্ট্রের
শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচিকে উদ্ধৃত করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক বলেন, “শতকরা অন্তত ৮০ ভাগ (মানুষকে)
যদি টিকা দেওয়া যায়, তাহলে হার্ড ইমিউনিটি অ্যাচিভ করা সম্ভব। বাংলাদেশেও আমাদের গবেষকরা… যেটা ডা. মুশতাক (ডা. মুশতাক হোসেন) আমাকে বলেছিলেন যে আমাদেরও একই
রকম একটা সংখ্যায় লোকজনকে টিকা দিতে হবে জাতীয় পর্যায়ে হার্ড ইমিউনিটির জন্য। যেন আমরা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফিরে যেতে পারি। স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারি।
“একটা
হচ্ছে ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের বিষয়, আরেকটা হচ্ছে সমষ্টিগতভাবে পুরো দেশকে, সমাজকে সক্রিয়া হতে হবে, সচল হতে হবে, কাজে ফিরে যেতে হবে। আমাদের সবাইকে কাজে ফিরতে হবে।”
বৃহস্পতিবার
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান তৌফিক ইমরোজ খালিদী। নির্ধারিত বুথে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর সেখানে আধা
ঘণ্টা পর্যবেক্ষণেও কাটান।
পরে
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, টিকা নিতে কয়েক সেকেন্ড মাত্র লেগেছে। কথা বলতে বলতে টিকা দেওয়ায় তিনি ‘টেরই পাননি’।
“সরকারি
কোনো কাজ এত ভালো ব্যবস্থাপনায়,
সুন্দরভাবে হতে পারে আমরা খুব একটা দেখি না। আমাদের অভিজ্ঞতা সেটা বলে না, দিনে দিনে জিনিসগুলো খারাপ হচ্ছে। তবে এটা খুব চমৎকার হয়েছে। রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থাটা ভালো ছিল।
“এখানে
ঢোকার পর থেকে টিকা
দেওয়ার ডেস্কে যাওয়া পর্যন্ত বেশি সময় লাগেনি। টিকা যারা দিয়েছেন, তারা খুব চমৎকার আচরণ করেছেন। ভলান্টিয়াররা আছেন, তারা বলে দিচ্ছেন এটা করবেন-এটা করবেন না।”
নিবন্ধন ছাড়া
টিকা
নিতে
এসে
বিপাকে
বাংলাদেশে
দেওয়া হচ্ছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা। সবাইকে এ টিকার দুটি
ডোজ নিতে হবে। টিকা নিতে আগ্রহী সবাইকে সরকারের সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মের ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে
(www.surokkha.gov.bd) গিয়ে
নিবন্ধন করে নিতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার
নিবন্ধন ছাড়াই বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে টিকা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে।
টিকাদান
শুরুর পর গত চারদিন
কেন্দ্রে এসে নিবন্ধন করেও টিকা নেওয়ার সুযোগ ছিল। এ হাসপাতালে প্রতিদিন
১২শ জন মানুষকে টিকা
দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। তবে বুধবার ১ হাজার ৮৩৭
জন এবং মঙ্গলবার ১ হাজার ৪৯৪
জন টিকা নেন।
বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ টিকার কোটা শেষ হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে কাউকে নিবন্ধন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন
পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন।
কাকরাইল
থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে টিকা নিতে আসা ব্যবসায়ী দোজাহান তালুকদার জানান, টিকা নেওয়ার জন্য তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধন
করেছেন। তবে টিকা নেওয়ার সময় এবং তারিখ জানিয়ে তার মোবাইলে কোনো এসএমএস আসেনি।
“নিবন্ধন
করেছিলাম, কিন্তু টিকা কবে পাব জানি না। গতকাল শুনলাম ন্যাশনাল আইডি কার্ড আর নিবন্ধনের কপি
দেখালেই টিকা দেওয়া যায়। এ কারণে এসেছি।
কিন্তু এখানে আসার পর বলছে হবে
না।”
ইস্কাটন
গার্ডেন এলাকার আরেক বাসিন্দাও এসেছিলেন টিকা নিতে। তিনিও জানালেন, নিবন্ধন ছাড়াই টিকা নেওয়া যাচ্ছে শুনে এসেছিলেন। কিন্তু এসে দেখেন এখন আর তা হচ্ছে
না।
পরিচালক
জুলফিকার আহমেদ আমিন সাংবাদিকদের বলেন, টিকা দেওয়ার জন্য যে সফটওয়্যার তৈরি
করা হয়েছে, এ হাসপাতালের ৮টি
বুথের জন্য প্রতিদিন ১২০০ জনের কোটা নির্ধারণ করা আছে। সব মিলিয়ে এই
কেন্দ্রের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করা আছে ২০ হাজার ডোজ।
“অনলাইনে
ইতোমধ্যে ২০ হাজার রেজিস্ট্রেশন
হয়ে যাওয়ায় কম্পিউটার আর নিচ্ছে না।
এ কারণে কেউ আর এন্ট্রি করতে
পারছেন না। স্পট রেজিস্ট্রেশনে কিছু ব্যক্তিকে আমরা তার বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত এন্ট্রি করতাম। কাগজ বের হরে টিকা দিয়ে দিতাম। এখন নতুন করে এন্ট্রি নিচ্ছে না। তবে ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধন করেছেন, তারা টিকা পাবেন।”
এ
বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরকে অবহিত
করা হয়েছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, “তারা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায় তা দেখছেন। আমাদের
যদি কোটা বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আবার আগের মতো শুরু করতে পারব।”
গত
৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ১০১৫টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকা দেওয়া
শুরু হয়। এরমধ্যে ঢাকায় রয়েছে ৫০টি কেন্দ্র।