বিস্ফোরণ থেকে আগুন লেগে কারখানার ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্ল্যান্টের’ অধিকাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কারখানার সহকারী মহাব্যবস্থাপক আব্দুর রউফ।
উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেপিরবাড়ি গ্রামে ‘এএসএম কেমিক্যাল’ নামে এই কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
অগ্নিদগ্ধ লাশটি আলমগীর হোসেন নামে একজন নিখোঁজ শ্রমিকের বলে ধারণা করলেও তার পরিচয় বলতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
কারখানার কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, “কারখানাটিতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড উৎপাদন করা হত। বিকালে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হলে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্ল্যান্টে আগুন লাগে। আগুনে প্ল্যান্টের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে।”
তবে তিনি বিস্ফোরণের কারণ বলতে পারেননি।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টায় আগুন লাগার খবর পেয়ে প্রথমে শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট কাজ শুরু করে। পরে জয়দেবপুর, টঙ্গী ও ময়মনসিংহের ভালুকাসহ বিভিন্ন স্টেশনের মোট আটটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টা ৫মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাত পৌনে ১১টার দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর একজনের লাশ উদ্ধার করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, লাশটি আলমগীর হোসেন নামে একজন নিখোঁজ শ্রমিরের বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে আরও কেউ নিখোঁজ আছে কিনা তা তিনি বলতে পারেননি। আগুনের কারণও তিনি বলতে পারেননি।
শ্রীপুর থানার ওসি খোন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, আগুন নেভাতে গিয়ে টুকরো কাচের আঘাতে কারখানার ২০-২২ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ইসহাক, সুজা উদ্দিন, সিলভেস্টা, আশরাফুল, মনির ও আমিনুল নামে ছয়জনকে উন্নত চিকিৎসার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
তাছাড়া কারখানার সাপ্লাইম্যান মো. টুটুল, সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, মেশিন অপারেটর আবির হোসেন, রোকুনুজ্জামান ও ওয়াসিম আকরামসহ অন্যরা অল্প আহত হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানান ওসি।
অপারেটর আবির বলেন, বিকাল ৪টার দিকে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্লান্টে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তেই আগুন লেগে ছড়িয়ে পড়ে প্লান্টজুড়ে।
গাজীপুরে রাসায়নিক কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস
কারখানার প্রধান ফটকের সামনের মুদিদোকানি মোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে আশপাশের জমি কেঁটে ওঠে।
“আতঙ্কে আশপাশের লোকজন ছুটোছুটি করে। মুহূর্তেই কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পরে কারখানার আশপাশ। এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সবার মধ্যে। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আশপাশের কারখানা, বসতবাড়ি, দোকানপাটে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে লোকজন ছুটাছুটি করে। হুড়োহুড়ি করে কারখানার বাইরেও অনেকে আহত হয়েছে।”
ঘটনা তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসন থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জেলার ডিসি এসএম তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবুল কালামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে সাত কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তির দাফন বাবদ পরিবারকে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
তাছাড়া আহত শ্রমিকদের ‘যাবতীয় চিকিৎসা কারখানার পক্ষ থেকে বহন করা হবে’ বলে জানিয়েছেন কারখানা কর্মকর্তা আব্দুর রউফ।