ক্যাটাগরি

মিয়ানমারে অভ্যুত্থান: বিভেদ ভুলে একজোট হচ্ছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী

মিয়ানমারের বিশাল অংশ জুড়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রধান সশস্ত্র সংগঠনগুলোও অসহযোগ আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের ওপর সামরিক নেতাদের দমনপীড়ন তারা সহ্য করবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে।

মিয়ানমার-ভারত সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলের আদিবাসী নাগা জাতিগোষ্ঠীর এক যুবনেতা বলেছেন, “এখন যা ঘটছে তা দলীয় রাজনীতি নিয়ে নয়।” ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল নাগা পার্টি একটি বিবৃতি দিয়ে অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে।

নাগা যুব নেতা ফোনে রয়টার্সকে বলেছেন, “এ লড়াই সিস্টেমের বিরুদ্ধে। আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে আপোস করতে পারি না। এই বাহিনী আমাদের ইতিহাসে এক কালো চিহ্ন এঁকে দেবে।”

গত ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারে ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী।  আটক করে নেত্রী সু চিকে, জারি করে একবছরের জরুরি অবস্থা। এরপর থেকেই জান্তার বিরুদ্ধে জনরোষ বড় ধরনের বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সংকল্পবদ্ধ হয়ে টানা ষষ্ঠদিনের মতো বৃহস্পতিবার মিয়ানমারজুড়ে মানুষ বিক্ষোভ করেছে। রাজধানী নেপিডোর রাস্তায় শত শত আন্দোলন কর্মী লাইন ধরে দাঁড়িয়ে জান্তা-বিরোধী স্লোগান দিয়েছে, সু চির সমর্থনে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেছে।

অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন হলেও গণবিক্ষোভ দমনে বলপ্রয়োগ শুরু করেছে জান্তা। বিক্ষোভে পুলিশ প্রথমে জলকামান এবং পরে রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। তবে তাতেও দমছে না বিক্ষোভ।

মঙ্গলবার এক নারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরের দু’দিনও বিক্ষোভ হয়েছে। দেশটির জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে প্রায়ই বিভক্তি, বৈরিতা দেখা গেলেও এবারের আন্দোলন-বিক্ষোভে ভিন্ন ভিন্ন জাতি পরিচয়ের বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বিরল একতাই দেখা যাচ্ছে।

মিয়ানমারের নতুন সামরিক সরকার এরই মধ্যে জাতিগোষ্ঠীগুলোর নেতাদেরকে তুষ্ট করার চেষ্টা নিয়েছে। জাতিগত বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের কাউকে কাউকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছে জান্তা। কিন্তু তেমন দু’একজন রাজনীতিবিদ দেশের গণতান্ত্রিক পথচলার বিরুদ্ধে কথা বললেও তাদের দল স্বৈরতন্ত্রের বিরদ্ধেই অবস্থান নিয়েছে।

জান্তা সরকারের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক পরিষদের সদস্যপদ নিয়েছেন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ) এর ঊর্ধ্বতন এক সাবেক নেতা পাদো মান নায়েন মায়ুং। রয়টার্সকে ফোনে তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক দাবি পূরণ হয়নি- আমরা এ শিক্ষাই পেয়েছি।”

তবে মায়ুংয়ের এই কথার বিপরীত অবস্থান নিয়েছে কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার দলটির নেতা স মুতু সায়ফো সব জাতিগোষ্ঠীকে স্বৈরাচারের মূলোৎপাটন করতে একযোগে কাজ করে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন।

আবার কারেন সশস্ত্র সংগঠনের আরেকটি দলছুট গোষ্ঠী ‘ডেমোক্রেটিক কারেন বুড্ডিস্ট আর্মি’ (ডিকেবিএ)-এর যোদ্ধারা গত রোবারের বিক্ষোভে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) এবং রেস্টোরেশন কাউন্সিল অব শান স্টেট (আরসিএসএস)-সহ অন্যান্য প্রভাবশালী গোষ্ঠীগুলোও অভ্যুত্থান বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে।

টিএনএলএ নেতারা প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে ওঠা তিন আঙুল স্যালুটের ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেছেন; ‘সামরিক স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লেখা হয়েছে পোস্টে। অন্যদিকে, ২০১৮ সাল থেকে পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে সরকারি সেনাদের সঙ্গে প্রাণঘাতী সংঘাতে লিপ্ত আরাকান আর্মির (এএ) এক মুখপাত্র বলেছেন, তারা মিয়ানমারের পরিস্থিতি গভীরভাবে নজরে রেখেছেন।

উত্তরের কাচিন ইনডিপেনডেন্স আর্মি (কেআইএ) সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও দলটির এক উর্ধ্বতন নেতা ফেইসবুক পোস্টে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিক্ষোভকারীদেরকে যেন গুলি করা না হয়।

কারেন গোষ্ঠীর এক নেতা এবং সালুইন ইন্সটিটিউট থিংক-ট্যাংকের কর্ণধারের কথায়, “অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করাটা অনেকেই তাদের দায়িত্ব হিসাবে দেখছে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর হাজার হাজার যুবক আজ দেশব্যাপী বিক্ষোভে যোগ দিয়েছে। তাদের সবার লক্ষ্য একটাই, সামরিক স্বৈরাচারকে প্রত্যাখ্যান করে মিয়ানমারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।”